সোমবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৩

সহিংসতার আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরেঃ নেপথ্যে আওয়ামী লীগ জামায়াত সখ্য

হাতীবান্ধায় আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী ও জামায়াত নেতার মেয়ে শিবির নেত্রী মৌসুমি ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। ছবি : কালের কণ্ঠ
কালের কণ্ঠ
মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে দেশের অনেক স্থানেই জামায়াত নেতাদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের রয়েছে গলায় গলায় ভাব। দুই মেরুর দুই রাজনৈতিক দলের এই সখ্য কোথাও প্রকাশ্য; কোথাও গোপন আবার কোথাও বা স্বার্থের জটিল-কূটিল হিসাব-নিকাশে। কালের কণ্ঠের সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এই সখ্যের কারণে সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন সহিংসতার ঘটনায় অনেক স্থানেই জামায়াত-শিবিরের আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিহত হন সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ বি এম মামুন হোসেন। এ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি সাতক্ষীরা সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান।
তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নজরুল ইসলামের আপন ভাই। এই সহোদরের আপন ভগ্নিপতি জেলা জামায়াতের বর্তমান আমির মাওলানা আব্দুল খালেক মণ্ডল। মামুন হত্যা মামলায় ওই দুজনসহ জামায়াত-শিবিরের ১৯০ জন কর্মীর নামে মামলা হয়; কিন্তু পুলিশ ওই দুজনকে আজ পর্যন্ত আটক করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সাম্প্রতিক সহিংসতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সাতক্ষীরার বিভিন্ন থানায় ৬৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামির সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার হলেও এজাহারভুক্ত মাত্র এক হাজার ২৬ জন। বাকিরা অজ্ঞাত। এদের মধ্যে মাত্র ১০৪ জন আসামিকে আটক করতে পেরেছে পুলিশ। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, আত্মীয়তার কারণেই জামায়াত-শিবিরের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আটক করা হচ্ছে না। অবস্থাটা এমন যে এর বিরোধিতাকারী আওয়ামী লীগ নেতারা পর্যন্ত সাংবাদিকদের কাছে নিজের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন। তাঁদেরই একজন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'সাতক্ষীরার সবাই জানে কারা কলকাঠি নাড়ছে। আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। কিন্তু তার পরও আমাদের কারো কিছু করার নেই।'
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি আমান উল্লাহ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে জামায়াতের নেতাদের আত্মীয়তার কথা স্বীকার করে বলেন, 'বিষয়টি তেমন সিরিয়াস নয়। আসামি আটক না করার জন্য আমাদের কেউ চাপ দিচ্ছে না।'
যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, 'আসামি না-ধরার জন্য নয়, পারিবারিক ও রক্তের বন্ধন উপেক্ষা করে আমরা আসামি আটকের জন্য তদবির করছি।'
ঝিনাইদহ : হরিণাকুণ্ডু উপজেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহার হোসেনও তিন বছর আগে পুত্রবধূ করে ঘরে এনেছেন পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পৌর কমিশনার শাহাজ উদ্দিনের মেয়েকে। গত ৩ মার্চ হরিণাকুণ্ডু উপজেলা পরিষদে হামলা ও পুলিশ হত্যা মামলায় মোতাহার হোসেন অন্যতম আসামি হলেও এই আত্মীয়তার কল্যাণে ঘটনার এক মাস পরও রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে জামায়াত নেতা মোতাহার হোসেনকে 'পলাতক' আখ্যা দিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, মহেশপুর কোটচাঁদপুর আসনের আওয়ামী লীগের এমপি শফিকুল আজম খান চঞ্চলের মামাতো ভাই শফিকুর রহমান টিটো কোটচাঁদপুর পৌর জামায়াতের সাবেক আমির। বর্তমানে তিনি স্থানীয় কুশনা ইউপি চেয়ারম্যান। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কোটচাঁদপুরে পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের হামলায় আট পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার মামলার অন্যতম আসামি তিনি। অভিযোগ উঠেছে, আত্মীয়তার কারণে পুলিশ টিটোকে আটক করছে না।
বগুড়া : বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত দুপচাঁচিয়ার গোবিন্দপুরে জামায়াতের প্রার্থী ছিলেন দুপচাঁচিয়া উপজেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সেক্রেটারি মজিবর রহমান। নিজ দলের প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মোটা টাকার বিনিময়ে সে সময় কাজ করেছেন জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে বরণ করতে হয়েছে শোচনীয় পরাজয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, গোবিন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ, ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য নুর মোহাম্মদ, আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক তালুকদার বাদশা, ইঞ্জিনিয়ার ফজলুল হক, আব্দুর রশিদ মঞ্জুসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই সরাসরি জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে কাজ করেছেন। মজিবর রহমানও বিজয়ী হয়ে 'প্রতিদান' দিয়েছেন হাত ভরে। তিনি সব বিলিবণ্টন ও ভাগবাটোয়ারায় এই নেতাদের সঙ্গে রাখেন। আওয়ামী লীগের সেই সময়ের প্রার্থী আব্দুস সামাদ বলেন, টাকা যেখানে, নেতারা সেখানে। ওঁদের কাছে দলের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থের মূল্য বেশি। তবে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদ বলেন, 'চেয়ারম্যান ভালো লোক। এ কারণে তাঁর সঙ্গে রয়েছি আমরা। অর্থ লেনদেনের কোনো ব্যাপার নেই।'
বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলায় ঠিক এভাবেই জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সখ্য বজায় রাখছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। আর এ সুযোগে ক্রমেই দল ভারী করছে জামায়াত। বগুড়ার শেরপুরে জামায়াত নেতা-কর্র্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্যকে দলটির স্থানীয় ক্ষুব্ধ অংশ নাম দিয়েছে 'আওয়ামী লীগ-জামায়াত জোট'। এখানেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের 'ম্যানেজ পলিসি'র মাধ্যমে জিতে গেছেন উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়ন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী মাওলানা আব্দুল মতিন।
আর বগুড়ার শাজাহানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামায়াতের রুকন মাওলানা আব্দুস সালামের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছেন সেখানকার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হেফাজত আরা মিরা। আছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন বাবলুও। জামায়াতের চেয়ারম্যান থাকলেও এলাকার বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বণ্টন হয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির বাড়িতে। এসব কারণেই ৩ মার্চের সহিংসতার ঘটনায়ও আব্দুস সালামের নামে কোনো মামলা হয়নি। অথচ তাঁর নেতৃত্বেই মিছিলে এসে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে গ্রামের নিরীহ মানুষ। আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে এলাকার নারীদেরও নামানো হচ্ছে জামায়াতের রাজপথের আন্দোলনে।
এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুর রহমান দুলু জানান, আওয়ামী লীগের হাতে গোনা কয়েকজনের জন্যই শাজাহানপুর এখন জামায়াতের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার উদ্দিন বলেন, জামায়াতের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করা হয় না। তাঁরা তাঁদের মতো রাজনীতি করে।
রাজশাহী : রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জামায়াত নেতা নোমানুল ইসলাম নোমানকে গত ১৫ মার্চ সকালে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাঁকে ছাড়িয়ে নিতে শুরু হয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দৌড়ঝাঁপ। ওই দিন সন্ধ্যায়ই নোমানুলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানায়, এই তদবিরকারীদের মধ্যে ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ও আওয়ামী লীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেনসহ আরো কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর। কিন্তু নেপথ্যে থেকে সরাসরি পুলিশ কর্মকর্তাদের মোবাইলে কল করে নোমানুলকে ছাড়িয়ে নিতে তদবির করেন মহানগর আওয়ামী লীগের একজন অতি প্রভাবশালী শীর্ষ নেতা।
শুধু নোমানুল নন, সামপ্রতিককালে রাজশাহী মহানগরীতে জামায়াত-শিবিরের একাধিক নেতা-কর্মীকে আটকের পরপরই ছেড়ে দিতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এসব কারণে ওই নেতার ওপর ক্ষুব্ধ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেকে। আগামী সিটি করপোরেশন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগরীর জামায়াতের ভোট ব্যাংককে কাছে টানতেই ওই নেতা জামায়াত-শিবিরের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
অন্যদিকে জামায়াত-শিবিরের আরেক সহিংসতাপ্রবণ গোদাগাড়ী উপজেলায় দলটির নেতা-কর্মীদের প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তানোর-গোদাগাড়ী আসনের এমপি ও শিল্পপ্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরীসহ গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের আরো কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁরা। রাজশাহীর অন্য আরো চার এমপির বিরুদ্ধেও বিপুলসংখ্যক জামায়াত-শিবিরকর্মীকে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বাগমারা আসনের এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে রাজশাহী পশ্চিম জেলা জামায়াতের আমির আবদুল আহাদ কবিরাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার অভিযোগ ওঠে সমপ্রতি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এসব কারণেই নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিও এগিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছে না জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব ঠেকাতে।
চট্টগ্রাম : সাবেক জামায়াত নেতার বাড়িতে দাওয়াতে অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে আমিন ভাই (আমিনুল ইসলাম) আমাদের বলেছেন, 'তাদের আওয়ামী লীগ বানাচ্ছি।' নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে কথাগুলো বলেছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার আওয়ামী লীগের এক নেতা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আমির ও চট্টগ্রাম-১৪ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য শামসুল ইসলামের বাড়ি সাতকানিয়ার বারদোনা গ্রামে। দুজনের বাড়ির দূরত্ব মাত্র দেড় শ গজ। সেই সুবাদে তরুণ এই আওয়ামী লীগ নেতার পরিচয় শামসুল ইসলামের আদরের 'নাতি'। কিছুদিন আগেও আমিনুলের বাড়িতে আয়োজিত মেজবানে অংশ নিয়েছেন শামসুল ইসলাম। আবার গত ২৮ মার্চ দুপুরে লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলার ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আনিসুল মোস্তফার মামাতো ভাই ও একই ইউনিয়নের সাবেক আমির শাহেদ রেজার বাড়িতেও দাওয়াতে অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আমিনুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাও।
শামসুল ইসলামকে সহযোগিতা দেওয়ার গুঞ্জন বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, 'পুলিশ কাকে ধরবে আর কাকে ধরবে না, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়।'
এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীকে পুলিশ নাগালে পেয়েও ধরছে না। গত ৩১ মার্চ চট্টগ্রামের আদালতে জামিনের জন্য যান শামসুল ইসলাম। একটি মামলায় জামিন পেলেও অন্য কয়েকটি মামলায় তিনি পলাতক আসামি। অথচ এর পরও পুলিশ তাঁকে ধরেনি। আর এ কারণেই পেছনের ব্যক্তি হিসেবে বারবার আসছে 'নাতি' আমিনুল ইসলামের নাম।
সিলেট : আওয়ামী লীগের রাজনীতি বরাবরই সমঝোতার মধ্যদিয়ে পরিচালিত হওয়ার কথা শোনা যায় সিলেটে। বিশেষ করে জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যায় সিলেটের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বিরুদ্ধে। এমনকি জামায়াতের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তাঁর শেয়ার রয়েছে বলে দলের নেতা-কর্মীরাও দাবি করে। যে কারণে জামায়াতের যেকোনো প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ হামলা করতে গেলে তিনিই বাধা হয়ে দাঁড়ান। শহীদ মিনার ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগ জামায়াতের মালিকানাধীন আল হামরা শপিং সিটি আক্রমণ করতে গেলে মেয়র তাতে বাধা দেন। অবশ্য তার পরও সেদিন তিনি এই প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে পারেননি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র কামরান বলেন, 'এসব অমূলক কথা। যাদের সঙ্গে রাজনৈতিক আদর্শের মিল নেই তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকে কী করে?' তিনি দাবি করেন, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে যদি সুসম্পর্কই থাকত, তাহলে ২০০৫ সালে তাঁর ওপর গ্রেনেড হামলা হতো না।
সুনামগঞ্জ : আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার কৌশল নিয়েছে জামায়াত-শিবির। স্থানীয় আওয়ামী লীগে তীব্র কোন্দলের কারণে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করে ব্যবসা ও রাজনীতিতে নানাভাবে ফায়দা নিচ্ছে জামায়াত। সুনামগঞ্জেও অভিযোগের আঙুল পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আয়ুব বখত জগলুলের বিরুদ্ধে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা মুকুট কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত পৌর নির্বাচনে জামায়াত প্রকাশ্যে বর্তমান মেয়রের পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করেছে। মেয়র কোনো দিনই জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলেননি।'
তবে জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করে মেয়র জগলুল বলেন, 'এসব স্রেফ প্রপাগাণ্ডা।'
গাইবান্ধা : সুন্দরগঞ্জে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১ থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব ও নাশকতার মূল পরিকল্পনাকারীরা পুলিশের ভাষায় পলাতক থাকলেও এলাকাবাসী বলছে, সেদিনের ঘটনায় পৌর মেয়র নুরুন্নবী প্রামাণিক সাজু সক্রিয় ভূমিকায় থাকলেও তাঁকে কোনো মামলায় আসামি করা হয়নি। বামনডাঙ্গায় ভাঙচুরের একটি মামলার এজাহারে প্রথমে তাঁর নাম থাকলেও তৎকালীন ওসি তা কেটে দেন। সম্প্রতি উপজেলা সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটির সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনসহ অন্যরা এ ব্যাপারে সোচ্চার প্রতিবাদ ও দাবি জানিয়েছেন। সাজু স্থানীয় জামায়াতের দিকনির্দেশকের ভূমিকা পালন করছেন বলে লিটন জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় মাদ্রাসাসহ ৬৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুপারসহ অন্তত ২০০ জন জামায়াতি শিক্ষককে সহিংস ঘটনায় মদদদানের অভিযোগে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ তাঁদের পলাতক বললেও অনেকে প্রভাবশালীদের আশীর্বাদে প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতায় নিয়মিত স্বাক্ষর দিয়ে বেতন তুলছেন।
বামনডাঙ্গার পোলট্রি ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, কয়েকজন জামায়াত-শিবিরের লোক পরিচালনা করে বলে প্রশাসন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের একটি অংশের ইন্ধনে অন্য একটি ভবনে সেটি পুনরায় চালু করা হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) জালাল উদ্দিন বলেন, পৌর মেয়রের (সাজু) বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র সাজু বলেন, 'আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণকালে মনোনয়নপত্রের অঙ্গীকারনামায় আমি তা লিখে দিয়েছি। আর কোনো ধরনের সন্ত্রাসের সঙ্গে আমার জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না।'
(প্রতিবেদনটির জন্য তথ্য দিয়েছেন যশোরের ফখরে আলম, বগুড়ার লিমন বাসার, রাজশাহীর রফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রামের এস এম রানা, সিলেটের আহমেদ নূর, সুনামগঞ্জের শামস শামীম ও গাইবান্ধার অমিতাভ দাশ হিমুন)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন