বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৬২ মামলা

ঢাকা: বিচারপতির স্কাইপি সংলাপ প্রকাশের ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার সকালে গ্রেফতার হন দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।

এর আগেও তিনি ২০১০ সালে ১ জুন একই পত্রিকার প্রকাশক হাসমত আলীর দায়ের করা মামলায় তিনি গ্রেফতার হন। এরপর একে একে তার নামে সারা দেশের আদালতে ও ঢাকার থানাগুলোতে ৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে তার মামলার সংখ্য ৬২টি।


মামলাগুলোর মধ্যে পাঁচটি মামলায় সে সময় তিনি ১৪ দিন রিমান্ডও খেটেছিলেন। মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বাংলনিউজে জানিয়েছেন, “মাহমুদুর রহমানের নামে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও পাঁচটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে ৪টি শাহবাগ থানায় ও একটি রমনা থানায়।”

তিনি আরও বলেন, ৫২টি মামলার মধ্যে সারা দেশে বর্তমানে ২১টি মামলা চলমান আছে। হাসমত আলীর দায়ের করা মামলাটি তিনি প্রত্যাহার করেছেন এবং ৪০টি মামলা হাইকোর্টে স্থগিত আছে।

এর আগে ২০১০ সালের ১ জুন গ্রেফতার হন মাহমুদুর রহমান। ওইদিন দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার বৈধ প্রকাশক না থাকার অভিযোগে পত্রিকাটির ডিক্লেয়ারেশনও বাতিল করা হয়। এরপর রাতভর নানা নাটকীয়তার পর দৈনিক আমার দেশ অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

দীর্ঘ ৯ মাস ১৭ দিন কারাভোগের পর ২০১১ সালের ১৭ মার্চ তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এর মধ্যে আদালত অবমাননার অভিযোগে আপিল বিভাগ তাকে ছয় মাসের সাজা দিলে ২০১০ সালের ১৮ আগস্ট থেকে ২০১১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত তিনি সাজা ভোগ করেছিলেন।

মাহমুদুর রহমানের আরেক আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন বেলাল বাংলানিউজকে বলেন, “মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে চলমান ২১টি মামলার মধ্যে ১৫টি মামলায় তিনি জামিনে আছেন। সর্বশেষ বিচারপতির স্কাইপি সংলাপের মামলায় ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের উস্কানিমূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়ের করা মামলায় তিনি জামিনে নেই।”

এসব মামলায় তিনি হাইকোর্টে জামিন নিতে গিয়ে ব্যর্থ হন। এরপর থেকেই গ্রেফতার আতঙ্কে ছিলেন মাহমুদুর রহমান।

এ প্রেক্ষিতে গত ৬ এপ্রিল লংমার্চ-উত্তর মতিঝিলের জনসভায় হেফাজতে ইসলাম মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, গত ১৩ ডিসেম্বর দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও প্রকাশক হাসমত আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৬ ও ৫৭ ধারায় ও দণ্ডবিধির ১২৪, ১২৪-এ, ৫০৫এ, ১২০বি ও ৫১১ ধারায় এ মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলাটি সরাসরি এজাহার হিসাবে গ্রহণ করতে ওইদিন ম্যাজিস্ট্রেট তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছিলেন।

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গত ১৩ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মামলা দায়ের করা মঞ্জুরি প্রদান করেন।

সম্প্রতি দৈনিক আমার দেশে স্কাইপির মাধ্যমে প্রবাসী এক আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি নিজামুল হকের কথিত কথোপকথনের উপর সংবাদ প্রকাশিত হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, আমার দেশ প্রায়ই আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যাবলি সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করে এই বিচার কার্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়ে আসছে।

তারই ধারাবাহিকতায় পত্রিকাটি গত ৯ ডিসেম্বর প্রথম পৃষ্ঠায় ‘গভর্নমেন্ট গেছে পাগল হইয়া, তারা একটা রায় চায়,’ ১০ ডিসেম্বর ‘ড. কামাল ক্রিমিনাল বুঝে না, আমিরউল গ্যাঞ্জাম করে, ওয়ালিউর চোর,‘ ১১ ডিসেম্বর ‘সাহারাকে সরিয়ে দেয়াটা গুড নিউজ’ ১২ ডিসেম্বর ‘মালুম ভাই হায়দার আলীরে স্ট্রংলি সন্দেহ করতেছে,’ ১৩ ডিসেম্বর ‘শাহিনুর সাহেব ঠাস কইরা আমার পায়ে পইড়া গেল,’ শিরোনামে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ করে।

পত্রিকাটিতে প্রকাশিত এসব ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ফলে দেশে ও বিদেশে জনমনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সর্ম্পকে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে।

এ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের মুখে গত ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগপত্র জমা দেন বিচারপতি নিজামুল হক। ১৭ ডিসেম্বর উক্ত বিচারপতির স্কাইপি কথোপকথনের ভিত্তিতে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন