বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

প্রথম আলোকে জবাবদিহি করতে হবে

রোকেয়া প্রাচী
গণজাগরণ মঞ্চে জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ততা ও ঐক্য জাগরিত হয়েছিল, সেটা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতেই। এ দাবিতে বিশ্বজোড়া বাঙা-লিদের আমরা একত্রিত হতে দেখেছি। এর পাশাপাশি দাবি উঠেছিল কীভাবে এই অপশক্তিগুলোকে সামাজিকভাবে নিষিদ্ধ করা যায়। এসব দাবির মুখে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডব-সহিংসতা আমরা দেখেছি। পরবর্তীকালে হেফাজতের ১৩ দফায় নারীকে অসম্মান করে ৪টি দফা উল্লেখ করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এটা পরিষ্কার, আমরা এক সংকটকাল পার করছি। শুধু তাই নয়, এসব ঘটনার প্রভাব পড়েছে পরবর্তী নির্বাচনসহ বাংলাদেশে যে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা চলছে তার ওপরও।

ঠিক এমন সময়ে হাসনাত আবদুল হাইয়ের মতো একজন প্রথিতযশা সাহিত্যিক এবং প্রথম আলোর মতো একটি প্রচারশীর্ষ  পত্রিকায় পহেলা বৈশাখের দিন জাগরণ মঞ্চের নারীদের নিয়ে যে ধরনের কল্পকাহিনী ছাপা হয়েছে তা শুধু নারীদের অসম্মানই করেনি, বাংলাদেশে আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় ও সংকটেরও সূচনা করেছে। যেমনটা এর আগে করেছে দৈনিক আমার দেশ।
নববর্ষে প্রথম আলোর এমন উপহার আমাদের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক। হাসনাত আবদুল হাই গণজাগরণ মঞ্চের ইতিহাস লেখার মাধ্যমে কটাক্ষ করেছেন, চারিত্রিক অশালীনতার কথা বলেছেন। নারীদের এক অশ্লীল জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। এ লেখা প্রকাশের মাধ্যমে প্রথম আলো পাঠককে গণজাগরণ মঞ্চের এক ভুল ঠিকানা বাতলে দিল।
একদিকে হেফাজতে ইসলাম, আমার দেশ আমাদের নাস্তিক বলছে। এ অবস্থায় প্রগতিশীলতার চর্চাকারী দাবিদার প্রথম আলো ও হাসনাত আবদুল হাই জাগরণ মঞ্চের নারীদের অসম্মান করলেন। লেখক গল্প শেষ করেছেন এভাবে— ‘জাগরণ মঞ্চের স্লোগানকন্যা গণমাধ্যমে অ্যাঙ্কর হচ্ছে। আমি জাগরণ মঞ্চের একজন কর্মী। স্লোগান দিয়ে আবার টেলিভিশনে অ্যাঙ্করিং করেছি।’ তার মানে তিনি আমাদের সবাইকেই অপমান করেছেন। একপক্ষ চাপাতি দিয়ে কোপাচ্ছেন অন্যপক্ষ কলম দিয়ে। দুটোই আমাদের রক্তাক্ত করেছে।
অবশ্যই একজন লেখকের স্বাধীনতা আছে ঘটনা বর্ণনার। কিন্তু সত্য বিকৃতির অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। অশ্লীলভাবে, সাহিত্যের ভাষায় গণজাগরণের নারীদের হাসনাত আবদুল হাই নগ্নভাবে উপস্থাপন করেছেন।
ধর্মান্ধরা আমাদের গালি দিচ্ছে, হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আবার প্রগতিশীল সাহিত্যিকের কাছ থেকেও একই কথা শুনে অসহায় বোধ করছি। তাহলে আমরা প্রগতিশীলদের কাছ থেকে কী শিখব? আমরা সবাই এর তীব্র নিন্দা জানাই। প্রথম আলো ক্ষমা চেয়ে লেখাটি তুলে নিয়েছে। কিন্তু এই লেখা ক্ষমা চাওয়া কিংবা তুলে নেওয়ার মধ্যে সীমিত থাকলে চলবে না। কারণ আজকে আমি একজনকে গালাগাল করে, পত্র-পত্রিকা, ব্লগে-ফেসবুকে অশ্লীল মন্তব্য করে পরে দুঃখ প্রকাশ করব— এটা হতে পারে না। বাকস্বাধীনতা মানে তো এটা নয়, আমি ইচ্ছে মতো যাকে-তাকে যা-তা বলব। একজনের সম্মান হরণ করব।
কোনও লেখা প্রকাশ হলে সে দায়িত্ব যেমন পত্রিকার, তেমনি লেখকেরও। এই বিষয়ে লেখকের একটি যুক্তিযুক্ত বক্তব্য আশা করছি। না হলে তাকে ক্ষমা করা হবে না। অবশ্য প্রথম আলো ক্ষমা চেয়েছে শুধু তার পাঠকের কাছে। কিন্তু এদেশের নারীসমাজের কাছে তাদের একটি ব্যাখ্যা সময়ের দাবি। আশা করি প্রথম আলো এ বিষয়ে জবাবদিহি করবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন