গণজাগরণ মঞ্চ সংবাদ
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ এসেছে আশুলিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ থেকে।
শুক্রবার ঢাকার বাইরে প্রথম সমাবেশে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “ছাত্র শ্রমিকসহ সকল পেশাজীবীর শপথ হবে জামায়াত-শিবিরমুক্ত দেশ গড়ার। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াত নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।”
শুক্রবার ঢাকার বাইরে প্রথম সমাবেশে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেন, “ছাত্র শ্রমিকসহ সকল পেশাজীবীর শপথ হবে জামায়াত-শিবিরমুক্ত দেশ গড়ার। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াত নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না।”
“মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রদের সঙ্গে শ্রমজীবী ও পেশাজীবীরা মিলে যেভাবে প্রতিরোধ করেছিলেন এই দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধেও কোটি মানুষ একসঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে”, যোগ করেন তিনি।
আশুলিয়ায় গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার গার্মেন্ট শ্রমিক। যাদের কণ্ঠে ছিল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে স্লোগান।
সমাবেশে আগত নারী শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে ইমরান বলেন, নারীরা যখনই জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে শুরু করেছে তখনই ওই ধর্মান্ধ গোষ্ঠী প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চেয়েছে।
নারী-পুরুষ ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে যুদ্ধাপরাধী এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান ইমরান।
দুপুর আড়াইটার দিকে ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে সমাবেশ মঞ্চে গণসংগীত শুরু করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাভার উপজেলা শাখার নেতাকর্মীরা। এরই মাঝে শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে জামগড়া এলাকা।
বিকাল ৪টায় আশুলিয়ার জামগড়ায় ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনে নির্মিত মঞ্চে সব ধর্মের গ্রন্থ থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম।
এরপর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় এবং আশুলিয়ার তাজরীণ ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিক এবং একাত্তরের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
এরপর ব্লগার মাহমুদুল হক মুন্সীর সঞ্চালনায় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা একে একে বক্তব্য দিতে আসেন। ফাঁকে ফাঁকে চলে রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান।
বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, শাহবাগের গণজারণ মঞ্চ থেকে কখনো ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দেয়া হয় না। আমরা সবাই বাংলাদেশি, জন্মসূ্ত্রেই পাওয়া ধর্ম পালন করে থাকি।
“ধর্মপ্রেম দিয়ে আমরা দেশপ্রেম শিখেছি। যারা দেশপ্রেমী নয় তারা ধর্মপ্রেমী হতে পারে না।”
হেফাজতে ইসলামের পাল্টা কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রামে সমাবেশ না করতে পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “জোর করে সহিংসতায় বাধ্য করলে তার দায় আমরা নেব না।”
খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আপনি আপনার ভাষা সংযত করুন। জনগণকে অপমান করার কোনো অধিকার আপনার নেই।”
জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বাঁশের লাঠি প্রস্তুত করুন। যেখানে জামায়াত-শিবির সেখানেই গণধোলাই।”
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল বলেন, “জোর করে গণজাগরণ কর্মীদের নাস্তিক বানানোর চেষ্টা চলছে। আমি বলতে চাই আমাদের সরলতাকে কেউ দুর্বলতা ভাবলে পরিণাম ভালো হবে না।”
জামায়াত-শিবিরের প্রতারণার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক বলেন, “তারা ইসলাম ধারন করে না। তারা খুনি। আমরা সেই খুনিদের বিচার চাই।”
ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তমাল, ছাত্র ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক সোহান সোবহান, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি আব্দুর রইফ, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হোসাইন আহমেদ তফসির, ছাত্র ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আল জাহিদ প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন।
এছাড়া নাট্যব্যাক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সাভারের সংসদ তৌহিদ জং মুরাদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছিলেন।
চট্রগ্রামের মতো আশুলিয়াতেও হেফাজতে ইসলাম নামের সংগঠনটি জাগরণ মঞ্চের সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। তবে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আশুলিয়ায় তাদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
অবশ্য সমাবেশের আড়াই ঘণ্টা আগে আশুলিয়ায় বেরন ও গাজীর চর এলাকায় পাঁচটি ককটেল ফাটানো হয়। এ ঘটনায় দুজন আহত হন বলে আশুলিয়া থানার ওসি শেখ বদরুল আলম জানান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন