মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৩

জঙ্গি অর্থায়ন নজরদারিতে আলাদা উইং বাংলাদেশ ব্যাংকে

সাইদ আরমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারিতে আরো কঠোর হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইসলামি ব্যাংকিং করছে এমন ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে মুদ্রাপাচার তথা মানি লন্ডারিং, জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের অভিযোগ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ অবস্থান নিয়েছে। এজন্য আলাদা একটি উইং খোলা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।


সূত্র বলছে, ইসলামি ব্যাংকগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি মুনাফা করছে বাংলাদেশে। তাছাড়া ইসলামি ব্যাংকিং করার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বেশ কিছু বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়। সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসব কারণে ইসলামি ব্যাংকের সঙ্গে পেরেও উঠছে না। এসব বিবেচনা করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, ইসলামি ব্যাংকগুলোর ওপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে।

সূত্র জানিয়েছে, এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম তদারকিতে একটি আলাদা ইসলামি ব্যাংকিং শাখা ও উইং খোলার চিন্তা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি শুধু ইসলামি ব্যাংকিং তদারকি ও নজরদারি নিয়ে কাজ করবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সূর চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ইসলামি ব্যাংকিং তদারকি জোরদার করার একটি প্রস্তাব কর্তৃপক্ষের সক্রিয় বিবেচনাধীন।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নানা কারণে বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের চাহিদা বাড়ছে। তাই ইসলামি ব্যাংকিং সঠিকভাবে নির্দেশনা দিতে এমন একটি উইং করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ৭টি ইসলামি ব্যাংক রয়েছে। এগুলো হচ্ছে শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও আইসিবি ইসলামি ব্যাংক। এর বাইরে নয়টি ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং শাখা এবং আটটি ব্যাংকের ইসলামি ব্যাংকিং বিষয়ক পৃথক কার্যক্রম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। সদ্য ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করা ইউনিয়ন ব্যাংকও ইসলামি ব্যাংকিং করবে বলে জানা গেছে।

সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের অধিকাংশের ইসলামি ব্যাংকিং সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই। ফলে ইসলামি ব্যাংকগুলো সব বিধান সঠিকভাবে পরিপালন করে কিনা তা নিশ্চিত করা সব ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। এজন্য একটি বিশেষ বিভাগ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এজন্য বাহরাইনে এবং মালয়েশিয়ায় প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের।

সূত্র বলছে, ইসলামি ব্যাংকিং শাখা খোলার একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তিনি একাধিকবার ‘ইসলামি ব্যাংকিং’ বিষয়ক আলোচনা সভায় এই ব্যাংকিং নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, ব্যাংক খাতের মোট আমানতের প্রায় ১৮ শতাংশ এবং মোট ঋণ বা বিনিয়োগের ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ এখন ইসলামি ব্যাংকিং খাতের অন্তর্ভুক্ত। মোট ব্যাংকিং সম্পদের ক্ষেত্রে ইসলামি ব্যাংকিং এর হার ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ। বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিংব্যবস্থা পরিচালনা ও প্রসারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৯ সালে ইসলামি ব্যাংকিংবিষয়ক দিকনির্দেশনা জারি করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন