বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৩

পরবর্তী রায়ের পর আবারও সহিংসতার প্রস্তুতিঃ ট্রাইব্যুনালের দিকেই জামায়াতের দৃষ্টি

প্রথমআলো | সেলিম জাহিদ | তারিখ: ২৮-০৩-২০১৩
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের দ্বিতীয় প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীর সব দৃষ্টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতি। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক নেতাদের মামলার পরবর্তী ‘রায়’ দেখে আবারও সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। এ কারণে জোটগতভাবে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন কর্মসূচিতে জামায়াতের অংশগ্রহণ তেমন চোখে পড়ছে না বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

দলীয় একক কর্মসূচিতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা যেভাবে মরিয়া হয়ে নামেন, জোটের কর্মসূচিতে তেমন দেখা যায় না কেন—এ ব্যাপারে জানতে দলটির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা দাবি করেছেন, জোটগতভাবে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় থাকার জন্য তাঁদের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তবে গত কয়েক মাসে সারা দেশে দলটির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ অবস্থায় দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে কর্মসূচিতে অংশ নিতে হচ্ছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, এই কৌশলের বড় কারণ, তারা এখনই সব শক্তি ক্ষয় করতে চাইছে না, যাতে চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে মাঠে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, দলের নীতিনির্ধারকদের মূল দৃষ্টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল অথবা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলার রায় ঘোষণার খবর বের হলে হরতাল ঘোষণাসহ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকার পতন আন্দোলনে জোটকেন্দ্রিক কর্মসূচি থাকবে। তবে ট্রাইব্যুনাল থেকে কোনো অবিচার হলে, সে ক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব কর্মসূচি আসবে।’

বর্তমানে দুটি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মামলার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে আছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১-এ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের পর এখন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। আর ট্রাইব্যুনাল-২-এ কামারুজ্জামানের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়েছে। কাদের মোল্লার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ ইতিমধ্যে আপিল করেছে। ৩১ মার্চ আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য আছে। আর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে তাঁর পক্ষে আপিলের প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালে আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সর্বশেষ ২৮ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলা ওই সহিংসতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ব্যাপক প্রাণহানি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এ ছাড়া ট্রাইব্যুনাল থেকে ঘোষিত এ পর্যন্ত তিনটি মামলার রায়ে ব্যক্তির পাশাপাশি দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকেও একাত্তরে অপরাধ সংঘটনের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। এই পরিস্থিতিতে সরকারের একাধিক মন্ত্রী, মহাজোটের নেতা ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি উঠেছে।

জামায়াতের সূত্র জানায়, দল নিষিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি বিবেচনায় রেখেই দলের নীতিনির্ধারকেরা সম্ভাব্য কিছু বিকল্প কৌশল ঠিক করে রেখেছেন। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাঁচাতে সামর্থ্যের সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়া দেখাতে নেতা-কর্মীদের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে।

দল নিষিদ্ধ হওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে আবারও মাঠে উগ্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর ফল কী হতে পারে, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি, বর্তমানে জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাঙের আবার সর্দি। আমরা তো পানিতেই আছি। না হয় পানির আরও এক হাত নিচে নামব, এই তো।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন