মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০১৩

নতুন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামছে গণজাগরণ মঞ্চ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিসহ জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে নতুন কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামছে গণজাগরণ মঞ্চ। ইতোমধ্যে আগামী ২২ মার্চ শুক্রবার শাহবাগে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে ’৭১-এর শহীদদের স্মরণে কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি ২৬ মার্চ প্রজন্ম চত্বরে মহাসমাবেশ করার আলোচনা চলছে। চলমান আন্দোলনের ৪২তম দিনে ৬ দফা দাবি আদায়ে সোমবার বিকেলেও শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে জড়ো হয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। প্রজন্ম চত্বরে নিয়মিত কোন কর্মসূচী না থাকলেও শাহবাগের রাস্তা বন্ধ থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ।
রাস্তাটি বন্ধ থাকায় যানজট আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ’৭১-এর ঘাতক ও কসাই কাদের হিসেবে পরিচিত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে ব্লগার এ্যান্ড অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক নামে একটি সামাজিক সংগঠন শাহবাগের আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন থেকে কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করাসহ ৬ দফা দাবি জানানো হয়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানান। মুক্তিযোদ্ধারা চলমান এই আন্দোলনকে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে যায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশীরাও ৬ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে। এক পর্যায়ে জামায়াত-শিবিরসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী আন্দোলনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করে। আন্দোলনকারীদের নাস্তিক বলে ব্যাখ্যা দেয় তারা।

এদিকে সোমবার সকাল থেকে প্রজন্ম চত্বরের স্থায়ী মঞ্চ ভেঙ্গে নেয়া হচ্ছে এ রকম গুজব ছড়ায়। পরে আন্দোলনকারীরা এ ব্যাপারে বলেন, মঞ্চ ভাঙ্গা হচ্ছে সত্যি। কিন্তু এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। মূলত ঘটনা হলো- মঞ্চটি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে অনেক সময় মঞ্চের নিচে এসে স্লোগান দিতে হয়। তাই মঞ্চটি ভেঙ্গে আরও ছোট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

২৫ ও ২৬ মার্চের কর্মসূচী ঠিক করতে আলোচনা শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা। ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে আলোর মিছিলে যোগ দেবে মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। একাত্তরে শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হবে। পৃথকভাবেও কর্মসূচী পালনের পরিকল্পনা চলছে। ২৬ মার্চ শাহবাগে মহাসমাবেশের ডাক দেয়া হতে পারে। এতে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য, বীরাঙ্গনা, সেক্টর কমান্ডার, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ বক্তব্য রাখবেন।

শাহবাগের তিন দিকের রাস্তা বন্ধ কেন? ॥ শাহবাগের মোড় থেকে মূল মঞ্চ ইতোমধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এরপরও মৎস্য ভবন-রূপসী বাংলা হোটেল মোড়-কাঁটাবনের রাস্তাটি বন্ধ। এ ছাড়া মূল মঞ্চের কারণে শাহবাগ থেকে টিএসসি পর্যন্ত রাস্তাটি এই মুহূর্তে খুলে দেয়া সম্ভব নয়। প্রশ্ন হলো তিন পাশের রাস্তা বন্ধ করা নিয়ে। সম্প্রতি প্রজন্ম চত্বর দখল করতে আসছে জামায়াত শিবির এমন গুজবের পর শাহবাগের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়। নেয়া হয় তিন স্তরের নিরাপত্তা। মৎস্য ভবন-চারুকলা-কাঁটাবন-রূপসী বাংলা মোড়ে দেয়া হয়ে কাঁটাতারের বেড়া। এ ছাড়াও মঞ্চের পাশে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বসানো হয় আর্চওয়ে। বিশেষ করে আট মার্চ নারী জাগরণী সমাবেশের মঞ্চ লক্ষ্য করে হাত বোমা হামলার ঘটনার পর মঞ্চের নিরাপত্তা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বাস্তবতা হলো শাহবাগের তিন দিকের রাস্তা বন্ধ থাকায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সম্প্রতি তিন পাশের রাস্তা খুলে দেয়া হলেও আবারও তা বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। সকল প্রকার যানবাহন মৎস্য ভবন হয়ে রূপসী বাংলা হোটেলের সামনে দিয়ে চলতে হচ্ছে। দীর্ঘ পথ ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে ছাত্র-শিক্ষকদের। সায়েন্সল্যাবগামী পরিবহনগুলোকে রূপসী বাংলা হোটেল হয়ে বাংলামোটরসহ হাতিরপুল হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। তাই সাধারণ মানুষের দাবি দ্রুত সময়ে শাহবাগের তিন পাশের রাস্তা খুলে দেয়ার। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের পক্ষ থেকে রাস্তা খুলে দিতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তা বন্ধ রাখার কথা বলছে পুলিশ।
জনকণ্ঠ, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন