বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাজতের দাবি মৌলবাদ ছাড়া আর কিছুই নয় ॥ জার্মান রাষ্ট্রদূত


সহিংসতার নিন্দায় জাপানী রাষ্ট্রদূত
স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিদেশী কূটনীতিকরা। তাঁরা সহিংসতা বন্ধে সকল রাজনৈতিক দলকে সংঘাতের পথ পরিহার করে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। অপরদিকে জার্মান রাষ্ট্রদূত আলব্রেখট কুনজে হেফাজতে ইসলামের দাবিকে ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন। 
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গঠনমূলক সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনৈতিক মিশনের প্রধান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনিকে গত ২ এপ্রিল লেখা এক চিঠিতে এ উদ্বেগের কথা জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি ক্যাথি এ্যাশটন। 
মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চিঠিতে ক্যাথি এ্যাশটন সহিংস ঘটনা বন্ধে সব রাজনৈতিক শক্তিকে তাদের প্রভাব খাটানোর আহ্বান জানিয়েছেন। মৌলবাদীদের সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি হামলার শিকার গোষ্ঠীগুলো বিশেষ করে হিন্দু জনগোষ্ঠীকে রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানান ক্যাথি। 
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য হয় তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনীতিতে সংঘাতের দৃষ্টিভঙ্গি পরিহারের প্রয়োজনীয়তা এবং গঠনমূলক সংলাপে বসার ওপর ইইউ বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে নির্বাচন কমিশনকে এক কোটি পাউন্ড তহবিল যোগাচ্ছে। চিঠিতে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করেন ক্যাথি এ্যাশটন। আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে একটি পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আগ্রহের কথাও ব্যক্ত করেন তিনি।
জার্মান রাষ্ট্রদূত আলব্রেখট কুনজে হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবিকে ‘মৌলবাদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেছেন, এটি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্য নয়। বাংলাদেশ একটি গণপ্রজাতন্ত্র। এটি ধর্মভিত্তিক প্রজাতন্ত্র নয়। সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের কর্মকা-ের দিকে ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আজকাল আমরা বিরক্তিকর বিষয় লক্ষ্য করছি। আমরা এসব দেখি মধ্যপ্রাচ্যে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পশ্চিমা বন্ধুরা উদ্বিগ্ন, তবে সঙ্কটে আগের মতোই পাশে থাকবে। 
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন সব রাজনৈতিক দল মিলেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন। মঙ্গলবার ব্রিটিশ হাইকমিশনে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের মৃত্যুতে শোকবইতে মন্তব্য লেখার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, সব দল মিলেই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে। 
অপরদিকে বাংলাদেশে অব্যাহত সহিংসতা, রাজনৈতিক সংঘাতের নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত সিরো সাদোসিমা। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, সম্প্রতি সংঘাতপূর্ণ রাজনীতির কারণে অনেক প্রাণ ঝরছে। ট্রেন ও যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। সামাজিক অর্থনৈতিক কর্মকা- ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের অর্থনৈতিক সম্পর্কেও এ সংঘাতের প্রভাব পড়ছে। জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকারকে সম্মান জানানো উচিত। কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলেরই নিরপরাধ সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর হামলার যৌক্তিকতা খোঁজা ঠিক নয়। রাষ্ট্রদূত সকল রাজনৈতিক দল ও নাগরিককে আইনের শাসনের প্রতি সম্মান জানানোর এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সঙ্কট নিরসনেরও আহ্বান জানান। 
এর আগে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজেনা সাম্প্রতিক সহিংসতা বন্ধে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপ আয়োজনের ওপর জোর দিয়েছেন। এছাড়া সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. রাদেন মার্টি সংঘাতের পথ পরিহার করে সংলাপের আহ্বান জানান। অপরদিকে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেনও বাংলাদেশে সহিংসতার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সংলাপের আহ্বান জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন