শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৩

রাজনৈতিক দল ও সংঘশক্তির প্রতি জনগণের সবিনয় নিবেদন

নীলকান্ত চৌধুরী
বাংলাদেশের সর্বত্র পৈশাচিকতার যে দানবীয় নৃত্য আমাদেরকে চরম হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছে। প্রবাসে বেদনাবিধুর হƒদয়ের আর্তি প্রকাশে তাই রবীন্দ্রনাথের স্মরণাপন্ন হলাম। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কালান্তর’ প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে তাঁর নিজস্ব ভাষায় তুলে ধরছি- ‘উদ্দাম নিষ্ঠুরতা আজ ভীষণাকার মৃত্যুকে জাগিয়ে তুলছে সমুদ্রের তীরে তীরে; দৈত্যেরা জেগে উঠছে মানুষের সমাজে, মানুষের প্রাণ যেন তাদের খেলার জিনিস’ (পৃ. ৩৯৮-৩৯৯)। আমাদের বোঝা দরকার যে, ‘যেটা অন্যায় সেটা প্রথাগত, শাস্ত্রগত বা ব্যক্তিগত গায়ের জোরে শ্রেয় হতে পারে না’ (পৃ. ১৫)। আমাদের রাজনীতিবিদেরা ও সাধারণ জনতা সেটা মনে হয় সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করছেন। চারিদিকে একচোখা দৈত্য-দানবের হুঙ্কারে জাতির আজ ত্রাহি মধুসূদন দশা। ‘আমাদের দেশে যাঁরা সত্যের ব্রত গ্রহণ করবার অধিকারী, এবং সেই ব্রতকে প্রাণ দিয়ে যাঁরা পালন করবার শক্তি রাখেন, তাঁদের সংখ্যা অল্প বলেই দেশের এত দুর্গতি’ (পৃ. ৩১৫)।


লক্ষ্যণীয় যে, পশ্চাত্যের প্রশংসায় রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘প্রতিদিন জয় করেছে সে জ্ঞানের জগতকে; কেননা তার বুদ্ধির সাধনা বিশুদ্ধ, ব্যক্তিগত মোহ থেকে নির্মুক্ত’ (পৃ. ১৪)। তিনি আরো বলেছেন, ‘জ্ঞানের ক্ষেত্রে ইউরোপ মানুষের মোহমুক্ত বুদ্ধিকে শ্রদ্ধা করেছে এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বীকার করেছে তার ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে’ (পৃ. ১৯)। অথচ আমাদের জ্ঞানীয় চেতনার বিকাশ না ঘটে আমাদের অন্ধত্ব প্রকট হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মোহমুগ্ধতায়। আমাদের বুদ্ধিজীবী ও তথাকথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন তাঁদের ‘বুদ্ধির সাধনা বিশুদ্ধ, ব্যক্তিগত মোহ থেকে নির্মুক্ত’? আজ তাঁরা বিভিন্ন দলীয় আদর্শের ধ্বজাধারী হয়ে উটপাখি কিংবা তোতাপাখির মতোই হয়ে পড়েছেন। সত্য, ন্যায় আর কল্যাণবোধ দ্বারা তাঁরা উদ্বুদ্ধ নন, লেজুড়বৃত্তি আর চাটুকারিতা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হয়ে পড়েছে। কারণ ‘নিষ্কর্মণ্য যে তাহারই অহোরাত্র স্তবের দরকার হয়। যে ধনীর কীর্তিও নাই, হাতে কোনো কর্মও নাই, চাটুকারের প্রয়োজন সব চেয়ে তাহারই অধিক, নইলে সে আপন জড়ত্বের বোঝা বহিবে কেমন করিয়া? তাহাকে পরামর্শ দেওয়া উচিত যে, ‘তোমার এই বনেদি স্থাবরত্ব গৌরব করিবার জিনিস নয়, যেমন করিয়া পার একটা কর্মে লাগিয়া যাও’। কিন্তু এ স্থলে পরামর্শদাতার কাজটা নিরাপদ নহে, বাবুর পারিষদবর্গ তখনই হাঁ-হাঁ করিয়া আসিবে। সুতরাং বকশিসের প্রত্যাশা থাকিলে বলিতে হয়, ‘হুজুর, আপনি যে সনাতন তাকিয়া ঠেসান দিয়া বসিয়াছেন উহার তুলার স্তূপ জগতে অতুল, অতএব বংশের গৌরব যদি রাখিতে চান তো নড়িবেন না’ (পৃ. ২৭)। রবীন্দ্রনাথের এ উপদেশ আমাদের মোসাহেবেরা খুবই দক্ষতার সাথে প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। আমাদের দৈনন্দিন রাজনৈতিক চর্চায় তা প্রতিনিয়ত পরিলক্ষিত হয়।

আজ যারা হরতাল করতে কিংবা হরতাল প্রতিহত করতে রাজপথে নামে, ব্যক্তিগত জান-মাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে, তারা নবীন প্রাণশক্তির প্রতিনিধি। সরকার এ যুবশক্তিকে কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আর তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয়, ‘কাজ করিবার জন্যই তাহাদের জš§, কিন্তু কাজের ক্ষেত্র বন্ধ করিবার কাজেই তাহারা কোমর বাঁধিয়া উঠিয়া পড়িয়া লাগে’ (পৃ. ৩৪)। এটা নবপ্রজšে§র প্রাণশক্তির অপচয়। এর কারণ একদিকে তাদের কর্মযজ্ঞে মেতে ওঠার সুযোগের অভাব, অপর দিকে রাজনীতির নামে নানা অপকর্মে তাদেরকে ব্যবহারের প্রবণতায় আজ নতুনপ্রজš§ সৃজনে নয়, ধ্বংসের আর প্রলয়ের উৎসবে যোগ দিতে কুণ্ঠিত হয় না। আর সেটাই জাতির জন্য চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানেই আমাদের নৈতিক দায় প্রকট হয়ে ওঠে, প্রকট হয়ে ওঠে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতা।

সে যাই হোক, ‘সমাজে দয়ার চেয়ে দায়ের জোর বেশি’ (পৃ. ৪৫)। অথচ আমাদের রাজনীতিবিদরা ক্ষমতার মদমত্ততায় ধরাকে সরা জ্ঞান করে থাকেন। তাঁদের নৈতিক রাজনৈতিক দায়কে অস্বীকার করে, জনসাধারণকে দয়া প্রদর্শনের প্রচেষ্টা চালান। আদতে তারা যে জনগণের সেবক, সেটা ভুলে তারা বনে যান জনগণের শাসক কিংবা শোষক। ক্ষমতায় আরোহন করে তারা অচিরেই ভুলে যান, ‘যার আরম্ভ আছে তার শেষও আছে, ন্যায়শাস্ত্রে এই কথা বলে’ (পৃ. ৫৫)। আর তাই আজ যাঁরা ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ, তারাই আবার একদিন জনতার কাতারে দাঁড়াবেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের রাজনৈতিক নেতারা ইতিহাস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেন না, দেশ ও জনগণের সেবক না হয়ে তাঁরা হয়ে ওঠেন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে মনে করেন তাদের পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি।

‘আমাদের সমাজ লোক-সাধারণকে যে শক্তিহীন করিয়া রাখিয়াছে এইখানে সে নিজের শক্তিকে অপহরণ করিতেছে। পরের অস্ত্র কাড়িয়া লইলে নিজের অস্ত্র নির্ভয়ে উচ্ছৃঙ্খল হইয়া ওঠেÑ এইখানেই মানুষের পতন’ (পৃ. ৪৯)। কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদেরা গায়ের জোরে দেশ ও জনগণকে জিম্মি করে প্রভুসুলভ আচরণের দ্বারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির প্রচেষ্টা চালান। তারা বুঝে উঠতে পারেন না যে, ‘প্রভুত্ব জিনিসটা একটা ভার, মানুষের সহজ চলাচলের সম্বন্ধের মধ্যে একটা বাধা। এইজন্য প্রভুত্বই যত-কিছু বড়ো বড়ো লড়াইয়ের মূল। বোঝা নামাইয়া ফেলিতে যদি না পারি, অন্তত বোঝা সরাইতে না পারিলে বাঁচি না। পাল্কির বেহারা তাই বারবার কাঁধ বদল করে। মানুষের সমাজকেও এই প্রভুত্বের বোঝা লইয়া বারবার কাঁধ বদল করিতে হয়Ñ কেননা তাহা তাহাকে বাহির হইতে চাপ দেয়। বোঝা অচল হইয়া থাকিতে চায় বলিয়াই মানুষের প্রাণশক্তি তাহাকে সচল করিয়া তোলে’ (পৃ. ৫২)। আর সেজন্যেই নির্বাচনের সুযোগ পেলেই জনগণ সেটা প্রমাণ করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের রাজনীতিবিদেরা ক্ষমতায় গেলে সেটা ভুলে যান।

‘আমাদের অর্থনীতি, কর্মনীতি ও শ্রেয়োনীতিতে প্রকাশ পেয়েছে নানা ছিদ্র, আমাদের রাষ্ট্রনীতিতে হালে দাঁড়ে তালের মিল নেই। দুর্ভাগ্য যাদের বুদ্ধিকে অধিকার করে, জীর্ণ দেহে রোগের মতো, তাদের পেয়ে বসে ভেদবুদ্ধি; কাছের লোককে তারা দূরে ফেলে, আপনকে করে পর, শ্রদ্ধেয়কে করে অসম্মান, স্বপক্ষকে পিছন থেকে করতে থাকে বলহীন; যোগ্যতার জন্য সম্মানের বেদি স্থাপন করে যখন স্বজাতিকে বিশ্বের দৃষ্টিসš§ুখে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে মান বাঁচাতে হবে তখন সেই বেদির ভিত্তিতে ঈর্ষান্বিতের আত্মঘাতক মূঢ়তা নিন্দার ছিদ্র খনন করতে থাকে, নিজের প্রতি বিদ্বেষ করে শত্র“পক্ষের স্পর্ধাকে প্রবল করে তোলে’ (পৃ. ৩৮৩)। আমাদের ক্ষমতাসীন আর বিরোধী দলের কর্মকাণ্ডে তারই শতসহস্র উদাহরণ রয়েছে।

সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামায় দেখা গিয়েছে ‘যারা গোড়ায় কোপ দেয় তারাই আগায় জল ঢালিবার জন্য ব্যস্ত’ আর ‘সব দোষ নন্দ ঘোষ’-এর উপর চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। যাই হোক, আমাদের দেশের লোকজন ভয়ে কিংবা লোভে ন্যায়ের পক্ষে সাক্ষ্য দেয় না, বরং ন্যায়ের বিরুদ্ধেই সাক্ষ্য দিয়ে থাকে। ইতিহাসে তার অসংখ্য নজির রয়েছে, সাম্প্রতিক সময়েতো তার অভাব নেই। কিন্তু আশার কথা যে ডিজিটাল যুগে তথ্য-প্রমাণাদি যে হারে সংরক্ষিত হচ্ছে তাতে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাঁদের অপকর্মের পরিণাম কী হতে পারে সেটা এখন থেকে ভাবা উচিত। যে পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন, সে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন তাঁরা চান না, এবং সাথে সাথে ভুলে যান পরিবর্তন একটি অবধারিত প্রক্রিয়া আর সেই প্রক্রিয়ায় একদিন ক্ষমতার রদবদল হবে, কেউ চিরকাল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থাকতে পারে না।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দল কখনই ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নয়। গণতান্ত্রিক পন্থায় নয়, স্বৈরতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে চায়। যদিও ‘পথের চেয়ে অপথ মাপে ছোটো; কিন্তু সেটাকে অনুসরণ করতে গেলে লক্ষ্যে পৌঁছনো যায় না, মাঝের থেকে পা দুটোকে কাঁটায় কাঁটায় ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়। যে জিনিসের যা দাম তা পুরো না দিতে পারলে দাম তো যায়ই, জিনিসও জোটে না’ (পৃ. ১৯৮)। গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ ‘পরমতসহিষ্ণুতা’র পথে না হেঁটে যদি আমাদের রাজনীতিবিদরা গায়ের জোরে চলতে থাকেন, তবে ‘গণতন্ত্র’-এর যথার্থ দাম পরিশোধ না করার ফলে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে হারিয়ে যায় বারবার। আমাদের তথাকথিত গণতন্ত্র হয়ে ওঠে পারিবারিক ও দলীয় স্বৈরতন্ত্র।

রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের যাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হয়ে ‘যারা অবিচার সহ্য করতে বাধ্য হয় তাদের মনে সম্ভ্রম জাগে না, অশ্রদ্ধা জাগে’ (পৃ. ৩৮২) রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি। আমাদের রাজনীতিবিদেরা তা ভুলে যান। ফলে তাঁদের অত্যাচার আর অবিচারে জনগণ তাঁদের উপর আস্থা হারিয়েছে এবং সাম্প্রতিক ভাষা ব্যবহার লক্ষ্য করলে অতি সহজেই তা চোখে পড়বে। ‘পলিটিকসে প্রথম থেকেই ষোলো-আনা প্রাপ্যের উপর চেপে বসলে ষোলো-আনাই খোওয়াতে হয়। যারা অদূরদর্শী কৃপণের মতো অত্যন্ত বেশি টানাটানি না করে আপস করতে জানে তারাই জেতে। ইংরেজের এই গুণ আছে, নৌকোডুবি বাঁচাতে গিয়ে অনেকটা মাল ইংরেজ জলে ফেলে দিতে পারে।ঃ রাষ্ট্রনৈতিক ব্যাপারে ইংরেজের সুবুদ্ধি বিখ্যাত; ইংরেজ সবখানির দিকে তাকিয়ে অনেকখানি সহ্য করতে পারে। এই বুদ্ধির প্রয়োজন যে আমাদের নেই, এ কথা গোঁয়ারের কথা; আখেরে গোঁয়ারের হার হয়ে থাকে’ (পৃ. ৩৩০)।

‘বাঙালি নৈয়ায়িক- বাঙালি অতি সূক্ষ্ম যুক্তিতে বিতর্ক করে, কর্ম উদ্যোগের আরম্ভ থেকে শেষ পর্যন্ত বিপরীত পক্ষ নিয়ে বন্ধ্যা বুদ্ধির গর্বে প্রতিবাদ করতে তার অদ্ভুত আনন্দ, সমগ্র দৃষ্টির চেয়ে রন্ধ্রসন্ধানের ভাঙন-লাগানো দৃষ্টিতে তার ঔতসুক্য! ভুলে যায় এই তার্কিকতা নিষ্কর্মা বুদ্ধির নিষ্ফল শৌখিনতামাত্র’ (পৃ. ৩৮৫)। লক্ষ্যণীয় যে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় অন্ধ আবেগে আমরা কতই না অমানবিক হয়ে উঠেছি। প্রকাশ্য দিবালোকে নির্মমভাবে মানুষ খুনে পৈশাচিকতায় মেতে উঠেছি। নানা যুক্তিতে গলদঘর্ম হচ্ছি। কিন্তু বুঝতে শিখিনি যে, ‘মানুষকে মানুষ বলে দেখতে না পারার মতো এতবড়ো সর্বনেশে অন্ধতা আর নেই। এই বন্ধন এই অন্ধতা নিয়ে কোনো মুক্তিই আমরা পাব না। যে মোহে আবৃত হয়ে মানুষের সত্য রূপ দেখতে পেলুম না সেই অপ্রেমের অবজ্ঞার বন্ধন ছিন্ন হয়ে যাক, যা যথার্থভাবে পবিত্র তাকে যেন সত্য করে গ্রহণ করতে পারি’ (পৃ. ৩৯৬-৩৯৭)- এই হোক আমাদের নতুন প্রজšে§র ব্রত। তবেই না জাতি কল্যাণের আলোকে স্নাত হয়ে বিকশিত হবে।

‘অন্যকে অপবাদ দিয়া আত্মপ্রসাদলাভের চেষ্টা অক্ষমের চিত্তবিনোদন, আমাদের তাহাতে কাজ নাই। যুগে যুগে আমাদের পুঞ্জ পুঞ্জ অপরাধ জমিয়া উঠিল, তাহার ভারে আমাদের পৌরুষ দলিত, আমাদের বিচারবুদ্ধি মুমূর্ষু- সেই বহু শতাব্দীর আবর্জনা আজ সবলে সতেজে তিরস্কৃত করিবার দিন। সš§ুখে চলিবার প্রবলতম বাধা আমাদের পশ্চাতে। আমাদের অতীত তাহার সম্মোহনবাণ দিয়া আমাদের ভবিষ্যতকে আক্রমণ করিয়াছে, তাহার ধূলিপুঞ্জে শুষ্কপত্রে সে আজিকার নূতন যুগের প্রভাতসূর্যকে ম্লান করিল, নব-নব অধ্যবসায়-শীল আমাদের যৌবনধর্মকে অভিভূত করিয়া দিলÑ আজ নির্মম বলে আমাদের সেই পিঠের দিকটাকে মুক্তি দিতে হইবে, তবেই নিত্য-সম্মুখগামী মহত মনুষ্যত্বের সহিত যোগ দিয়া আমরা অসীম ব্যর্থতার লজ্জা হইতে বাঁচিব’ (পৃ. ৮২-৮৩)- এ রাবীন্দ্রিক প্রত্যয়ে আমাদের আগামীর কর্মপন্থা উদ্ভাসিত হোক, জয় হোক মৃত্যুঞ্জয়ী চিরজাগরূক চিরসন্ধানরত মনুষ্যত্বের আমাদের প্রতিদিনের কর্ম-প্রচেষ্টায়। দেশ ও জনগণের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দল ও সংঘশক্তিগুলোর প্রতি আমাদের এই সবিনয় আবেদন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন