বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৩

বদলে যাওয়া বিশ্ব তারুণ্য জাগরণ

অজয় দাশগুপ্ত
অস্ট্রেলিয়াজুড়ে গণজাগরণ মঞ্চের অস্তিত্ব এখন দৃশ্যমান। ঠিক দেশের মতো, নেতৃত্ব বা রাজনৈতিক দলের সমর্থন সহযোুিুগতা ছাড়াই গড়ে উঠেছে অদৃশ্য নেতৃত্ব বলয়। তারুণ্যকে অভিবাদন না জানিয়ে উপায় আছে? একটি লেখায় কয়েকজন তরুণের নাম উল্লেখ করার পর পরই তাঁরা জানিয়েছেন, জাগরণ মঞ্চের কোন নেতা নেত্রী নেই। এটি সম্মিলিত উদ্যোগ। সর্বস্তরের সব বয়সের বাংলা দেশীরাই এর হোতা এবং প্রাণ। সত্যি তাই অতি সম্প্রতি সিডনির প্রাণ কেন্দ্র মার্টিন প্লেসের সমাবেশটি ভরে উঠেছিল সর্বস্তরের প্রবাসীদের প্রাণময় অংশগ্রহণে। সাংস্কৃতিক নাট্য, কবিতা ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক তারুণ্যসহ বিপুল সংখ্যক নারী। নারীদের অংশগ্রহণকে আমি সব সময়ই সদার্থক বলে মনে করি। আমাদের দেশটি যত অনুন্নত বা দরিদ্রই হোক না কেন এর নারী শক্তি প্রদীপের শিখার মতো উজ্বল। ইতিহাসে দেখুন, ঝাঁসীর রানী, চাঁদ সুলতানা, প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া, নিবেদিতা, মীরা রিশার, সুফিয়া কামাল, জাহানারা ইমামÑ এঁরা সর্বত্রই উদ্দীপনা আর প্রেরণা। কেউ শিক্ষাকে আলো দিয়েছেন, কেউ যুদ্ধে জিতেয়েছেন, কেউ মুক্তির প্রেরণাদাত্রী, কেউ অধ্যাত্ম জ্যোতির দিশারী, কেউ আমাদের ইতিহাসের নতুন মুক্তিযুদ্ধের জননী। ফলে নারীদের অংশগ্রহণ আর এগিয়ে আসার বিকল্প নেই। অষ্ট্রেলিয়া একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ, এর সমাজ খোলামেলা, জীবন ধর্ম বা অন্যকোন অনুশাসনের কঠিন শৃঙ্খলে বাঁধা কিছু নয়। এ দেশে স্বাধীন, আত্মমর্যাদাপূর্ণ বাঙালী নারীরা যে ভূমিকা পালন করেন বা করতে পারবেন তা দেশেও নানা কারণে অসম্ভব। সিডনির যে কোন সমাবেশে এদের প্রাণবন্ত উপস্থিতিই প্রমাণ করে গৃহকোণে নিভৃতে আরেকটি বিপ্লবের বীজ বড় হচ্ছে। নারীই মা, জননী, সন্তানের কাদা মাটি বয়সে তার ভেতর চেতনা বা াাদশৃ বোর্ব প্রোথিত করেন তিনি। উদাত্ত আহ্বান জানাই। বিনীত অনুরোধ করি প্রবাসে বড় হতে থাকা, বড় হয়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা নবীন প্রজন্মেকে দেশের গল্প গাথা বলার সময় রাজাকারদের চিনিয়ে দিন। প্রবাসে যে কোন দেশে আমাদের শিশুরা ফেয়ারি টেলস পড়ে বটে কিন্তু শৈশবে মায়ের মুখে বাংলা গল্প শুনেই ঘুমাতে যায়। দয়া করে ভূত-পেতœী, দৈত্য-দানোর গল্প বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা শুরু করুন, বলুন বাংলাদেশে, তাদের অথবা তাঁদের মাতা পিতার জন্মভূমি, নাড়ির টানে বাঁধা দেশটিতে বঙ্গবন্ধু নামে এক রাজপুত্রের জন্ম হয়েছিল যিনি যে কোন ভেদাভেদের বাইরে এনে বাঙালীকে নতুন জীবন ও স্বপ্ন রচনার একটি দেশ দিয়ে গেছেন। যে দেশে কেউ ধর্ম জাত বা অন্য কোন কারণে কাউকে হেয় করবে না। যে রাজপুত্রের অকাল মৃত্যুর হাত ধরে আবার ফিরে আসা রাজাকার ভূতদের চেনাতেও ভুল করবেন না। জননীরাই পারবেন আগামী দিনের বাংলাদেশ ও তার সমাজকে দ্রোহী ধর্মান্ধ আর রাজাকারের হাত থেকে বাঁচিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে।

এটা যেমন ভাবনা তেমনি করার ব্যাপারও বটে। পাশাপাশি গত সপ্তায় সংঘটিত প্রতিবাদও ঘটতে যাওয়া মানববন্ধন,স্মারকলিপি পেশ ইত্যাদি নিয়ে এ দেশের কিছু বিশিষ্টজনের সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। এঁদের কেউ অধ্যাপক, কেউ পত্রিকা ও অন্য মিডিয়ার সাংবাদিক, কেউ অভিনয় শিল্পী, কেউ ব্রিটিশ, অস্ট্র্রেলিয়ান, কেউ ডাচ- অস্ট্র্রেলিয়ান। সবাই একটি ব্যাপারে এক মত, যুদ্ধাপরাধীদের কঠিন শাস্তি দেয়ার বিকল্প নেই। কি ধরনের কঠিন শাস্তি প্রত্যাশা করেন তাঁরা? এর জবাবে ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট বা মৃত্যুদ- দেয়ার বিধানহীন এই দেশের সুশীলরা বলেন, এটা দেশভেদে সমাজভেদে, রাষ্ট্র ও বাস্তবতাভেদে ঠিক করা উচিত। একাত্তরে নিহত, ধর্ষিত ও পলায়নে বাধ্য দেশত্যাগীদের সংখ্যা শুনে হতবাক অস্ট্র্রেলিয়ানদের শক্ত চোয়াল আর ঘৃণায় জ্বলে ওঠা চোখই বলে দিয়েছে কি চান তাঁরা? ভাল লাগছে সিডনি তথা অস্ট্র্রেলিয়ার তারুণ্য এঁদের সঙ্গে এদেশের মূল ধারার সঙ্গে, ক্ষমতা বলয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির কাজে নেমেছে। নিজেদের বৃত্তে বিভেদপূর্ণ বাংলাদেশী রাজনীতির প্রবাসী আঙ্গিনা পেরিয়ে মূল জায়গায় কাজ করছে তাঁরা। এর সুফল মিলবেই, গণজাগরণ মঞ্চ যখন যে অবস্থায় যে আকৃতি বা চেহারা ধারণ করুক না কেন তার আদর্শ ও চেতনা সহজে নিভবে না, বরং যত দিন যাবে তার দীপ্তি ও ঔজ্জ্ব¡ল্যে দ্বিতীয় মুক্তির পথে শুদ্ধ হয়ে উঠব আমরা। এটাই বাস্তবতা।

রক্ত, হরতাল, সংঘাত, মারামারি আর সন্ত্রাসে দেশকে ছারখার করে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্রের পরুও মানুষ তাঁদের হৃদয়বৃত্তি ভোলেুনি। এখনও জীবন জেগে আছে। জেগে আছেন রবীন্দ্রনাথ। গত সপ্তায় নয়নাভিরামে সৈকত পারের রেস্তরাঁয় তপন মাহমুদ গাইলেন, এক পর্বে রবীন্দ্রনাথ অন্য পর্বে গীতি কবি ও চিরকালের বাংলা গান। প্রথিতযশা রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী তপন মাহমুদ এখন সিডনিতে। কন্যা তুহিনা তপন মাহমুদকে সঙ্গে নিয়ে পরিবেশিত এ অনুষ্ঠানটি ছিল দর্শক-শ্রেুাতায় জনাকীর্ণ। দীর্ঘদিন পর প্রশান্ত পারের বাংলাদেশীদের মনে স্বস্তি ও আনন্দের স্পর্শ দিয়ে যাওয়া এই আয়োজন প্রমাণ করল, রক্ত আর মৃত্যুই শেষ কথা নয়। বাঙালী আনন্দের সন্তান। তার চাওয়া জীবনের নির্যাস।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন