বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৩

গণজাগরণ মঞ্চ | ভিন্নমত আছে বিরোধ নেই

প্রথমআলো | নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২৮-০৩-২০১৩
হীদ রুমী স্কোয়াডের আমরণ অনশনকারী নয়জন আন্দোলনের আমেজ ধরে রেখেছেন। বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এই ছাত্রদের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনশনকারীদের পক্ষে আয়োজিত সংহতি সমাবেশে ব্যাংকার ফাহমি সুলতানার মতো অনেকেই বললেন, ‘ওদের মধ্যেই শহীদ রুমীর প্রতিচ্ছবি দেখছি। যারা দেশের জন্য জীবন বাজি রাখতে জানে।’

গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে শহীদ রুমী স্কোয়াডের ডাকে শুরু হয় এ অনশন কর্মসূচি। গণজাগরণ মঞ্চের ২১ ফেব্রুয়ারির মহাসমাবেশ থেকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া শুরুর জন্য ২৬ মার্চ পর্যন্ত দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সরকার এর মধ্যে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় শহীদ রুমী স্কোয়াডের সাত তরুণ—সাদাত হাসান, কাজী আকাশ, নাজমুল ভুঁইয়া, মানিক সূত্রধর, মেহেদী হাসান, শরিফুল আনন্দ ও রুবাইয়াত দীপ এই অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।

গতকাল বুধবার সকালে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই অনশনে যোগ দেন আরও দুজন। তাঁরা হলেন নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা স্কুলশিক্ষক মোহাম্মদ আলিফ প্রধান ও সাফি নামের একজন ব্লগার।

গণজাগরণ মঞ্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করে রুমী স্কোয়াডের তরুণেরা এ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছে। স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করার দাবিতে প্রজন্ম চত্বরে অংশগ্রহণকারী ১৯টি সাংস্কৃতিক সংগঠন গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মশাল মিছিল করেছে।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, আন্দোলনের পথ কী হবে, এ নিয়ে দ্বিমত থাকলেও তাঁদের লক্ষ্য অভিন্ন। তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলো নিজেদের মতো কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করে আসছে, এখনো করছে। তবে তারা সবাই মানবতাবিরোধী অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবিতেই কাজ করে যাচ্ছে। স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিতে গণজাগরণ মঞ্চ অনড় আছে বলে জানালেন ইমরান।

শহীদ রুমী স্কোয়াডের মুখপাত্র সেঁজুতি শোণিমা জানান, আমরণ অনশনের ঘোষণা দেওয়ার সময় থেকেই শহীদ রুমী স্কোয়াড বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করছে, অনেকেই এই কর্মসূচিকে গণজাগরণ মঞ্চের বিপক্ষে দাঁড় করাতে চাইছেন। তাঁদের সবার প্রতি স্কোয়াডের বক্তব্য হলো, ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর সময় থেকেই অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে মূল মঞ্চের প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তরুণ-তরুণীদের এই দলটি।

সাংস্কৃতিক সংগঠনের অন্যতম শরিক জাহানারা ইমাম স্কোয়াডের অন্যতম সংগঠক আহমেদ মনিরউদ্দিন জানালেন, ২৬ মার্চ পর্যন্ত যে দিনক্ষণ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তা না মানায় পরবর্তী সময়ের জন্য গণজাগরণ মঞ্চের তরফ থেকে যেসব কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা ও সমর্থন রয়েছে তাঁদের। তবে তাঁরা মনে করেন, স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচির পরিবর্তে ঘেরাও করাটাই যুক্তিযুক্ত হতো এবং ১৯ সংগঠন সেই চাপই অব্যাহত রেখেছে। তবে বরাবরের মতো গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিটি কর্মসূচিতে ১৯ সংগঠনের প্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন।

গতকাল সন্ধ্যায় গণজাগরণের মূল মঞ্চে ছিল প্রতিবাদী সংগীতানুষ্ঠান। বরাবরের মতো মঞ্চ গানের ফাঁকে স্লোগানমুখর হয়ে উঠছিল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন