সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৩

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে ট্রাফালগার স্কোয়ারে সমাবেশ

লণ্ডন, ১২ মার্চ- যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশের জনগণের চলমান গণজাগরণে সমর্থন দেওয়ার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটেনে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিরা।
রোববার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত লন্ডনের ঐতিহাসিক ট্রাফালগার স্কোয়ারে যুক্তরাজ্য গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত স্লোগান-সমাবেশে এ আহবান জানানো হয়। 
লন্ডন সময় বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা চলে এই স্লোগান সমাবেশ।
 
শিশু থেকে শুরু করে রাজনীতিক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীসহ বিভিন্ন বয়সের শত শত প্রবাসী বাঙালির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে চলে বিরামহীন স্লোগান। 
 
তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ পদক প্রাপ্ত আইরিশ নাগরিক ব্যারিস্টার নোরা শরীফ ও ব্রিটেনে বসবাসরত সুপরিচিত কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার অংশগ্রহণ পুরো সমাবেশকে প্রাণবন্ত করে তোলে। 
 
অনুষ্ঠানের মধ্যভাগে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্যালুট দেয় এই প্রজন্মের প্রতিনিধিরা। স্যালুট প্রদানের আগে সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। এ সময় লাল সবুজ জাতীয় পতাকাটিও উড়ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত ঐতিহাসিক ট্রাফালগার স্কোয়ারের আকাশে। 
 
তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের স্যালুট গ্রহণ শেষে জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত মুক্তিযোদ্ধারা নিজেরাই স্লোগান ধরেন, ‘অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেই নাই’, ‘মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার, তরুণদের হাতে উঠবে আবার’, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, রাজাকারের ঠাই নাই’, ‘আর কোন দাবি নাই, রাজাকারের ফাঁসি চাই’। 
 
সমাবেশের ঘোষণায় একাত্তরে নৃশংসতম গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্যে বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, আইনের শাসনে বিশ্বাসী বলেই বাঙালি জাতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্যে দীর্ঘ একচল্লিশ বছর অপেক্ষা করেছে। যখন এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ঠিক তখন ঐ গণহত্যাকারী জামায়াত আবারও হামলে পড়েছে। ওরা মসজিদে আগুন দিচ্ছে, সংখ্যালঘু অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর চালাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ, জাতীয় পতাকা ছিড়ে ফেলে আবারও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে। 
 
সমাবেশের ঘোষণায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়ে বলা হয়, আদালেতের মাধ্যমে বিচার চেয়েও যদি সহিংসতার কারণে তা পেতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ, তাহলে আইনের শাসনের প্রতি আর আস্থা থাকবে না কারো, ফলে সমাজে দেখা দেবে অরাজকতা।
 
এটি ঠেকাতে হলে বিশ্ববাসীকে এই মূহূর্তে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশের পাশে। সভ্যতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে দেশটির প্রতি।
 
সমাবেশে উপস্থিত ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ পদক প্রাপ্ত বিদেশি নাগরিক ব্যারিস্টার নোরা শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, একাত্তরে সেই ছাত্রজীবনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। দেশটির জন্মের একচল্লিশ বছর পর আজ যখন দেখি দেশটির জন্মলগ্নের ঐ পরাজিত শক্তি আবার নতুন করে স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়, তখন হাত পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকি কিভাবে? 
 
নোরা আরও বলেন, মাত্র বছর খানেক আগে যে দেশটির সরকার আমাকে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছে, দেশটির জন্মের বিরোধীতাকারী শত্রুরা যখন সেই দেশটির উপর আবার তাদের কড়াল থাবা বিস্তারের অপচেষ্টা করে, তখন এদের  বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া নৈতিক দায়িত্ব বলেই মনে করি। আর এজন্যই ট্রাফালগার স্কোয়ারের সমাবেশে উপস্থিত হয়েছি।
 
মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান বলেন, স্লোগান দেইনি অনেক দিন হয়ে গেছে। অস্ত্র হাতে নিয়ে যে শত্রুদের পরাজিত করেছিলাম সেই একাত্তরে, আজ তারা আবার খামছে ধরেছে আমাদের জাতীয় পতাকা। এ সময়ে শাহবাগ প্রজন্ম নতুন স্বপ্ন নিয়ে উপস্থিত হয়েছে আমাদের মধ্যে। সেই ভুলে যাওয়া স্লোগান ‘জয় বাংলা’ আমাদের কণ্ঠে আবার তুলে দিয়েছে আজকের প্রজন্ম। রাজাকারদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমেই তাদের পরাজয় আমরা সেলিব্রেট করবো।
 
যুক্তরাজ্য গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা মাসুদ রানা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের জাগরণে মুক্তিযোদ্ধাসহ সব প্রজন্মের অংশগ্রহণ আমাদের আন্দোলন শক্তি অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। নবীন-প্রবীণের এই সমন্বয় শক্তির সামনে কোন অপশক্তিই ঠিকবে না ইনশাল্লাহ। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন