মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০১৩

হার্ডলাইনে সরকার- মৌলবাদীদের মূল উৎপাটনের নির্দেশ

শর্তসাপেক্ষে লংমার্চ, নইলে বাধা দেয়া হবে ॥ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক
জনকণ্ঠ, তপন বিশ্বাস ॥ রাজশাহীর পুলিশের ওপর আক্রমণের পর অগণতান্ত্রিক সকল কর্মসূচীর বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার। তবে দেশে গণতান্ত্রিক কোন কর্মসূচীতে সরকার বাধা দেবে না। একই সঙ্গে মৌলবাদীদের মূল উৎপাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইমলামের লংমার্চ পালনে কিছু শর্ত দেবে সরকার। শর্ত না মানলে তাদের এই কর্মসূচী করতে দেয়া হবে না। সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আগামী ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার তাদের কিছু শর্ত দেবে। সরকারের দেয়া শর্ত মানলে হেফাজতে ইসলামকে লংমার্চ করতে সরকারের তরফ থেকে কোন বাধা দেয়া হবে না। আর শর্তগুলো না মানলে দেশের যেখানে জমায়েত হবে সেখানে তাদের থামিয়ে দেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সেখানেই বাধা দেবে।

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, তাদের কর্মসূচীর দিনক্ষণ পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ তাদের নির্ধারিত ৬ এপ্রিল লংমার্চ কর্মসূচী পালন করা যাবে না। হেফাজতে ইসলামকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ অবলম্বন করে কোন কর্মসূচী দেয়া যাবে না। ধর্মের নামে দেশে যে সহিংসতা চলছে তা প্রতিরোধের দাবি তুলতে হবে। তাদের কর্মসূচী কোন অবস্থায় এই সহিংসতার পক্ষে হতে পারবে না।

বৈঠকে বলা হয়, সরকার ইসলাম বা ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের কোন অবস্থায় ছাড় দেয়া হবে না। ভবিষ্যতে যাতে এই অপপ্রচার বন্ধ করা যায় সে লক্ষ্যে জনসচেতনতা বাড়ানো হবে। সে লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন টেলিভিশন ও মিডিয়ায় সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হবে। পাশাপাশি ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধেও মিডিয়ায় প্রচার চালানো হবে। এ কাজে জড়িত সকল ব্লগ বন্ধ করে দেয়া হবে। সূত্র জানায়, ধর্মের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা দেশকে অস্থিতিশীল করতে সারাদেশে সহিংস ঘটনা চালানোর জন্য জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ব্যাপক টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছে।

রাজশাহীসহ সারাদেশের মৌলবাদীদের মূল উৎপাটনের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

দুপুর দেড়টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষে মহীউদ্দীন খান আলমগীর, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লাহ খান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই বৈঠক শেষ হয়।

মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, বাংলাদেশে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর মতবিনিময়ের জন্য দলীয় মন্ত্রী ও নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি।

সোমবার সকালে রাজশাহী নগরীর শালবাগান এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালায় ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। এ সময় এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত ও তাঁর কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নেয়া হয়। এ ছাড়া তাঁদের হামলায় শফিকুল ইসলাম, লতিফুল হায়দার ও জাকির হোসেন নামে তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।

এই হামলা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাজশাহীতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তা কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। এ কারণে রাজশাহীসহ সারাদেশের মৌলবাদীদের মূল উৎপাটনের নির্দেশ দিয়েছি।’

৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ কর্মসূচী প্রসঙ্গে মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাদের লংমার্চ কর্মসূচী যদি শান্তিপূর্ণ হয়, তাহলে তাতে বাধা দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে লংমার্চ শান্তিপূর্ণভাবে আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মহীউদ্দীন খান আলমগীর জানান, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আইন মন্ত্রণালয়ে লংমার্চ কর্মসূচীর বিষয়ে সরকারের অবস্থান, করণীয় এবং সংগঠকদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এর আগে বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষ থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অভিমুখী লংমার্চ কর্মসূচীতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না হলে সরকার তাতে কোন বাধা দেবে না। তবে শান্তিশৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।

তবে তখন সাংবাদিকদের কাছে কোন ধরনের বৈঠকের কথা অস্বীকার করেন হানিফ। জামায়াত-শিবিরকে ‘ফ্যাসিস্ট’ আখ্যায়িত করে হানিফ বলেন, তারা কোন রাজনৈতিক দল নয়। তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। ফলে সরকার তাদের যে কোন ধরনের তা-ব শক্ত হাতে দমন করবে।

ব্রিফিংয়ে ১৮-দলীয় জোটের ডাকা হরতাল প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেন, ‘তারা অযৌক্তিকভাবে এ হরতাল আহ্বান করেছে। আমাদের কাছে তথ্য এসেছে, রবিবার রাতে গুলশানে বিএনপির কার্যালয়ে গুলির ঘটনাটি তারা নিজেরাই ঘটিয়েছে। জনসমর্থন আদায়ের জন্য তারা এটা করেছে। এসব দুষ্কৃতকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন