মাহমুদ আহমদ সুমন
হরতাল শব্দটি মূলত একটি গুজরাটি শব্দ। গুজরাটিতে বলা হয় হাড়তাল যা সর্বাত্মক ধর্মঘটের প্রকাশক। ইতিহাস পাঠে এবং উইকিপিডিয়ার তথ্যসূত্রে জানা যায় যে, মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। হরতাল হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন। হরতাল সাধারণত কোনো একটা দাবি আদায় করার বা এর গুরুত্ব বোঝাতে আহ্বান করা হয়। বিভিন্ন দাবি আদায়ের কারণে হরতালের আহ্বান করতে পারে। শান্তিপূর্ণ হরতালের মূল কার্যক্রম হয়ে থাকে প্রতিবাদ মিছিল এবং সমাবেশ। অর্থাৎ হরতাল সমর্থকরা রাজপথে বেরিয়ে একত্র হয়ে উচ্চস্বরে নিজেদের দাবি দাওয়া জানান দিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে হরতাল আইনসিদ্ধ অধিকার হলেও হরতালের নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার কোন অনুমতি নেই।
হরতাল শব্দটি মূলত একটি গুজরাটি শব্দ। গুজরাটিতে বলা হয় হাড়তাল যা সর্বাত্মক ধর্মঘটের প্রকাশক। ইতিহাস পাঠে এবং উইকিপিডিয়ার তথ্যসূত্রে জানা যায় যে, মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। হরতাল হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন। হরতাল সাধারণত কোনো একটা দাবি আদায় করার বা এর গুরুত্ব বোঝাতে আহ্বান করা হয়। বিভিন্ন দাবি আদায়ের কারণে হরতালের আহ্বান করতে পারে। শান্তিপূর্ণ হরতালের মূল কার্যক্রম হয়ে থাকে প্রতিবাদ মিছিল এবং সমাবেশ। অর্থাৎ হরতাল সমর্থকরা রাজপথে বেরিয়ে একত্র হয়ে উচ্চস্বরে নিজেদের দাবি দাওয়া জানান দিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে হরতাল আইনসিদ্ধ অধিকার হলেও হরতালের নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার কোন অনুমতি নেই।
বর্তমান দেশে হরতালের নামে যে নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু হয়েছে তাকে কোনোভাবেই দাবি আদায়ের লক্ষে পালিত হরতাল বলা যায় না বরং এগুলো হচ্ছে সন্ত্রাসী কর্মকা-। ১৮ দলীয় জোটের এর আগের দুই দিনের হরতালের আগের দিন থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে যে তা-বলীলা চালানো হয়েছে তা কি সন্ত্রাসী কার্যকলাপ নয়? যাত্রীসহ একটি বাসে যারা আগুন লাগিয়ে দেয় তারা কি মানুষ? দেশের সম্পদ যারা নষ্ট করে তারা কি দেশপ্রেমিক? হরতালের নামে নিরীহ মানুষদেরকে যারা হত্যা করছে তারা কি সন্ত্রাসী নয়? বিগত হরতালে অসংখ্য যানবাহনে আগুন লাগানো ও ভাঙচুর করা হয়েছে। পিকেটারদের ছোড়া পেট্রলবোমা বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসকও। ফেনীর দাগনভূঁইয়ায় পিকেটারদের হামলায় নিহত হয়েছেন এক ট্রাকচালক। সুনামগঞ্জের ছাতকে শহীদ মিনারে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। হরতালের আগের দিন রাজশাহীতে শিবিরকর্মীরা রগ কেটে দিয়েছে আওয়ামী লীগের দুই নেতার। এছাড়া আহত হয়েছেন সাধারণ মানুষ, পুলিশ এবং সাংবাদিকসহ কয়েকশতাধিক। দেশের বেশির ভাগ জেলাতেই ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও রেললাইন উৎপাটন করা হয়েছে, কোথাও রেলস্টেশন ও রেললাইনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে, কোথাও হামলা চালানো হয়েছে পুলিশ ফাঁড়িতে।
মঙ্গলবারে ঢাকা-সিলেট রুটের কুলাউড়া রেলস্টেশনের অদূরে হরতাল সমর্থনকারীরা ট্রেন লাইন উপড়ে ফেলায় সিলেট আসার পথে আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেসের ছয়টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। তবে মহান খোদার কৃপায় এতে বড়ো ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এর ফলে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অপর দিকে টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতালের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে সোমবার ভোর থেকে পণ্য ডেলিভারি কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া হরতালের কারণে বিভিন্ন স্থল বন্দরে কোটি কোটি টাকার কাচামাল নষ্ট হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। দেশের ক্ষতি ও জানমালের ক্ষতি করে দাবি আদায়ের আন্দোলন এ কোন ধরণের অপরাজনীতির খেলায় আজ ১৮দল নেমেছে?
বাংলানিউজের একটি সংবাদে বলা হয় গাড়ি ভাংচুর ও আগুন লাগানোর জন্য ভাড়া করা হচ্ছে লোকদের। সংবাদে বলা হয় রাজধানী ঢাকাতো বটেই, দেশের বিভিন্ন শহরে, এমনকি দেশের বাইরেও লোক ভাড়া করে জমিয়ে তোলা হচ্ছে হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল আর মানববন্ধনের মতো কর্মসূচি। রাজধানীতে ভাড়ায় নাশকতামূলক তৎপরতা চালায় এমন এক গ্রুপের প্রধান বলেন, গাড়ি পোড়াতে ১৫ হাজার টাকা লাগে। ভাঙচুর হয় ৫ হাজারে। আর ঝটিকা মিছিলের জন্য দেয়া জনপ্রতি ১শ’ টাকা করে। এসবের বাইরে কোন অস্ত্র নিয়ে কোন কর্মসূচিতে অংশ নিলে প্রতিটির জন্যই আছে নির্ধারিত ভাড়া। বন্দরনগরী চট্রগ্রামে প্রতিটি আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে। এ শহরের মিছিলগুলোতে প্রায়শই যে তলোয়ার দেখা যায়, সেগুলোর জন্য ভাড়া দেওয়া হয় দু’হাজার টাকা করে। এই খবর সবার জন্যই ভয়ের কারণ। যারা ভাড়ায় কাজ করে তাদের কোনো মায়াদয়া থাকে না। যেহেতু আগুন লাগানো বা গাড়ি ভাঙচুর করাই তাদের পেশা তাই তাদেরকে যখন রাজনৈতিক দলেরা ভাড়া করে তখন তারা তাদের কাজকে সফল করার জন্য মরিয়া হয়েও ওঠে। আর এ কাজ সফল করতে তারা এটা দেখে না, যে বাসটিতে আগুন দিচ্ছি তাতে যাত্রী আছে কি না। এক হিসেবে দেখা যায় বিএনপির বিগত ৩৬ ঘন্টার হরতালের আগেই আগুন দেয়া হয়েছে ২৪টি গাড়িতে। এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে। আর এ নিয়ে গত তিন মাসে ৭৫০টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। এসব সহিংসতার পাশাপাশি মানুষের সাধারণ জীবনকে করা হয়েছে হুমকির সম্মুখিন। আজ কেউ নিরাপদ নয়। যে সন্তানটি স্কুলে যাচ্ছে কেউ বলতে পারবে না যে, তার আদরের সন্তান সুস্থভাবে আবার ঘরে ফিরে আসবে বা কোনো সন্তান বলতে পারবে না যে তার বাবা কর্মস্থল থেকে সুস্থমতে বাসায় ফিরে আসবে। সবার মনে আজ এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
হরতালের নামে এই নৈরাজ্যর ফলে একদিকে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে অপর দিকে প্রাণহানি হচ্ছে এবং জনজীবনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখাতেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে হরতাল নামক সন্ত্রাসী কর্মকা-। বিরোধীদল হরতালের আহ্বান করবে করুক কিন্তু এর নামে কি দেশের শান্তি ভূলুণ্ঠিত করবে? তিনি কি ভাবছেন যে, দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে জনসমর্থন লাভ করবেন? তারা দাবি করে যে, দেশের জনগণ স্বতস্ফুর্তভাবে হরতাল সমর্থন করেছে। বিরোধীদলকে বলতে চাই, জনগণ এই হরতালকে সমর্থন করেনি বরং তারা হরতালের নামে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মৌন সমর্থন দিয়েছে।
সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করে দাবি আদায়ের কৌশল এদেশের মানুষ কখনো মেনে নেয়নি আর নিবেও না। সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সহিংসতারই জন্ম দেয় শান্তির নয়। দেশের কল্যাণের নামে যারা এই ধরণের কার্যকলাপ পরিচালনা করতে পারে তারা যে, দেশকে কতোটুকু ভালোবাসে তা তাদেরই কার্যে স্পষ্ট হয়ে যায়। গাড়িতে যখন আগুন লাগায় তখন কার সম্পদ নষ্ট হয়? ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হলে কার ক্ষতি? এসব ক্ষতি বা নষ্ট হওয়া কী কারো দেশের না কারো ব্যক্তিগত ক্ষতি হওয়া না দেশের ক্ষতি হওয়া? তাহলে দেশের যারা ক্ষতি করে তারা আবার দেশের মঙ্গলের আশ্বাস দেয় কী করে?
সম্প্রতি খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আন্দোলন করতে গেলে হয়তো আরও কিছু প্রাণহানি হবে। জানমালের ক্ষতি হবে। কিন্তু দেশের স্বার্থে এই ক্ষতি মেনে নিতে হবে।’ খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য থেকে কি এই বিষয়টি স্পষ্ট হয় না যে, বিরোধী দলের ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি এদেশের মানুষের প্রাণের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ আর এজন্যই তিনি প্রাণ হরণের খেলায় মেতে উঠেছেন। না হলে তিনি কিভাবে এ ধরণের কথা বলতে পারেন। যারা হরতালের নামে এ ধরনের গর্হিত কাজ পরিচালনা করেন তাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে। সেই সাথে জামায়াত-শিবির এবং হেফাজতে ইসলামের মতো যতো জঙ্গি সংগঠন আছে এদের বিরুদ্ধেও সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ এবং এই জঙ্গিদলগুলোকে নিষিদ্ধ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। হরতাল পালন করা রাজনৈতিক একটি অধিকার হতে পারে কিন্তু জানমালের নিরাপত্তাও সবার মৌলিক অধিকার। এই অধিকারকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। যে রাজনীতি জনগণের কষ্টের কারণ হয় সেই রাজনীতি কখনো দেশে শান্তি বয়ে আনতে পারে না। যারা হরতালের নামে দেশ ও জনগণের ক্ষতি করছেন তাদেরকে এই রাজনীতি পরিহার করে সুস্থ রাজনীতি করার আহ্বান জানাই।
মাহমুদ আহমদ সুমন : লেখক।
ভোরের কাগজ : বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন