বুধবার, ২০ মার্চ, ২০১৩

গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে গণজাগরণ মঞ্চের মতবিনিময়

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ভবনে বৈঠক

জনকণ্ঠ, বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ গণমাধ্যমের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে গণজাগরণ মঞ্চ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে তাদের এ মতবিনিময়সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া পূর্বঘোষিত সকল কর্মসূচী সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে মঞ্চের। পাশাপাশি শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে প্রতিবাদী কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রায় দেড় মাসের আন্দোলনে গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে মঞ্চের সংগঠকদের। আন্দোলনকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে তাদের প্রস্তাবনা ও আন্দোলন সম্পর্কে তাদের ভাবনাগুলো শুনতে মঞ্চের সংগঠকরা এ মতবিনিময়ের আয়োজন করেছে। গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের একটি ক্ষুদ্র অংশের অব্যাহতভাবে বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাওয়া, মঞ্চের কর্মীদের চরিত্র হননের চেষ্টা, ধর্মকে পুঁজি করে মঞ্চের কর্মীদের বিরুদ্ধে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের উস্কে দেয়াসহ মিডিয়ার এই অংশটির সব ধরনের অপপ্রচার বন্ধে করণীয় ঠিক করতে মিডিয়া ব্যক্তিত্বের পরামর্শ শোনা হবে। পাশাপাশি মিডিয়াগুলোকে আন্দোলনের কর্মপদ্ধতি ও গতিবিধি সম্পর্কে মিডিয়াব্যক্তিত্বদের ধারণা জানতে আয়োজন এই কর্মসূচীর। এ ছাড়া মতবিনিময়সভায় পরবর্তী কর্মসূচী সফল করতে সব ধরণের প্রস্তুতির বিস্তারিত জানানো হবে এ মতবিনিময়সভায়।

ইতোমধ্যে আগামী ২২ মার্চ শুক্রবার শাহবাগে সমাবেশ, ২৫ মার্চ রাত্রিতে ’৭১-এর শহীদদের স্মরণ, ২৬ মার্চ মহাসমাবেশের কর্মসূচী নির্ধারণ করা হয়েছে। চলমান আন্দোলনের ৪৩তম দিনেও যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-সহ ৬ দফা দাবি আদায়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই অব্যাহত ছিল শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচী। বিশেষ করে আন্দোলন চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। হরতালের প্রতিফলন মঞ্চে খুব একটা দেখা যায়নি। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মঙ্গলবার এক অন্যরকম সন্ধ্যা নামে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরে। শাহবাগ থেকে টিএসটি যাওয়ার রাস্তা ভিন্ন অন্য দিককার রাস্তাগুলো খুলে দেয়া হয়। হরতালেও এ রাস্তায় গণপরিবহনের সংখ্যা বেশ ভালই ছিল।

’৭১-এর ঘাতক ও কসাই হিসেবে পরিচিত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ-ের রায়ের প্রতিবাদে ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক নামে ছাত্র ও তরুণরা শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলনে নামে। আন্দোলন থেকে কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির প্রধান দাবিসহ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবি উঠে আসে। সময়ের প্রেক্ষিতে আরও চারটি দাবি যোগ হয়ে ৬ দফা দাবিতে চলতে থাকে অবস্থান কর্মসূচী। শাহবাগের বৃত্তের বাইরেও বিশাল বিশাল বেশ কয়েকটি জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। নানান শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণে আন্দোলনের মাত্রা তীব্রতর হয়। তুঙ্গে উঠে শাহবাগের দাবির জনপ্রিয়তা। মুক্তিযোদ্ধারা চলমান এই আন্দোলনকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেন। আন্দোলনের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে প্রত্যন্তাঞ্চলে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরাও একই দাবিতে সহমত ঘোষণা করে।

আন্দোলন বানচাল করতে ওঠেপড়ে লাগে জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীচক্র। নানান অপপ্রচার চালিয়ে, দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা জাগরণ মঞ্চে আক্রমণ চালিয়ে, আন্দোলনের উদ্যোক্তাদের ওপর হামলা চালিয়ে, তাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করে আন্দোলনকে দমন করতে তৎপরতা শুরু করে। বিশেষ করে ‘উড়ো খবরে’ ব্লগারদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের খেপিয়ে তোলার ষড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে থাকে তারা। কয়েকটি গণমাধ্যম এসব বিষয় প্রচার করে মঞ্চের বিরোধিতাকে উস্কে দেয়। এমন অবস্থায় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যমের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনার গুরুত্ব বুঝতে পেরে আন্দোলনের সংগঠকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের সঙ্গে বৈঠকের।

এদিকে মঙ্গলবার প্রজন্ম চত্বরে চলেছে স্লোগান আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চত্বরে তৈরি করা মঞ্চটি মাত্রাতিরিক্ত উঁচু হয়ে যাওয়ায় একে খানিকটা ছোট করে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে গণমানুষকে নিয়ে নাটিকা, প্রতিবাদী গান, নৃত্য আর স্লোগানে নামে অন্যরকম এক সন্ধ্যা। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকেরা নাটিকার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলে সমাজের নানান অসঙ্গতি। প্রতিবাদে গানে ফুটিয়ে তোলেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আকাক্সক্ষা। স্লোগানে উঠে আসে তাদের সকল দাবি।

অন্যদিকে মূল গণজাগরণ মঞ্চ ছাড়াও আশপাশে প্রতিবাদী কর্মসূচীও অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার মু্িক্তযুদ্ধের আলোকচিত্র প্রদর্শন, তের নম্বর সেক্টর খ্যাত স্থানে প্রতিবাদী স্লোগানসহ সকল কর্মসূচী চলমান রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন