মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

শ্রমজীবী নারীই পারবে নারীর অধিকার, মর্যাদা এবং গণতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতা সমুন্নত রাখতে

মনজুরুল হক
দেশে এখন ‘দফা’র জয়জয়কার! প্রথমে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ৬ দফা। এরপর হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা এবং সর্বশেষ আহলে সুন্নতে ওয়াল জামা’আত-এর ১২ দফা। সরকারের নিজস্ব যে কর্মসূচি আছে যা দিয়ে সরকার চলে সেই সব সরকারি আইন বা ‘দফা’ এখন শিকেয় তুলে রেখে এই ৩১ দফা নিয়েই সরকারকে দেশ চালাতে হবে! ব্যাপারটা আসলে এমন নয়। শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের ৬ দফা মূলত যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের শাস্তি এবং জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার দাবি।
এর সঙ্গে রয়েছে আরো চারটি সামাজিক দাবি। এই দাবি তথা শাহবাগ গণজাগরণকে যারা প্রথমে তেমন একটা আমলেই আনেননি তারা হঠাৎই দেখলেন শাহবাগ কীভাবে যেন সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে গাভর্নিং পজিশনে চলে এসেছে। সেটা সরকার এবং সরকারের বাইরের কারো মনঃপূত হয়নি। বিশেষ করে জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিটি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে জামাত-শিবিরের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত মহল নড়েচড়ে বসেন। তাদেরই ইন্ধনে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম নামের গোষ্ঠী। এদের ৬ তারিখের লংমার্চ এবং শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ থেকে উঠে আসা ১৩ দফা সেই থেকে টক অব দ্য কান্ট্রি। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রিক মিডিয়ায় সেই থেকেই ১৩ দফা নিয়ে তোলপাড় চলছে।

প্রথমদিকে হেফাজতিরা জামাত-শিবির বিরোধী এমন প্রচারণা থাকলেও এখন আর কেউ বিশ্বাস করে না যে এরা শেষ পর্যন্ত পয়সার এ পিঠ-ও পিঠ। দুই-তিন লাখ মানুষের সমাবেশ এর আগে রাজধানী ঢাকা তথা বাংলাদেশ দেখেনি (যদিও হেফাজতের দাবি শত প্রতিবন্ধকতার পরও তাদের সমাবেশে লোক সংখ্যা ২০ লাখ হয়েছিল)। এই বিশাল সংখ্যক মানুষ সমাবেশ করে যে দাবি হাজির করলো তা নিয়ে সরকারের তরফে খুব সাবধানী মন্তব্য এসেছিল। বলা হয়েছিল তাদের কিছু কিছু দাবি মেনে নেয়া হবে। বলা হয়েছিল তাদের কিছু দাবি ইতোমধ্যেই মেনে নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ আইনমন্ত্রী ঘোষণা করলেনÑ ‘হেফাজতের ১৩ দফা মেনে নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না’। এবং এর পর পরই হেফাজতের আসল রূপ প্রকাশিত হতে শুরু করেছে। তারা প্রথমে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের প্রসঙ্গ না তুললেও এখন সরকার পতনের ডাক দিয়েছেন। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এই ‘নাস্তিক’ সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবে না। এবং এর পরই তত্ত্ব-তালাশ করে জানা গেলো হেফাজতে ইসলাম পুরোপুরি রাজনৈতিক অভিলাষ থেকেই তাদের এজেন্ডা তুলে ধরেছে এবং সেই লক্ষ্যে কাজও করে যাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে হেফাজতের ওই মহাসমাবেশের পেছনে রয়েছে শত শত কোটি টাকার ‘বেঁচাকেনা’। এবং সরকারের একাধিক মন্ত্রী এই টাকার খেলা নিয়ে প্রকাশ্যে বক্তব্যও দিয়েছেন।

‘ফেসবুক বাংলালিকস পেজ ও ইউটিউব বাংলালিকস পেজে এ সংক্রান্ত রেকর্ড আপ করা হয়েছে। টেলিফোন আলাপে দেখা গেছে, থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার উৎখাত ও লংমার্চের মাধ্যমে দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছে। জামাত নেতা হেফাজত নেতাদের গত চার তারিখের আগেই তাদের আমির আহমদ শফীকে ঢাকায় এনে লালগাহ মসজিদে রাখার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ অনুসারে কাজ হয়েছে। এ ছাড়া মতিঝিলে মঞ্চ তৈরিতে কতো টাকা লাগবে হোফজত নেতাদের কাছ থেকে তাও কথা বলে জেনেছেন জামাত নেতা। এ ছাড়া জামাতের আরেক নেতা হেফাজত নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, ৬ এপ্রিল (আজ) যেন মতিঝিলের মঞ্চ বন্ধ করা না হয়। জামাত নেতা বলছেন, ‘আপনারা আমির শফী সাহেবকে ৬ তারিখ মঞ্চে আনবে না। সভা-সমাবেশ পথসভা করে সময় কাটিয়ে পরদিন মঞ্চে আনবেন। ওই দিন পর্যন্ত সমাবেশ অব্যাহত রাখবেন।’ এ সময় হেফাজত নেতা বলেন, ‘আপনি মির্জা ফখরুল সাহেবের সঙ্গে কথা বলে রাখবেন। ওই দিন কোনো হরতাল বা অন্য কোনো কর্মসূচি যেন না দেয়।’ এদিকে আজকের লংমার্চকে সামনে রেখে শুক্রবার বিকাল ও পৌনে ৫টায় রাজধানীর রেডিসন হোটেলে উগ্রবাদী এক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। সূত্র জানিয়েছে, লংমার্চে অপকৌশল নির্ধারণ করতেই মুজাহিদ কমিটির ও নেতার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে লংমার্চ থেকে বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটতে পারে। জানা গেছে, সম্প্রতি একটি পত্রিকা অফিসে জামাত নেতার ও তাদের পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্য, হেফাজত নেতা ও এক সম্পাদকের বৈঠক হয়েছে।

সেই বৈঠকের পরই প্রায় শতকোটি টাকার ভাগবাটোয়ারা হয়েছে জামাতপন্থী উগ্রবাদী দলগুলোর নেতাদের মধ্যে। পুলিশের নজরদারি থাকলেও সেখানে গোপনে একটি বৈঠক হয় গত ১১ মার্চ। এই বৈঠকটাতেই মূলত হেফাজতের অন্যতম নীতিনির্ধারক বৈঠক। এখানে টাকা থেকে শুরু করে কিভাবে লংমার্চ হবে, কিভাবে নৈরাজ্য চালানো হবে সব ধরনের সিদ্ধান্ত হয়। হেফাজতের ১৩ দফার মাত্র দুটি দফা নিয়ে এখন সারা দেশে তোড়পাড় চলছে। ৪ নম্বর দাবিতে বলা হচ্ছেÑ ‘ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।’ এবং ১৩ নম্বর দাবিতে বলা হচ্ছেÑ ‘অবিলম্বে প্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।’

১৩ নম্বর দাবিটিতেই আসলে প্রকাশ হয়ে পড়েছে যে হেফাজতের সঙ্গে জামাত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে! ৬ এপ্রিলের আগে দেশের কোথাও হেফাজতের কোনো নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাহলে তারা আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। বলছেন কাদের মুক্ত করার জন্য? কাদের মামলা প্রত্যাহারের জন্য? এতে কি এটাই প্রমাণ হয় না যে তারা মূলত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আটককৃত জামাতের নেতাদের মুক্তি চাইছেন? তাদের মামলা প্রত্যাহার চাইছেন! ব্যাপারটা বোধকরি এখন অনেকটাই প্রকাশ হয়ে গেছে। আর ৪ নম্বর দাবি প্রশ্নে দেশের নারীরা ইতোমধ্যেই প্রতিবাদী হয়েছেন। ফুঁসে উঠেছেন। প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিবাদী নারীরা রাজপথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিক কাজ করে পোশাক শিল্পে। তারা তাদের কাজের দাবি তথা বাঁচার দাবিতে আগামী কিছু দিনের মধ্যেই লাখ লাখ নারীর সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। হেফাজতের দাবিনামা নিয়ে যখন দেশের সুশীল সমাজ প্রচার মাধ্যমে প-িতি করছেন ঠিক সেই সময়ে যারা ঘরের বাইরে এসে নিজেদের এবং বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছেন সেই নারীরা নিজ গরজেই রাজপথে নেমেছেন। এবং এটা নিশ্চিত যে তারা তাদের বাঁচার অধিকার সমুন্নত রাখবেনই।

নিন্দুকরা বলছে হেফাজতের একাংশের সঙ্গে সরকারের ‘আঁতাত’ হয়েছে। তারা সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবেন না! নিন্দুকরা আরো বলছে হেফাজত যেহেতু জামাত-শিবির বিরোধী তাই হেফাজত সমাবেশ করে ক্ষমতা প্রদর্শন করলে তা কার্যত জামাত-শিবিরকে শক্তিহীন করবে! কিন্তু হেফাজতে ইসলাম এর আসল রূপ কী সেটা নিশ্চয়ই সরকারের নীতিনির্ধারক মহল এতোদিনে অবগত হয়েছেন। সরকার অপেক্ষায় ছিল যে, হেফাজতের বিরোধী হিসেবে খ্যাত আর এক গোষ্ঠী আহলে সুন্নতে ওয়াল জামা’আত ২০ তারিখে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ করে হেফাজতকে একটা ‘শিক্ষা’ দিতে পারবে। তারা গত ২০ তারিখে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ করেছেনও। এবং তারাও ১২ দফা দাবি পেশ করেছেন। যা মোটামুটি হেফাজতের দাবির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি করা যায়। এখনই এই আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’আত সম্পর্কে চূড়ান্ত কথা বলার সময় আসেনি। তবে এই ‘কৌশল’ও যে ব্যুমেরাং হয়ে যাবে না সেই গ্যারান্টি কোথায়? ফিতনা এবং ফিরকা বিষয়ে এদের মতদ্বৈধতা থাকলেও কিছু কিছু কমন বিষয় একই। সমাজ, রাষ্ট্র, সমাজভাবনা, রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে এদের মধ্যে পার্থক্য তেমন একটা নেই। যেমন এদেরও ৪ নম্বর দাবি ‘নারীনীতি থেকে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী অংশ বাদ।’ তবে আহলে সুন্নতের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে ‘নাস্তিক, মওদুদী, ওহাবী, কাদিয়ানিসহ সকল ভ্রান্ত মতবাদের ইসলাম অবমাননাকর প্রকাশনা বাজেয়াপ্ত করা,’ ‘হরতাল বন্ধে জাতীয় সংসদে আইন পাস করা,’ ‘কওমি মাদ্রাসাকে অভিন্ন মাদ্রাসা শিক্ষানীতির আওতায় আনা,’ ‘তাবলিগ জামাতের আড়ালে জঙ্গিবাদী বিদেশী তালেবান গোষ্ঠীর দেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর নজরদারি,’ ‘সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ করা,’ এবং ‘দেশকে চলমান সংকট থেকে উত্তরণে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করা’ দাবিগুলো সরকারের রাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়।

কিন্তু দুই গোষ্ঠীই প্রায় একই ভাষায় প্রধান যে হুমকি দিয়েছেন তা হলোÑ ‘ক্ষমতায় থাকতে হলে এসব দাবি মেনেই থাকতে হবে, ক্ষমতায় যেতে হলে এসব দাবি মেনেই যেতে হবে।’ অর্থাৎ ক্ষমতায় থাকতে হলে বা ক্ষমতায় আসতে হলে এই দাবিসমূহ মেনেই আসতে বা থাকতে হবে! এবং এই দাবিটি বা হুমকিটি দেয়া হয়েছে সরকার এবং বিরোধী দলকে যারা ক্ষমতায় থাকতে এবং আনতে চায়। এখন তারা বুঝে দেখুক আধুনিক গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক আইন-কানুন দিয়ে রাষ্ট্র চালাবেন না হেফাজত বা আহলে সুন্নতের দাবিনামার ভিত্তিতে দেশ চালাবেন? তবে এই মীমাংসা কেবল সরকারই করবে তেমন নয়। এই মীমাংসা আসতে হবে সমাজে বিদ্যমান কোটি কোটি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। যা ইতোমধ্যে প্রতিবাদী রূপ নিয়ে আসতে শুরু করেছে। এই বিভিন্ন পক্ষকে তুষ্ট করার বিপদ নিয়ে এপ্রিল ৮, ২০১৩ তারিখ বিডি নিউজ ২৪ ডট কম-এ ড.আব্দুল মান্নানের নিবন্ধের কিছু অংশ তুলে দিয়ে লেখাটি শেষ করছি : ‘তবে এ মুহূর্তে সরকার যেটি করছে তা হলো, হেফাজতকে সম্পূর্ণভাবে এক ধরনের তোষামোদ বা তুষ্ট করা, ইংরেজিতে একে বলে অঢ়ঢ়বধংবসবহঃ, রাজনীতিতে তুষ্ট করার সংস্কৃতি খুবই বিপজ্জনক হতে পারে। তার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরতে চাই।

গত শতকের ত্রিশের দশকে জার্মানির হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রবাহিনীর সঙ্গে সম্পাদিত সকল চুক্তি বাতিল করে তাদের হারানো সাম্রাজ্য জবরদখল করা শুরু করেন। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, মিত্রবাহিনী, বিশেষ করে ব্রিটেন ও ফ্রান্স তার এ আগ্রাসী ভূমিকায় বাধা দেবে। কিন্তু সে সময় ফ্রান্সের সে মুরোদ ছিল না। আর ব্রিটেনের নেতৃত্ব ছিল একজন মেরুদ-হীন প্রধানমন্ত্রী নেভিল চ্যাম্বারলিনের হাতে। চ্যাম্বারলিনের নীতি ছিলÑ হিটলার ইউরোপে যা খুশি করুন, ব্রিটেনে হাত না দিলেই হলো। শুধু চ্যাম্বারলিন নন, ব্রিটেনের পুরো মন্ত্রিসভাই তখন হিটলারের সামনে নতজানু। তাদের একটাই কথা, ‘আমরা তো ভালো এবং নিরাপদেই আছি’। অযথা হিটলারের সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়ে আমাদের কী লাভ?

হিটলারও ব্রিটিশ সরকারের মনোভাব বুঝতে পেরে একটির পর একটি ইউরোপীয় দেশ দখল করার দিকে নজর দিলেন। এক সময় হিটলারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন চ্যাম্বারলিন। হিটলার তাকে জানালেন যে, তিনি যুদ্ধ করে কোনো দেশ দখল করবেন না। ফিরে এসে চ্যাম্বারলিন তার সভা পরিষদদের জানালেন, ‘এ লোকটার (হিটলার) ওপর আস্থা রাখা যায়। সে কথা দিয়েছে’। হিটলার সম্পর্কে চ্যাম্বারলিনের এটি ছিল এক চরম আত্মঘাতী উক্তি। জার্মান নেতা পরে অনেকটা বিনা বাধায় ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ দখল করে নিয়েছিলেন। পরের ইতিহাস সকলের জানা।

আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করছি। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর কাছে জামাতে ইসলামী দাবি জানালো কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। তখন রাজনৈতিকভাবে দুর্বল ভুট্টো তাদের দাবি মেনে নিলেন। তারপর তারা দাবি তুললো তাদের সকল নেতাকর্মীকে জেল থেকে মুক্তি দিতে হবে। সে দাবিও মেনে নেয়া হলো। এভাবেই পাকিস্তান ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছিল। ১৯৭৭ সালে সাধারণ নির্বাচনে ভুট্টোর পিপলস পার্টি জামায়াতসহ অন্যান্য বিরোধী দলের মোর্চা পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের (পিএনএ) বিরুদ্ধে বিপুল ভোটে বিজয়ী হল। পিএনএ ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুললো। আন্দোলন রাজপথে গড়ালো। পিএনএ নতুন নির্বাচন চায়। ভুট্টো তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন।

১৯৭৭ সালের ৪ জুলাই ভুট্টো পিএনএর সঙ্গে নতুন নির্বাচনের চুক্তি করলেন। সেদিন মধ্যরাতের পর জেনারেল জিয়াউল হকের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করলো। গ্রেপ্তার হলেন ভুট্টো। হুকুমের আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এক তামাশাপূর্ণ বিচারের মাধ্যমে দুবছর পর তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হলো। ভুট্টো ও চ্যাম্বারলিন দুজনই প্রতিপক্ষের কূটচাল বুঝতে না পেরে যৌক্তিক কারণ ছাড়া তাদের তুষ্ট করতে চেষ্টা করেছিলেন। তারা প্রতিপক্ষের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছিলেন।’

২১ এপ্রিল, ২০১৩

মনজুরুল হক : কলাম লেখক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন