শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০১৩

ফাঁসির দাবিতে আশুলিয়ায় খেটে খাওয়া শ্রমিকরা

শহীদুল ইসলাম ও আশিক হোসেন,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
আশুলিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক। যাদের কণ্ঠে ছিল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে স্লোগান।

কেউ কাজ ফেলে, কেউ ছুটি নিয়ে শুধু চেতনার তাগিদে সমাবেশে ছুটে এসেছেন, কথা বলে পাওয়া গেছে এমন বক্তব্য।

তরুণ প্রজন্মের অহিংস আন্দোলনের ৩৯তম দিনে শুক্রবার সমাবেশে হয় আশুলিয়ার জামগড়ার ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে।

সমাবেশের আগেই ব্যানার-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড, ঢাকঢোল, জাতীয় পতাকায় ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। ‘গার্মেন্ট পল্লী’ বলে অনেকের কাছে পরিচিত এই এলাকায় এমন দৃশ্য অনেকের কাছেই অপরিচিত।

জামগড়ায় একটি ছোট্ট দোকান চালান জাহিদুল হাসান। বয়স ৩৫ থেকে ৪০ হবে। বলছিলেন, “আমার এই বয়সে নিজ চোখে এমন দৃশ্য আমি দেখি নাই। এতদিন খালি টেলিভিশনে দেখছি, শুনছি। পোলাপাইনগুলা আমাগো দেখাইয়া দিয়া গেল দেশের জন্য তাদের কতো টান।”

সমাবেশ উপলক্ষ্যে আশুলিয়ায় শুক্রবার বেশকিছু কারখানায় আগেই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ন্যাচারাল সোয়েটার ফ্যাক্টরি তারই একটি। এই কারখানার শ্রমিক আসাদুজ্জামান সমাবেশে এসেছেন দুপুর ১টায়।

ময়মনসিংহের এই বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাবা মুক্তিযোদ্ধা। বাসার সবাইকে নিয়ে সমাবেশে এসেছি। আমরা রাজাকারের ফাঁসি চাই।

আসাদুজ্জামানের সঙ্গে তার গার্মেন্ট থেকে আরো ৪০-৫০ শ্রমিক সমাবেশে এসেছেন বলে জানান তিনি।

আইডিএস গার্মেন্টের শ্রমিক সামিউল জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ চলেছে তার প্রতিষ্ঠানে। এর পর সবারই ছুটি। তারও প্রত্যাশা রাজাকারের ফাঁসি হোক।

সোনিয়া গার্মেন্টের খালেদা জানান, শুক্রবার প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তার সহকর্মীদের অনেকেই এই সমাবেশে এসেছেন।

প্রজন্ম চত্বরের আশুলিয়ার সমাবেশে উপলক্ষ্যে খেটে খাওয়া অনেক মানুষই কাজ ‘ফেলে’ এসেছিলেন সমাবেশে। রাজনীতির ‘লাভ-ক্ষতি, খুব বেশি না বুঝলেও শুনেছেন নেতাদের বক্তব্য।

একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে স্লোগানও দিয়েছেন তারা।

“আমিও রাজাকারের ফাঁসি চাই” জানিয়ে আশুলিয়ার ভ্যানচালক হালিম জানান, শুক্রবার তিনি ভ্যান বের করেননি।

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের এই বাসিন্দা তার অন্য ভ্যানচালক বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলেন আশুলিয়ার সমাবেশে। সমাবেশস্থলের পাশেই একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকেন তারা।

নেত্রকোণার নেপাল কাজ করেন দাদা গার্মেন্টে। শুক্রবার এই প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় স্ত্রী গীতা রানীকে নিয়ে সমাবেশে এসেছেন তিনি। রিতাও কাজ করেন ওই গার্মেন্টে।

জামগড়ায় পোশাক শ্রমিকদের একটি মেসে রান্না করেন মধ্য বয়সী রুমি। শুক্রবারের রান্নাটা অন্য দিনের চেয়ে একটু আগেভাগে সেরে চলে এসেছেন সমাবেশে।

“মেসের হগলেই তো আইছে। তাগের লগে আমিও চইল্যা আইলাম। টিভিতে লাকিকে দেখছি, আজ নিজের চোহে দেখলাম,” বলেন মেসে রান্না করে দেয়া এই ‘খালা’।

সাদা কাপড়ে লাল অক্ষরে ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’ লেখা একটি কাপড় মাথার বেঁধে সেতারা গার্মেন্ট থেকে আসা ইউসুফ আলী বলেন, “শুনছিলাম নামাজের আগে বোমা ফাটছে। ভয় পাই নাই। আমরা অনেকেই এখানে আইছি। কোনো প্রোবলেম নাই।”

পলমল গার্মেন্টের সালাম জানান, সকাল ৭টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ডিউটি থাকলেও ম্যানেজারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে সমাবেশে এসেছেন তিনি।

কেন এসেছেন এই সমাবেশে? প্রশ্ন করতেই এই শ্রমিক বলেন, “হগ্গলেই তো হ্যাগোর ফাঁসি চায়। আমিও চাই ঝামেলা না কাইরা ফাঁসি দিয়্যা দিক।”

হামিম গ্রুপের আশুলিয়ার কারখানাগুলোতে শুক্রবার দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ চলেছে বলে জানান ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মী বকুল।

বগুড়ার এই বাসিন্দাও মনে করেন সব রাজাকারেরই ফাঁসি হবেই।

তবে আশুলিয়ায় কসমেটিক্সের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কবীরের একটু মন খারাপ। সমাবেশের কারণে দোকান খুলতে পারেননি তিনি।

কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটু লস অইলো। রাজনীতির ‘লাভ-ক্ষতি খুব বেশি বুঝি না। তবে আশা করি রাজাকারের ফাঁসি হবে।”

খেটে খাওয়া হাজারো শ্রমিকের মতো কবীরও মন খারাপ নিয়ে শুনছেন ঢাকা থেকে আসা তরুণ প্রজন্মের নেতাদের বক্তব্য। থেমে থেমেই দিচ্ছেলেন স্লোগান। সমাবেশ শেষ হওয়ার আগে এক বিন্দুও নড়েননি তিনি, নড়েননি আশুলিয়ার খেটে খাওয়া হাজারো শ্রমিক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন