বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৩

নাশকতার শিকার কয়েক হাজার বিঘার বোরো

পুড়িয়ে দেওয়ার ২৮ দিন পরও কানসাট বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র শিগগিরই চালু নিয়ে অনিয়শ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সেচ দিতে না পারায় রোরো ধান মারা যাচ্ছে। এতে কয়েক হাজার বোরোচাষি নিঃস্ব হতে চলেছেন।

অনেক চাষি গরু-ছাগল বিক্রি ও ধারদেনা করে ডিজেলের সাহায্যে অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিয়ে ধান বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু ক্রমশ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় জমিতে আর সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুতের অভাবে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের লেখাপড়াও বিঘ্নিত হচ্ছে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা কানসাট বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পুড়িয়ে দেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেটে চৌচির হয়ে গেছে বহু বোরোখেত। বিবর্ণ হতে চলেছে ধানগাছ। উপজেলার গাজীপুর গ্রামের বোরোচাষি নজরুল ইসলাম (৫০) জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা মহাজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। ধান উঠলে পাঁচ মণ লাভ হিসেবে দেবেন মহাজনকে। কিন্তু ধান মরে যাওয়ায় মহাজন টাকা চাইতে শুরু করেন। একটি বকনা গরু বিক্রি করে ১০ হাজার টাকার সঙ্গে তাঁকে আড়াই হাজার টাকা লাভ দিয়েছেন। এই জমিই তাঁর সম্বল। সারা বছরের খোরাক আসে এই জমি থেকে। এখন সারা বছর কী খাবেন সেই চিন্তায় আছেন।

জগন্নাথপুর গ্রামের রিপন আলী জানান, তাঁর দুই বিঘা জমির ধান মরে গেছে। আর এক বিঘা ১৩ কাঠা জমির ধানের অবস্থাও খুব খারাপ। তিনি বলেন, ‘এই জমির বলেই খাই। এখন ছ্যালাপিলা লিয়্যা কী খাব?’

সালামপুর গ্রামের বোরোচাষি আবদুল লতিফ জানান, চার বিঘা জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন। ইতিমধ্যে তাঁর এক বিঘা জমির ধান মরে গেছে। আরও তিন বিঘা জমির ধানও ঝুঁকির মুখে রয়েছে। তিনি গরু বিক্রি করে চাষাবাদ করেছিলেন।

সাহেবনগর গ্রামের চাষি সামিরুল ইসলামের পাঁচ বিঘার মধ্যে এক বিঘার ধান ইতিমধ্যে মরে গেছে। বাকি চার বিঘার অবস্থাও খুব খারাপ। অগভীর নলকূপে পানি ওঠার পরিমাণ কমে গেছে। দ্রুত বিদ্যুৎ না এলে ওই জমির ধান মরে যাবে। ইতিমধ্যে তাঁর ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে।

উপর চাকপাড়া গ্রামের আবদুস সালাম ও বেনজির আলী মিলে ঘোড়াদহ বিলে চার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। অগভীর নলকূপ দিয়ে সেচ দেওয়ার অর্থ তাঁদের নেই। তাঁদের জমির পাশেই বিলের নিচু এলাকায় আছে কিছু পানি। ফজরের নামাজ পড়েই দুজন মিলে টিন দিয়ে বিলের পানি উঠিয়ে চলেছেন টানা দুপুর পর্যন্ত। কিন্তু সেচ দেওয়া সম্ভব হয়েছে মাত্র এক বিঘা জমিতে। যে পানিটুকু আছে, তাতে চলবে আরও দুই দিন। এরপর কী হবে, তা ভেবে খুবই চিন্তিত তাঁরা।

শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আহমেদ ফারুক জানান, শাহবাজপুর, দাইপুকুরিয়া, চককীর্তি ও মোবারকপুর ইউনিয়নে এক হাজার ২০০ হেক্টর জমির বোরো ধান চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দু-তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টি না হলে এসব জমির ধান বাঁচানো যাবে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক হাসান নেওয়াজ বলেন, বিদ্যুৎ-সংযোগ কখন দেওয়া যাবে, তা এখনো বলা সম্ভব নয়। তবে ক্ষতিগ্রস্ত উপকেন্দ্রের পাওয়ার ট্রান্সফরমারগুলোর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এখনো ফলাফল পাওয়া যায়নি।

প্রথম আলো
আনোয়ার হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ | তারিখ: ২৮-০৩-২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন