বিভাষ বাড়ৈ ॥ যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ,
যুদ্ধাপরাধীর বিচারসহ ধর্মের নামে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে রাজপথে নামছেন
স্বাধীনতার পক্ষের সকল ইসলামী দল, সংগঠন, ওলামা-মাশায়েক তৌহিদী জনতা।
রাজপথে নামছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, আধ্যাত্মিকতা, আউলিয়া একরাম,
দরগা, মাজার ও খানকা, সুফিবাদী তরিকতপন্থী ও মদিনা সনদের আলোকে প্রতিষ্ঠিত
সকল ইসলামী দল। শনিবার চট্টগ্রামে সুন্নি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জামায়াতের
বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের
ইমামের নেতৃত্বে আগামী ২৩ মার্চ রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ
ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদ। রাজধানীতে মহাসমাবেশের প্রস্তুতি
নিচ্ছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইসলামী দলগুলোর
ফ্রন্ট ‘প্রগতিশীল ইসলামী জোট’। ৬ এপ্রিল মহাসমাবেশসহ মাসব্যাপী সিরিজ
কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে মহাজোটের শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট।
দলগুলোর নেতৃবৃন্দ, আলেম ওলামাসহ ইসলামী চিন্তাবিদরা কঠোর আন্দোলনে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী ইসলাম বিকৃতকারী সন্ত্রাসী জামায়াত নিষিদ্ধ করা জনগণের প্রাণের দাবি। কোন দল জামায়াতকে রক্ষা করতে পারবে না। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ জঙ্গী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন মৃত্যু পর্যন্ত চলবে। কারণ জামায়াত কোন ইসলামী দল নয়, ইসলামের আসল শত্রু, এজিদের উত্তরসূরি। জামায়াত একাত্তরেও ইসলামের অপব্যখ্যা করে গণহত্যা চালিয়েছে, ধর্ষণ করেছে। এবার আবার আঘাত হানতে চায়। জামায়াতের কারণে ইসলাম দুর্নামের ভাগিদার। জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে সাধারণ মুসল্লিদের প্রতি আহবান জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, ‘সবাই মিলে আবারও গর্জে উঠি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, এবার তাদের রক্ষা নাই।’ চট্টগ্রামের ১০ আলেম হত্যার পরিকল্পনাকারী জামায়াত-শিবিরের বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের সার্বোচ্চ শাস্তি, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবিকে সামনে রেখে শনিবার চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়েছে সুন্নি সম্মেলন। প্রগতিশীল ইসলামী জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সম্মেলনে যোগ দেয় তরিকত ফেডারেশন, সম্মিলিত ইসলামী জোটসহ বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠন। যোগ দেয় হাজার হাজার সুন্নি, তরিকতপন্থী। এদিকে রাজধানীর পল্টনের এক কনভেনশন সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে মাসব্যাপী সিরিজ কর্মসূচীর ঘোষণা দিয়েছে মহাজোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী এ কর্মসূচীর ঘোষণা দেন। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে আগামী ২০ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ওলামা মাশায়েখ সম্মেলন, ২৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণে চারটি সমাবেশ, সবশেষে আগামী ৬ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে মহাসমাবেশ। জামায়াত ডে- লেবার হিসেবে লোক ভাড়া করে সারাদেশে সংঘাত সৃষ্টি করছে এমন অভিযোগ করে মিছবাহুর রহমান বলেন, জামায়াত পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর দেশব্যাপী নজিরবিহীন তা-ব শুরু করেছিল। এজন্য তারা বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করেছিল। তাই তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সম্প্রতি আন্দোলনে নামা হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা আহমদ শফী বার্ধক্যের কারণে ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃত চিত্র জানেন না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন পাস করার জন্য লংমার্চ করে ঢাকায় আসার প্রয়োজন নেই। তিনি আলোচনা চাইলে সরকার তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবে। যারা মহানবী (স) বিরুদ্ধে কুৎসা রচনা করছে তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলা প্রয়োজন। ঢালাওভাবে মানুষকে নাস্তিক, মুরতাদ বলা ইসলাম অনুমোদন করে না।
১৮ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত ইসলামী দলের নেতা ও ওলামারা হেফাজতে ইসলামকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বর্ষীয়ান আলেম হযরত মাওলানা আহমদ শফীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধের কমতি নেই। কিন্তু বর্ষীয়ান এই আলেম হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণ একা ধরে রাখতে পারবেন কিনা- এটা এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মহাসচিব শায়খুল হাদিস মাওলানা মনিরুজ্জামান রব্বানী, মাওলানা আজীজুল হক, মাওলানা মাসুদুর রহমান, গাজী আব্দুল ওহাব, মোহাম্মদ নুরুল আলম প্রমুখ। স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মদ্রোহী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে আগামী ২৩ মার্চ রাজধানীর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ ওলামা মাশায়েখ তৌহিদী জনতা সংহতি পরিষদ। ওই দিন ১১টায় মতিঝিলের শাপলাচত্বরে শুরু হবে মহাসমাবেশ। পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ঐতিকহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম ও খতিব আল্লামা ফরীদউদ্দীন মাসউদ ওলামা-মাশায়েখ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ’৭১-এর মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে মহাসমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘জামায়াত শুধু যুদ্ধাপরাধীই শক্তি নয়, এরা ইসলামেরও শত্রু। চলুন, সবাই মিলে আবারও গর্জে উঠি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, এবার তাদের রক্ষা নাই।’ দেশের বিশিষ্ট এ ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে যুদ্ধাপরাধ জঘন্যতম মানবতাবিরোধী অপরাধ। রাষ্ট্রের কর্তব্য হলো, এদের বিচার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা। আমরা ধর্মদ্রোহী ও রাষ্ট্রদ্রোহীদের মুখোশ উন্মোচনে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছি। জামায়াত জন্ম থেকে ইসলামেরও শত্রু। এরা দেশে ধর্মের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িকতা আমদানি করেছে। সুতরাং ধর্মের নামে জঙ্গীবাদ রুখতে হলে জামায়াতের উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং এদের অর্থের উৎসগুলোকে বাজেয়াফত করতে হবে।
চট্টগ্রামে বিশিষ্ট ১০ আলেম হত্যার পরিকল্পনাকারী, দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে নামছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, সম্মিলিত ইসলামী জোটসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ইসলামী দলগুলোর ফ্রন্ট ‘প্রগতিশীল ইসলামী জোট’। দাবি বাস্তবায়নে দেশব্যাপী চলছে জোটের মতবিনিময় সভা। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাজধানীতে মহাসমাবেশসহ নানা কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামার কথা জানিয়ে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল জনকণ্ঠকে বলেন, যুদ্ধাপরাধী ইসলাম বিকৃতকারী সন্ত্রাসী জামায়াত নিষিদ্ধ করা জনগণের প্রাণের দাবি। পবিত্র ইসলামকে বিকৃত করে কোন শক্তি পার পাবে না। তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের আউলিয়া একরাম, আলেম-ওলামা, তরিকতপন্থী জনগণের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। কিন্তু আমাদের দুর্বলতার সুযোগেই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির ও জঙ্গীবাদীরা ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে ‘শান্তি ও মানবতার ধর্ম ইসলাম’কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা এদের অপকর্ম সম্পর্কে সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে জাগিয়ে তুলতে চাই। ফেডারেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধী ইসলাম বিকৃতকারী মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ এ দেশের জনগণের প্রাণের দাবি। ইসলাম বিকৃতকারী জামায়াত এদেশের সহজ সরল মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবহার করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মুক্তিকামী মানুষ হত্যা, নারী ধর্ষণ, গণহত্যা, লুটপাট, জ্বালাও পোড়াওসহ এমন কোন অপকর্ম নেই, যা করেনি। যখন তাদের মানবতাবিরোধী অপকর্মের বিচার চলছে তখনও তারা পূর্বের ন্যায় হত্যা, গুপ্ত হত্যা, জ্বালাও পোড়াও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পুলিশ হত্যার মাধ্যমে দেশে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। তাই এসব ঘৃণ্য অপকর্মের বিরুদ্ধে সচেতন জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এসব অপকর্মের অর্থের যোগানদাতা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ, সারাদেশে জামায়াত-শিবিরের নির্বিচারে মানুষ হত্যা, জ্বালাও, পোড়াও, সন্ত্রাসী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সরকারী উদ্যোগে এলাকা ভিত্তিক মামলা দায়ের, ১০ আলেমকে হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনে বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলবেই। সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, জামায়াত সন্ত্রাসী দল। এটা কোন ইসলামী দল নয়। রাজনৈতিক দলও নয়। এরা যা করে এটা কোন গণতান্ত্রিক দলের কার্যক্রম হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, দেশবাসীকে জামায়াতসহ উগ্রবাদীদের সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলতে চাই, জামায়াত কোন ইসলামী দল নয়, ইসলামের আসল শত্রু। ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াত একাত্তরেরও গণহত্যা চালিয়েছে। ধর্মকে পুঁজি করে আবার আঘাত হানার অপচেষ্টা করছে। জামায়াতের কারণে ইসলাম আজ দুর্নামের ভাগিদার।
Source: http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2013-03-17&ni=129080
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন