
বিএনপি-জামায়াতের পাতা ফাঁদে হেফাজতে ইসলাম পা দিয়েছে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সংগঠনটিকে ঢাকামুখী লংমার্চের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার পিআইডির সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “হেফাজতে ইসলামের কাছ থেকে বাংলাদেশের মানুষকে ইসলাম শিখতে হবে না। ইসলামকে হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ।”
‘মিথ্যাচারই জামায়াতের হাতিয়ার’ উল্লেখ করে ইনু হেফাজতে ইসলামীর নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “বিএনপি-জামায়াতের পাতা ফাঁদে পা দেবেন না।”
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের ‘নাস্তিক’ আখ্যায়িত করে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবিতে লংমার্চ করে আগামী ৬ এপ্রিল রাজধানীতে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলামের এই কর্মসূচির প্রতি ‘নৈতিক’ সমর্থন দিয়েছে বিএনপি।
Khaleda deserves no more chance: Inu
Khaleda deserves no more chance: Inu
তথ্যমন্ত্রী বলেন, “দাবি না মানলে সরকারকে যারা নাস্তিক বলে ফতোয়া দেয় তারা ইসলাম সম্পর্কে কোনো জ্ঞান রাখে না। ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়ার অধিকার কারো নেই।”
“ধর্ম নিয়ে যাই বলুন না কেন, যতই রাজনীতি করার চেষ্টা করুন না কেন বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই”, যোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
ইনু অভিযোগ করেন, বিএনপি সেনাবাহিনীকে উস্কে দিচ্ছে। জামায়াত-শিবির নাশকতা চালানোর চেষ্টা করছে। তারা চলমান নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চাইছে।
“আমি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম হেফাজতে ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে ইমানী দায়িত্ব পালনে মাঠে নেমেছে। এদের ছায়ার তলে চিহ্নিত শিবির ক্যাডার, সাকা (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) রক্ষা কমিটির নেতা, আফগান যুদ্ধ ফেরত ক্যাডারকেও দেখেছি।”
ইসলামকে হেফাজত করতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের মধ্যে ন্যায় বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি থাকত উল্লেখ করে ইনু বলেন, “তারা চাঁদে সাঈদীকে দেখা যাওয়া নিয়ে কোনো কথা বলেনি, কাবা শরীফের গিলাপ নিয়ে মিথ্যাচার করা হলেও কোনো মন্তব্য করেনি। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ বন্ধের কথা বললেও মওদুদীবাদীদের মঞ্চ বন্ধের দাবি করে নি।”
“এগুলো কি আপনার দায়িত্ব ছিল না”, হেফাজতে ইসলামীর আমির শাহ আহমদ শফির কাছে জানতে চান ইনু।
দেশজুড়ে যে নাশকতা চলছে হেফাজতে ইসলাম লংমার্চের কর্মসূচি দিয়ে পরোক্ষভাবে তাকে সমর্থন করছে বলেও দাবি করেন তথ্যমন্ত্রী।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ উল্লেখ করে ইনু বলেন, সংবিধান প্রত্যেক ধর্মেকে হেফাজত করে। এখানে আলেম-ওলামাদের উত্তেজিত-উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
বিএনপি-জামায়াত সরকার নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে, তারা রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে চায়। লংমার্চ আহ্বান করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
প্রধানমন্ত্রীর ইমান নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন জানিয়ে ইনু বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর ইমান নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার কোনো হুজুরের নেই। ইমান মাপার দায়িত্ব কোনো ইমামকে দেয়া হয়নি।”
হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিতে নাশকতা হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান ইনু। তবে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।
সরকারের পক্ষ থেকে লংমার্চের কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়া হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তর বারবার এড়িয়ে যান তথ্যমন্ত্রী।
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “শান্তি বিনষ্ট হলে তো সরকার পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। সরকার তো এক সেকেন্ডে আগেও পদক্ষেপ নিতে পারে।”
আলোচনার টেবিলেই এই সমস্যা নিস্পত্তি হতে পারত বলেও মনে করেন তথ্যমন্ত্রী।
ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করার অভিযোগে কয়েকজন ব্লগারকে গ্রেপ্তার করা হলেও আমার দেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন,“আমার দেশ দণ্ডণীয় অপরাধ করেছে। তাবে তাদের গ্রেপ্তার করতে হলে আইনগতভাবেই করতে হবে।
“আমার দেশের কাউকে রেহাই দেব না। আমরা সবাইকে গ্রেপ্তার করব।”
প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন