রবিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৩

জামায়াত-সমর্থকদের নিয়োগ দিচ্ছিলেন আ.লীগের সাংসদ!

প্রথম আলো | দিনাজপুর অফিস ও বিরামপুর প্রতিনিধি | তারিখ: ১৭-০৩-২০১৩
দিনাজপুরে আওয়ামী লীগের সাংসদের বিরুদ্ধে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার সাংসদ গোপনে নিয়োগ দিতে এলে নবাবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ধাওয়া দেন বলে জানা গেছে।

তবে দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর-হাকিমপুর-নবাবগঞ্জ-ঘোড়াঘাট) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ আজিজুল হক চৌধুরী তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদে সাংসদের আসার খবর শুনে যুবলীগ-ছাত্রলীগের কয়েক শ নেতা-কর্মী উপজেলায় ছুটে আসেন। অবস্থা বেগতিক দেখে সাংসদ পুলিশের সহায়তায় তাঁর গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ছাত্রলীগের ক্ষুব্ধ কর্মীরা উপজেলা চত্বরে সাংসদের ছবি-সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। পরে লাঠি হাতে মিছিল করেন তাঁরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী কাম পিয়ন নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছিল। নিয়মানুযায়ী স্কুল পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তিদের তালিকা পাওয়ার পর উপজেলা শিক্ষা কমিটি নিয়োগ চূড়ান্ত করার কথা।

নবাবগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান অভিযোগ করেন, সাংসদ একক সিদ্ধান্তে যে ২৩ জনকে নিয়োগ দিতে তালিকা করেছেন, তাঁরা সবাই বিএনপি বা জামায়াতের সমর্থক। তাঁদের প্রত্যেকের কাছ থেকে চার-পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গোপনে সাংসদ ওই পদে নিয়োগ দিতে এলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ধাওয়া করেন। সাংসদ পালিয়ে গেলে ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের উত্তেজিত নেতা-কর্মীরা ডাকবাংলা মোড়ে সাংসদের ছবি ভাঙচুর করেন বলে শাহিনুর রহমান জানিয়েছেন।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দলীয় সমর্থক প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাই। টাকা ছাড়া চাকরি হবে না, এটা জেনে প্রতিটি পদের জন্য কর্মীরা এক লাখ টাকা দিতে সম্মত হই। কিন্তু সাংসদ সেই আবেদনও রাখেননি।’

জানতে চাইলে সাংসদ আজিজুল হক চৌধুরী গতকাল বলেন, টাকা নিয়ে জামায়াত বা বিএনপির কোনো কর্মীকে নিয়োগের জন্য বাছাই করা হয়েছে—এটা ঠিক নয়। স্কুল পরিচালনা কমিটি ও উপজেলা শিক্ষা কমিটি যাঁদের নাম মনোনীত করেছে, তাঁদেরই নিয়োগ দেওয়া হচ্ছিল। তবে তাঁরা কোন দলের, এটি তিনি জানেন না।

নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শিবলি সাদিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদের বিরুদ্ধে ওই ধরনের লিখিত একাধিক অভিযোগ রয়েছে। দলীয় সমর্থকদের মধ্য থেকে নিয়োগের দাবি ছিল। কিন্তু তাঁদের নাম তালিকায় নেই। এ নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিরসনে বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক আহমদ শামীম আল রাজীকে জানিয়েছেন তিনি। জেলা প্রশাসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত করতে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হিটলারুজ্জামান নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্থগিত করার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন