শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৩

জামায়াত সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা: হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের সুযোগ নিয়ে জামায়াত-শিবির যাতে কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে, সে জন্য ওলামা-মাশায়েখদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “৪০ বছরে তারা (জামায়াত) শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও শাস্তি নিয়ে তারা আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। আমার ভয় হয়, আপনাদের সঙ্গে মিশে সুযোগ নিয়ে তারা কোনো অঘটন ঘটায় কিনা।”


তিনি বলেন, “তারা (জামায়াত) যাতে কোনো ঘটনা না ঘটাতে পারে, সে জন্য আপনাদের সচেতন থাকতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গণভবনে কওমী মাদ্রাসার ওলামা-মাশায়েখদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তাদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখানে থাকতে নবী রসুল (স.) ও পবিত্র ধর্ম নিয়ে কেউ কটাক্ষ করতে পারবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

এই সাক্ষাতের সময় ওলামা-মাশায়েখদের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।

এ দাবিগুলো হচ্ছে- মহানবীকে (স.) কটূক্তিকারী চিহ্নিত বাকি ব্লগারদের গ্রেফতার এবং ধর্ম অবমাননাকারী ব্লগ, ফেসবুক পেইজ, ফেসবুক আইডি ও ওয়েবসাইটসমূহ বন্ধ করতে হবে; সংসদের আগামী অধিবেশনে মহানবী (স.) মর্যাদা সংরক্ষণ আইন পাস করতে হবে; দেশের বিভিন্নস্থানে গ্রেফতার হওয়া কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, আলেম-ওলামা, ইমাম-মুয়াজ্জীনদের নিশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; অনতি বিলম্বে কওমী মাদ্রাসার সনদের সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে; জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর সব বই নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করতে হবে; ওআইসি ঘোষিত মহানবীকে (স.) শেষনবী অস্বীকারকারী কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণাসহ তাদের জন্য আলাদা কবরস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে; পাঠ্যবইয়ে আপত্তিকর বিষয়গুলো বাতিল এবং ভুলগুলো সংশোধন করে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে হবে।
এই ৭ দফা দাবি তুলে ধরার সময় কওমী মাদ্রাসা, ওলামা-মাশায়েখদের পক্ষ থেকে বলা হয়- হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাতামিম আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর নেতৃত্বে দেশের আলেম সমাজ যে সব দাবি উত্থাপন করেছে, তা মেনে নেওয়াই হবে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। হেফাজতে ইসলাম যে সব দাবি উত্থাপন করেছে, যে সব কর্মসূচি দিয়েছে, তা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে দেওয়া দরকার।

এই কর্মসূচির বিপরীতে অন্য কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার প্রেক্ষিতে দেশ প্রকারান্তরে অস্থিতিশীলই হবে বলে আমরা মনে করি।

তাই, আগামী শনিবারের হরতাল আহ্বানকারীদের আপনার মাধ্যমে বলতে চাই, এই হরতাল প্রত্যাহার করুন। আপনারা দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবেন না। তাহলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।

এ সময় জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলে ধরা হয়। জামায়াতের সঙ্গে আপনাদের পার্থক্য রাজনৈতিক। কিন্তু আমাদের পার্থক্য ধর্মীয় মতাদর্শিক। যদি কোনো কারণে আপনাদের পার্থক্যের মীমাংসা হয়ে যায়। আপনারা মিলে যান, কিন্তু আমাদের তরফ থেকে মেশার কোনো সুযোগ নেই।

প্রধানমন্ত্রী ওলামাদের বক্তব্য শোনার পর জবাবে বলেন, “কওমী মাদ্রাসা কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনের রিপোর্ট আসছে। আপনারা সবাই একমত হলে কওমী মাদ্রাসার সনদে স্বীকৃতি দেওয়া হবে।”

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ইসলাম ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা, কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ তাদের দেওয়া ৭ দফা দাবির বিষয়গুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন