শনিবার, ৩০ মার্চ, ২০১৩

হেফাজতের সঙ্গে মিল রেখে কর্মসূচি দেবে বিএনপি

প্রথম আলো | তারিখ: ৩০-০৩-২০১৩
সরকার পতনের আন্দোলনে কেবল নিজ দলের ওপর ভরসা করতে পারছে না বিএনপি। তাই দলটি এখন হেফাজতে ইসলাম ও জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনের সঙ্গে মিলিয়ে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন দায়িত্বশীল নেতা এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সুবিধা নিতে কেবল হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াত-শিবির নয়, সমমনা যেকোনো রাজনৈতিক বা পেশাজীবী সংগঠনের সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির নৈতিক সমর্থন বা কৌশলী সহযোগিতা থাকবে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বৈঠকে পরবর্তী যেসব কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তাতেও এই সিদ্ধান্তের প্রতিফলন দেখা গেছে।
ধর্মের অবমাননাকারী কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন দল, সংগঠন ও আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি আগামী ৬ এপ্রিল। আর বিএনপির সূত্র থেকে জানা গেছে, দলটি আগামী ২, ৮ ও ৯ এপ্রিল হরতাল দেওয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, হেফাজতের কর্মসূচির আগে ২ এপ্রিল এক দফা হরতাল ডাকার কথা ভাবা হচ্ছে। আর হেফাজতের কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ঘোষণা দিয়েছে, ৬ এপ্রিলের লংমার্চে বাধা দিলে পরদিন থেকে তারা লাগাতার হরতাল ডাকবে। এটাকে বিবেচনায় নিয়ে ৮ ও ৯ এপ্রিল হরতাল ডাকার চিন্তা করছে বিএনপি।
এরপর ১৫ এপ্রিল ঢাকায় সম্ভাব্য মহাসমাবেশ থেকে বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়ার কথা। সেটাও হেফাজত ও জামায়াতের পরবর্তী কর্মসূচি দেখে নির্ধারণ করা হবে। তবে, মধ্য এপ্রিলের পর প্রতি সপ্তাহে একাধিক হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি থাকতে পারে বলে জানা গেছে।
বিএনপি এসব কর্মসূচি পালন করবে ১৮-দলীয় জোটগতভাবে। তাতেও স্বাভাবিকভাবেই জামায়াত থাকবে। এর বাইরে জামায়াত ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের মূল দৃষ্টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলটির নেতাদের বিচারের প্রতি। দলটির কোনো নেতার বিরুদ্ধে পরবর্তী রায় বের হলে, ওই দিন থেকেই টানা অন্তত দুই দিন হরতাল ডাকাসহ সহিংস প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে মনে করা হচ্ছে। জামায়াত এ ধরনের একক কর্মসূচি দিলে, তার আগে-পরে জোটগতভাবে কর্মসূচি দেওয়ার ব্যাপারে বিএনপিতে সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, হেফাজত বা জামায়াত-শিবিরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের গোলযোগ সৃষ্টি হলে এবং তাতে সরকার বেকায়দায় পড়লে, সেটার রাজনৈতিক সুফল নিতে সচেষ্ট থাকবে। হেফাজতের কর্মসূচির প্রতি যে বিএনপির নৈতিক সমর্থন আছে, তা ইতিমধ্যে হেফাজতে ইসলামকে জানানো হয়েছে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণের কারণে তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সবাই মিলে আন্দোলন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প বিএনপির সামনে নেই। তিনি বলেন, বিএনপি হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছে। আর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থান হলো বিচার স্বচ্ছ হতে হবে। ইতিমধ্যে এই বিচার-প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন