রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

আলোর মঙ্গলযাত্রায় চট্টগ্রাম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
চট্টগ্রাম: পুরনো বছরের সঙ্গে অতীতের জীর্ণতাকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করতে রাস্তায় নেমেছে চট্টগ্রামের মানুষ। গান-নাচ, হাসি-আনন্দে নতুন বছরের মঙ্গলযাত্রায় শামিল হয়েছেন চট্টগ্রামের নারী, পুরুষ, শিশু সবাই। সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, অন্ধকারের বিরুদ্ধে আলোর যাত্রার মধ্য দিয়ে বাঙালী তার আবহমান চেতনার কথা আরেকবার প্রমাণ করেছে পহেলা বৈশাখে।


চিরায়ত বাঙালী ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখে প্রতিবছরের মতো এবারও নগরীর ডিসি হিল এবং সিআরবি শিরিষতলায় শুরু হয়েছে বড় দু’টি আয়োজন। নতুন বছরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দু’টি প্রাঙ্গনে শুরু হয়েছে গান, নাচ, আবৃত্তিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা।

একইসঙ্গে শুরু হয়েছে মানুষের ভিড়ও। সকাল থেকেই বৈশাখী সাজে হাজারো মানুষের ভিড়, আনন্দোচ্ছ্বাস আর কোলাহলে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। বাবা-মায়ের হাত ধরে ছেলে-মেয়ে ছুটছে সেই সম্মিলনে। সেই পথচলা জানান দিচ্ছে-আজ দিন শুধুই বাঙালীর, যতদিন বাঙালী বেঁচে থাকবে, ততদিন তার সংস্কৃতিও মাথা উঁচু করে থাকবে।

নগরীর ডিসি হিলে ভোর সোয়া ৬টায় সদারঙ্গের রাগসঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে বর্ষবরণের মূল আয়োজন শুরু হয়। রাগ সংগীত শেষ হতেই ঢোলের বোলে নতুন বছরকে স্বাগত জানান বাদকরা। এরপর দলীয় সংগীতের ডালি নিয়ে আসেন সংগীত ভবনের শিল্পীরা।
এরপর থেকে বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে দলীয় সঙ্গীত, বৃন্দ আবৃত্তি, দলীয় নৃত্য পরিবেশিত হচ্ছে। দিনভর বর্ষবরণের এ আয়োজন করেছে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ।

ডিসি হিলের বাইরে রাস্তায় বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে বসেছে বৈশাখী মেলা। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে বসেছে লোকজ মেলা। মাটির সানকিতে বিক্রি হচ্ছে পান্তা-ইলিশ। মাটির ব্যাংক, গহনা, খেলনা, ছোটদের পোশাক, বই, বাঙি, তরমুজ, শরবত, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, খনিজ পানি, চিপস, মুখোশ, হাতপাখাসহ নানান পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। অনেকে দুহাতে পণ্য নিয়ে ফেরি করছেন মুখরোচক খাবার।

অন্যদিকে সকাল সাড়ে ৭টায় সিআরবি শিরিষতলায় নববর্ষ উদযাপন পরিষদের বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয় কৃষ্টি নামের একটি সংগঠনের যন্ত্রসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। সেখানে বিকেল ৩টায় সাহাব উদ্দিনের বলী খেলা এবং দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

এছাড়া নগরজুড়ে সরকারীভাবে কিংবা বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে শোভাযাত্রা, চিরায়ত গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন সংস্কৃতি, মঙ্গল শোভাযাত্রা, নাচ, আবৃত্তি, জাদু প্রদর্শনী, বলিখেলা, গুণীজন সম্মাননা, মূকাভিনয়, নাটক, নৃত্যনাট্যসহ বর্ষবরণের জন্য বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয়েছে।
 

এদিকে যুদ্ধাপরাধীসহ দেশ থেকে সকল অশুভ শক্তি দ‍ূর করার গড়ার প্রত্যয় নিয়ে চট্টগ্রামে চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করেছেন।

এছাড়া লালদীঘি মাঠে বর্ষবরণ পরিষদ, চট্টগ্রাম, শিশু একাডেমী, শিল্পকলা একাডেমী, চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ফুলকিসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বর্ষবরণে আয়োজন করেছে বর্ণাঢ্য আয়োজনের।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবও সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বর্ষবরণের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

এদিকে বাংলা বছর ১৪২০ সালকে বরণ করতে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি প্রাঙ্গণে (বাওয়া স্কুল মাঠ) চতুর্দশ বারের মতো উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলা বর্ষ বিদায় ও বরণ সম্মিলন পরিষদ। অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্য প্রয়াত ভৌত বিজ্ঞানী প্রফেসর ইমেরিটাস ড. জামাল নজরুল ইসলামকে।

এদিকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নগরীতে পুলিশ প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, ডিসি হিল এবং সিআরবিকে কেন্দ্র করে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। প্রায় দেড় হাজার অতিরিক্ত পুলিশ নগরীতে দায়িত্ব পালন করছেন।

পুলিশের পাশাপাশি ৠাব সদস্যরাও নগরীতে টহল দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মোস্তাক আহমেদ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন