বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৩

তিন ব্লগারের মুক্তির দাবিতে ঢাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমাবেশ

ঢাকা: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগে গ্রেফতার তিন ব্লগারের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বুধবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদী সমাবেশ ও সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মার্স্টাসের শিক্ষার্থী সুব্রত অধিকারী শুভ, সাবেক শিক্ষার্থী মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজকে সোমবার দিনগত রাতে রাজধানীর পলাশী, ইন্দিরা রোড ও মনিপুরী পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ফায়দা লুটতেই সরকার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান তিন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে।

আটকদের মধ্যে সুব্রত শুভকে জগন্নাথ হলের রুম থেকে ডেকে নিয়ে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এই তিন সাহসী তরুণের মুক্তির দাবিতে তারা কখনই পিছপা হবেন না।


তিন ব্লগারের মুক্তির দাবিতে
সংবাদ সম্মেলন ব্লাগারদের

অপরদিকে, আটক তিন ব্লগার শাহবাগ গণজাগরণের গণআন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করেছেন ব্লগাররা। তাদের দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবিতে চলমান গণআন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন এই তিন ব্লগার।

ব্লগারদের অভিযোগ, গণজাগরণ আন্দোলনের বিরোধিতাকারী  হেফাজতে ইসলামকে তুষ্ট করতেই তিন ব্লগারকে আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লগারদের পক্ষ থেকে এ দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক, আরিফ জেবতিক, সাবেক ছাত্রনেতা বাকি বিল্লাহ, ব্লগার আবু মোস্তাফিজ ও পারভেজ আলম।

সংবাদ সম্মেলন থেকে আটক ৩ ব্লগারকে মুক্তির পাশাপাশি ‘আমার ব্লগ’-এর ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

ব্লগারদের আটকে সিপিবি’র নিন্দা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ তিন ব্লগারের আটকের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সিপিবি নেতারা আটক ব্লগারদের মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ‘কোনো নাগরিকের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া হলে তা যেমন প্রশ্রয় দেওয়া যায় না; তেমনি এ ধরনের কাজ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি। কিন্তু, একই সঙ্গে দেশের জন্য বড় বিপদ হলো- সাম্প্রদায়িকতা।’

নেতারা বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্লগারদের আটক করা হয়েছে। এটা সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি সরকারের উপহার। অন্যদিকে, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল গঠন, তাদের দমনের জন্য আইন সংশোধনসহ যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তা মুক্তচিন্তা চর্চার বিরুদ্ধে সরকারের একটি পশ্চাদমুখি পদক্ষেপ।’

সিপিবি নেতারা আরও বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে যারা পত্রিকায় মিথ্যা-বানোয়াট ছবি ও খবর প্রকাশ করে দেশব্যাপী প্রচার করেছে, তাদের আটক করে শাস্তি বিধান করাটা সরকারের জরুরি কর্তব্য।’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুধু তাই নয়, যারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়, বসতবাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়েছে, ভাঙচুর করেছে, লুটপাট করেছে তাদেরকে শক্ত হাতে দমন করা সরকারের সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য।’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ধারা রক্ষা করার জন্য জরুরি কর্তব্যের প্রতি নজর না দিয়ে সরকার সাম্প্রদায়িক শক্তিকে সন্তুষ্ট রাখার যে নীতি গ্রহণ করেছে, তা শুধু সরকার ও সরকারি দলের জন্যই আত্মঘাতী হবে না, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার পরিপন্থি’ বলেও মনে করেন সিপিবি নেতারা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন