মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৩

লিফলেট প্রচার বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্টজনকে হত্যার হুমকি

সারোয়ার সুমন,চট্টগ্রাম
রাজীব আহাম্মদ, ঢাকা

দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীসহ বিশিষ্টজনদের হত্যার হুমকি দিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লিফলেট প্রচার করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, তারা সন্দেহ করছে এসব লিফলেট প্রচার করছে জামায়াত-শিবির, হেফাজতে ইসলামসহ উগ্রপন্থি ধর্মীয় সংগঠনগুলো। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওই সংগঠনগুলো।
সম্প্রতি হেফাজতে ইসলাম, নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতা, বাংলাদেশ ইন্টারনেট অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি লিফলেট প্রচার করা হয়েছে। এসব লিফলেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল, মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সরকারের উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলী, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাহউদ্দিন আহমদ, শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদসহ গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াত-শিবির ও হেফাজতে ইসলাম এ রকম লিফলেট প্রচারের কথা অস্বীকার করে বলেছে, তাদের নামে উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব প্রচার করা হয়েছে। এর সঙ্গে তারা জড়িত নয়।
লিফলেটে ধর্মীয় উস্কানি ও সরকার সম্পর্কে নানা রকম কটু মন্তব্য করা হয়েছে। গত শুক্রবার নগরীর আন্দরকিল্লা জামে মসজিদে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ সমাবেশে প্রথমবারের মতো বিলি করা হয় এসব লিফলেট। গত কয়েকদিনে এ লিফলেট ছড়িয়ে দেওয়া হয় নগরীর অলিগলিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
নবীপ্রেমিক তৌহিদী জনতার ব্যানারে প্রকাশ করা লিফলেটে উল্লেখ আছে, 'সংবিধান সংশোধন করে সরকার সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস মুছে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা বসিয়েছে।'
এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, 'আফগান ও পাকিস্তান ফেরত জঙ্গিরা জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সম্পৃক্ত হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ। দেশের বিশিষ্টজনদের জড়িয়ে তারা যে লিফলেট প্রচার করছে সেটির সঙ্গে কারা জড়িত সেটিও খুঁজে দেখছি আমরা। হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ সমাবেশে এসব লিফলেট কারা এনেছে তাও খুঁজে বের করা হবে।'
চাপা পড়ে আছে ১০ আলেম হত্যা চেষ্টা মামলা
নগরীর বিবিরহাট থেকে ৩ মার্চ রাতে ১০ আলেম হত্যা চেষ্টা মামলার অভিযোগে পুলিশ ৮ জনকে আটক করলেও পরে ৫ জনকে এ সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার দেখায়। এদের মধ্যে দুই জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ নাশকতার নেপথ্যে জামায়াত-শিবির আছে বলে স্বীকার করে। কিন্তু ঘটনার ১৫ দিন পরও আলেম হত্যা চেষ্টা মামলায় জামায়াত-শিবিরের কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ প্রসঙ্গে পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) আজিজ আহমেদ বলেন, 'সুনি্ন আলেমরা জামায়াতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় ১০ আলেমকে হত্যার পরিকল্পনা করে জামায়াত শিবির। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুনি্ন আলেম ওবায়দুল হক নঈমীর বাসা রেকি করতে গেলে ফাঁস হয়ে যায় এ পরিকল্পনা। দুই শিবির ক্যাডার মাহমুদুল হাসান ও আবদুর রহমান রিমান্ডে পুলিশকে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়।' ঘটনার ১৫ দিন পরও কেন নেপথ্যের নির্দেশদাতাদের গ্রেফতার করা হয়নি_ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'হেফাজতে ইসলাম ও গণজাগরণ মঞ্চের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে ব্যস্ত ছিল পুলিশ প্রশাসন। এখন এ চাপ কিছুটা কমে আসায় আবার এ মামলায় মনোযোগ দেব আমরা।'
হেফাজতে ইসলামের প্রচার করা এক লিফলেটে আলেম-ওলামা, গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা, বুদ্ধিজীবী ও জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের হত্যার আহ্বান জানানো হয়েছে। গত শনি ও রোববার চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে উস্কানিমূলক এসব লিফলেট বিতরণ করা হয়।
ধর্মীয় বিদ্বেষপূর্ণ এসব লিফলেটে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মুক্তি দাবি করা হয়।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধী হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটির হরতালের হুমকির কারণে গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রামে সমাবেশ করতে পারেনি গণজাগরণ মঞ্চ। গণজাগরণ মঞ্চকে প্রতিহত করার হুমকি দিয়েছে হেফাজত। এর বিরুদ্ধে আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি দিয়েছে সংগঠনটি।
 সমকাল | মঙ্গলবার | ১৯ মার্চ ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন