সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৩

যুদ্ধাপরাধী রক্ষার হরতাল প্রত্যাখ্যান করুন

জনকণ্ঠ ॥ স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের গান, প্রতিবাদী কবিতা আর সেøাগানে সেøাগানে কাটল প্রজন্ম চত্বরের চলমান আন্দোলনের ৪১তম দিন। রবিবার ছুটির দিনে শাহবাগে এসে জড়ো হন সর্বস্তরের মানুষ। বিকেল চারটার পর গণজাগরণ মঞ্চে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচী শুরু হয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসিসহ ৬ দফা আদায়ে সকল দেশপ্রেমিক মানুষকে ও তরুণদের এই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিবাদী জনতা। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার হরতাল প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় নামতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানানো হয়েছে প্রজন্ম চত্বর থেকে। এদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলীয় জোটের দুই দিনের হরতালে রাজধানীসহ শহরতলী রুটে বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতি।

‘আন্দোলনে আরও কিছু প্রাণহানি হবে’ বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার এমন মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে শাহবাগে আসা সাধারণ মানুষ বলেছেন, বিরোধী দলনেত্রী পরিকল্পিতভাবে দেশে হত্যার রাজনীতি শুরু করেছেন। তিনি মানুষের মৃত্যু চান। প্রশ্ন হলো কাদের মৃত্যু চান তিনি। কে বেঁচে থাকবে আর কে মরবে এর জবাব হয়ত বিএনপি প্রধানই দিতে পারবেন। এদিকে আজকের হরতাল প্রত্যাখ্যান করে শাহবাগ থেকে সকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করার কথা রয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করাসহ ৬ দফা দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে দেশব্যাপী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ চলছে। ২২ মার্চ পর্যন্ত এই কর্মসূচী চলার কথা আছে। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রজন্ম চত্বরের মিডিয়া সেলে সর্বস্তরের মানুষের জন্য গণস্বাক্ষরের ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ১০ লাখের বেশি স্বাক্ষর। ঢাকার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গণজাগরণ মঞ্চে স্বাক্ষর গ্রহণ চলছে। সরকারী-বেসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত অফিস, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সমাজের সকল পর্যায়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেন্টারের ঠিকানায় পাঠাতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত গণস্বাক্ষর আসতে শুরু করেছে।

আয়োজকরা জানিয়েছেন, সংগৃহীত স্বাক্ষর জমা দেয়া হবে জাতীয় সংসদের স্পীকারের কাছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা প্রমাণ করতে চাই দেশের বেশিরভাগ মানুষ আমাদের দাবির পক্ষে। সবাই চায় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি হোক। নিষিদ্ধ করা হোক জামায়াত-শিবির। তাই আমরা মনে করি-সরকারের পক্ষ আমাদের দাবি বাস্তবায়নে গণস্বাক্ষর ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ সবাই একটি স্বাক্ষর দিয়ে আমাদের দাবির প্রতি সংহতি জানাচ্ছেন। প্রতিবাদী ও দেশপ্রেমিক মানুষের মুখে মুখে আজ একটি আওয়াজ জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশ চাই। যে বাংলাদেশ হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দেশ। যে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছে। সম্ভ্রম হারিয়েছেন দুই লাখের বেশি নারী।

হরতালের বাস চালানোর ঘোষণা ॥ আজ ও আগামীকালের হরতালের রাজধানীসহ শহরতলী সকল রুটে বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হরতালে বাস চলার সময় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।

রবিবার সড়ক পরিবহন সমিতি কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের এক জরুরী বৈঠক আহ্বান করা হয়। এতে ফুলবাড়িয়া-সায়েদাবাদ-গাবতলী-মহাখালী বাস টার্মিনালের মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ যোগ দেন। পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির মালিকরাও আসেন বৈঠকে। বৈঠক শেষে সম্মিলিতভাবে হরতালে বাস চালানোর ঘোষণা আসে।

আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে পরিবহন মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে বিএনপি-জামায়াতসহ ১৮ দলীয় জোট হরতাল আহ্বান করেছে। তাদের লক্ষ্য একটাই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করা। জামায়াত-শিবিরকে নাশকতার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া। এই হরতালের দেশপ্রেমিক মানুষের কোন সমর্থন নেই। থাকতে পারে না। কিংবা দেশের স্বার্থে এই হরতাল আহ্বান করা হয়নি। তাই আমরা মনে করি, জনবিরোধী এই হরতালে মালিক শ্রমিকদের সমর্থন থাকতে পারে না। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন-হাসান ইমাম, আজমল উদ্দিন আহমেদ সবুর, খায়রুল আলম মোল্লা, আবুল মনসুর বুলবুল, সামদানী খন্দকার প্রমুখ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন