সমকাল । রাশেদ মেহেদী
কোনো বাধাতেই থামবে না প্রজন্ম চত্বরের দুনিয়া কাঁপানো গণজাগরণ মঞ্চ। চট্টগ্রামের সমাবেশ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হলেও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় অবস্থানে থেকে আন্দোলন চলবে গণজাগরণ মঞ্চের। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বাধা, সরকারের দোদুল্যমান অবস্থান, বিরোধী দলের আক্রমণ_ কোনো কিছুতেই থামবে না গণজাগরণ।
গণজাগরণের তরুণ উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এই
আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কোটি জনতার সমর্থনে। এই মঞ্চ
কারও মুখাপেক্ষী নয়, কোন দলের কী অবস্থান সেটিও বিবেচ্য নয়। যুদ্ধাপরাধীদের
সর্বোচ্চ শাস্তির রায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চ জনতার
সমর্থনেই আন্দোলন চালিয়ে যাবে। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ
সরকার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রজন্ম চত্বরের গণজাগরণ মঞ্চে বলেন,
চট্টগ্রামে কোনো বাধাতেই থামবে না প্রজন্ম চত্বরের দুনিয়া কাঁপানো গণজাগরণ মঞ্চ। চট্টগ্রামের সমাবেশ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হলেও একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে অনড় অবস্থানে থেকে আন্দোলন চলবে গণজাগরণ মঞ্চের। ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর বাধা, সরকারের দোদুল্যমান অবস্থান, বিরোধী দলের আক্রমণ_ কোনো কিছুতেই থামবে না গণজাগরণ।
গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ হবেই। এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। সেখানে সমাবেশ করে প্রমাণ করে দেওয়া হবে ব্লগাররা কেউ নাস্তিক নয় এবং গণজাগরণ মঞ্চ ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে না। গণজাগরণ মঞ্চের একটাই দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। তিনি আরও বলেন, জামায়াত-শিবির সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা যখনই অস্তিত্বের সংকটে পড়ে তখনই ধর্মের ব্যবহার করে। গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্য কুরুচিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার এই বক্তব্যের জবাব দেওয়া হবে। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে যে কোনো স্থানে আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলেও তিনি জানান। এর আগে ইমরান এইচ সরকার সমকালকে বলেন, 'হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশে অপবাদ দিয়ে প্রগতিশীল আন্দোলনকে অতীতেও বহুবার বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। সম্মানিত জাতীয় ব্যক্তিত্বদের অপমানিত করা হয়েছে। কিন্তু শেষ বিচারে জনতার জয় হয়েছে। সব বাধা মোকাবেলা করে গণজাগরণ মঞ্চ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত অহিংস পথেই আন্দোলন চালিয়ে যাবে। গণজাগরণ মঞ্চ তার দাবি থেকে এক চুলও সরে আসবে না।' তিনি দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষকে যুদ্ধাপরাধী চক্রের ষড়যন্ত্র-অপপ্রচার সম্পর্কে সচেতন থাকার অনুরোধ জানান। ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির সমকালকে বলেছেন, শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারাদেশে যেখানে চাইবে সেখানেই গণজাগরণ মঞ্চসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সব শক্তিকে সমাবেশ করতে দিকে হবে। মৌলবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সমাবেশের নিরাপত্তা প্রশাসনকেই নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রামে প্রশাসনের যে ভূমিকা তার পুনরাবৃত্তি আবার চট্টগ্রাম বা অন্য কোথাও দেখা গেলে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম এবং ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি কঠোর কর্মসূচি দেবে। এদিকে গত কয়েক দিনের চট্টগ্রামের পরিস্থিতি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী কেউই।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি তরুণ ব্লগার এবং অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই গণজাগরণ মঞ্চ দল-মত নির্বিশেষে জনতার অভূতপূর্ব সমর্থন পায়। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রে ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আক্রোশের শিকার হয়ে এই গণজাগরণ মঞ্চ ঘোষণা দিয়েও সমাবেশ করতে পারেনি চট্টগ্রামে। এর ফলে ঢাকার বাইরে অন্যান্য স্থানেও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সংবিধানে বর্ণিত সভা-সমাবেশ করার অধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চট্টগ্রামে ঢুকতে না দেওয়ার, সমাবেশ করতে না দেওয়ার জন্য ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর অব্যাহত হুমকি, সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানকেও নতজানু হিসেবে দেখছে সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কথা বলা গণজাগরণ মঞ্চকে বিরোধীদলীয় নেতা প্রকাশ্যে 'মঞ্চ-ফঞ্চ' উল্লেখ করে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর একই সুরে বন্ধ করার দাবি জানানোর কারণে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে প্রশ্নের, শঙ্কার।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সমকালকে বলেন, একাত্তরে মানবতার বিরুদ্ধে যারা অপরাধ করেছিল তাদের বিচার কিংবা শাস্তি চাওয়ার সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে যারা ধর্মকে টেনে এনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন তারা অন্যায় করছেন। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির সমকালকে বলেন, বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে তিনি বিএনপির দলীয় প্রধান হিসেবে নয়, জামায়াতের প্রধান হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রজন্ম চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের নিয়মিত কর্মসূচি চলেছে। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে উঠেছে স্লোগান, অপপ্রচার রুখে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ে উঠেছে নতুন স্লোগান, 'অপপ্রচারে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না', 'বাধা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না'। প্রজন্ম চত্বরে গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সাধারণ মানুষ, শুভ্যানুধ্যায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারাও চট্টগ্রামের ঘটনায় সরকারের অবস্থান এবং ঢাকায় বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে কিছুটা হতাশা থাকলেও দৃঢ় কণ্ঠে তারা বলেন, একাত্তরে পূর্বসূরিরা জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। তাদের রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে যুদ্ধপরাধীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার আগে প্রজন্ম চত্বর ছেড়ে ঘরে ফিরে যাবেন না তারা। গণজাগরণ মঞ্চের এক তরুণ উদ্যোক্তা এ সময় বলেন, ইতিহাসে জনতার ন্যায়ের সংগ্রাম সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও কখনও ব্যর্থ হয়নি। যুদ্ধাপরাধীরা একাত্তর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে বারবার ষড়যন্ত্র করেছে, বারবার তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে। সেই চেষ্টা তারা এখনও করছে। গণজাগরণ মঞ্চের শক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান কোটি জনতা। সেই শক্তিতে সব প্রতিকূলতা জয় করে দাবি আদায়ের মাধ্যমে অবশ্যই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করবে গণজাগরণ মঞ্চ_ এ আত্মবিশ্বাস গণজাগরণ মঞ্চের সব উদ্যোক্তা এবং শুভ্যানুধ্যায়ীরই আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন