মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৩

বাংলা নববর্ষের শ্লোগানঃ রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবিকে আরো জোরালো করতে বাংলা বর্ষবরণে এবারের সস্নোগান নির্ধারণ করা হয়েছে 'রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ'।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ও শিল্পী নিসার হোসেন জানান, গণজাগরণ মঞ্চের দাবির সঙ্গে একাত্ততা প্রকাশ করে এবার মঙ্গল শোভাযাত্রায় এই সস্নোগান নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মঙ্গল শোভাযাত্রার নেতৃত্বে থাকবে বরাবরের মতই চারুকলা অনুষদ। চাইলে এতে গণজাগরণ মঞ্চের তরুণরা অংশগ্রহণ করতে পারবে।
তিনি বলেন, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল ফোকাসটি থাকবে সাপ সাদৃশ্য একটি প্রকা- হিংস্র প্রাণীর ওপর। যার মাথাটি হবে একটি পরিচিত রাজাকারের মাথা এবং গলায় থাকবে ফাঁসির দড়ি বাঁধা।

স্বাধীনতার ৪২ বছর পর হলেও এই প্রাণীর হিংস্র ও রক্তাক্ত থাবা থেকে দেশ এবং দেশের শিল্প ও সংস্কৃতিকে বাঁচাতে অসামপ্রদায়িক চেতনার বাঙালির যে পুনর্জাগরণ ঘটেছে এবং তারাই এবার ওই প্রাণীর গলায় ফাঁসির দড়ি ঝোলাতে চলেছে সেটিও সিম্বল হিসেবে দেখানো হবে। তিনি বলেন, এবার এই মোটিফটি দেশের সব মঙ্গল শোভাযাত্রায় ব্যবহারের জন্য পাঠানো হবে।
সারাদেশে যেন এবার একই থিম ও একই মোটিফ নিয়ে নববর্ষকে বরণ করা হয় সে জন্য জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করারও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
তাছাড়া এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার ২৫ বছরপূর্তি হতে চলেছে বলেও গোটা দেশের সব মঙ্গল শোভাযাত্রা এক থিমে করার জোর চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় হিংস্র প্রাণীটি ছাড়া আমাদের লোকজ শিল্পের আরো নানা মোটিফ থাকবে।
এরমধ্যে বাঘ, পাখি ছাড়া চারুকলারই শিল্পী মরণ চাঁদ পালের তৈরি মাটির রিকসাও রাখা হবে।
তিনি বলেন, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সম্প্রদায়, নির্বিশেষে নববর্ষ বাঙালির আপন উৎসব। আর এ উৎসবটিই এখন আমাদের দোরগোড়ায়।
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃস্টানের মিলিত বাঙালি জাতির অসামপ্রদায়িক চেতনার এ উৎসবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সব নরনারী বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলুন 'যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ চাই'।
নিসার হোসেন আরো বলেন, আবহমানকাল ধরে বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসা বর্ষবরণের এ উৎসবকে বর্ণিল আয়োজনে বরণ করে নিতে এবারো ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে চারুকলায়।
চারদিকেই সাজ সাজ রব। মাস্টার্স ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চারুকলার সব শিক্ষার্থীই এখন সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করে চলেছে।
তিনি বলেন, প্রতি বছরই চারুকলা উৎসবটি করে থাকে কোন রকম স্পন্সর ছাড়াই। এবারো তার ব্যত্যয় ঘটছে না। তবে উৎসবটি আবার সফলভাবে সম্পন্ন করতে মোটা অংকের বাজেটও লাগে।
তা সংগ্রহ করতেই আপাতত শিক্ষার্থীরা বাঙালি সংস্কৃতির নানা মোটিফ রং_তুলির অাঁচড়ে তুলে ধরছে মাটির সরায়, ক্যানভাসে ও মুখোশে।
আমাদের শিক্ষকদের কাছেও শিক্ষার্থীরা রং_তুলি ও পেপার পাঠিয়েছে। অনেক শিক্ষক ইতোমধ্যে ছবি এঁকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষকদের অাঁকা ছবি বিক্রি করেও উৎসবের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
অধ্যাপক নিসার হোসেন তাই বাঙালি সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী আপাদমস্তক বাঙালিদের কাছে দাবি করেন তারা নববর্ষের এই উৎসবকে সার্থক করে তুলতে তাদের ও শিক্ষার্থীদের অাঁকা ছবি, সরা, মুখোশ এবং কাগজ ও ফোম দিয়ে তৈরি পাখি ক্রয় করে ফান্ড তৈরিতে সহায়তা করবেন।
এ প্রসঙ্গে ১২তম ব্যাচের ছাত্র মাসুম বলেন, শিক্ষকদের জলরংয়ের চিত্রকর্ম সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আরো বেশি দামের চিত্রকর্মও রয়েছে। আর শিক্ষার্থীদের অাঁকা ছবি এক হাজার ও পাঁচশ' টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে।
এছাড়া লোকজ মোটিফ সম্বলিত সরার মধ্যে ছোট সরা ২শ' টাকা এবং বড় সরা ৫শ' থেকে ৮শ' টাকা করে আর মুখোশ ৬শ' থেকে ৭শ' টাকা, পাখি বিক্রি করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন