শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৩

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ১১ ব্লগ বন্ধ, জামায়াতের ১টিও বন্ধ হয়নি

জনকণ্ঠ, ফিরোজ মান্না ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ১১টি ব্লগ বন্ধ করে দিয়েছে বিটিআরসি। জামায়াত-শিবির বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি এখানে বিবেচনা করা হয়নি। যে সব ব্লগ ধর্মীয় উন্মাদনার সঙ্গে যুক্ত সেই সব ব্লগ বন্ধ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি থেকে যখন যে নির্দেশ আসছে বিটিআরসি তা পালন করছে মাত্র। তবে বিটিআরসি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগগুলো সার্চ করে কমিটির কাছে রিপোর্ট দিচ্ছে।

বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন আহমেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ওয়েবসাইট ও ব্লগ বন্ধের বিষয়টি সম্পূর্ণ কমিটির বিষয়। আমরা কমিটির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও কমিটির নির্দেশের বাইরে কোন কাজ করা হচ্ছে না। তাছাড়া কাদের ব্লগ বা সাইট এই বিবেচনা নিয়ে আমরা কোন কাজ করছি না। জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ব্লগ কোন্টি আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্লগ কোন্টি এটা ধরে কোন ব্লগ বা সাইট বন্ধ করা হচ্ছে না। এটা আমাদের একটি সাধারণ নিয়ম। এর আগেও ফেসবুক ও ইউটিউব বন্ধ করা হয়েছিল যে নিয়মে সেই নিয়মেই কাজ চলছে।
বিষয়টি বিস্তারিত জানার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাঈন উদ্দীন ও বিটিআরসির চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোসের সঙ্গে বার বার যোগাযোগ করেও তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ব্লগ ও ওয়েবসাইট বন্ধের সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি বলেন, ওপর থেকে আমাকে একটি তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী ব্লগ ও ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছে। এখন এখানে কোন্ ব্লগ বা ওয়েবসাইট কোন্ পক্ষের আমি বলতে পারছি না। আমার ব্লগ নামের কোন ব্লগ বন্ধ করা হয়নি।
শাহাবাগ সাইবার যোদ্ধারা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নিন্মোক্ত ব্লগ সাইটগুলোতে চলছে ব্ল্যাক আউট। এই ব্লগগুলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্লগ বা ওয়েবসাইট হচ্ছে, সচলায়তন, আমার ব্লগ, মুক্তাঙ্গন, নাগরিক ব্লগ, আমার বন্ধু, চতুর্মাত্রিক, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, ইস্টিশন ব্লগ, সরব ও উন্মোচন ব্লগ। (www.sachalayatan.com), (www.amarblog.com), (http://nirmaaan.com/blog/), (http://shobjanta.com/), (http://mukto-mona.com/bangla_blog/), (http://www.nagorikblog.com/), (www.amrabondhu.com), (http://choturmatrik.net/), (http://cadetcollegeblog.com/), (http://shorob.com/),
এই ব্লগগুলো বন্ধ করে দিয়ে সরকার প্রমাণ করল সরকার হেফাজতে ইসলামের কাছে নতি স্বীকার করেছে। তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকেও ভুলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তরুণ প্রজন্মের ওপর আঘাত হানল। এতে তরুণ প্রজন্ম আরও উদীপ্ত, আন্দোলনের গতি আরও বেড়ে গেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করেই আমরা ঘরে ফিরব। আমাদের ওপর আঘাত আসবে এটা জেনেই আমরা পথে নেমেছি। ব্লগ ও ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাতে কিছু যায় আসেনি। ইন্টারনেটের দুনিয়া অবারিত। কয়টা বন্ধ করবে বিটিআরসি। আমাদের সাইবার যুদ্ধ চলবেই।
সাইবারযোদ্ধারা বলেন, ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) বার বার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গেলেও সেটি তারা বন্ধ করতে পারেনি। তিন বার তারা এই পেজটি বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু জামায়াত-শিবির ১০ মিনিটের মাথায় তা নতুন নামে বা একই নামে খুলে ফেলছে। বৃহস্পতিবার বিটিআরসিতে ব্লগ ও ওয়েবসাইট নিয়ে দিনভর মিটিং হয়েছে। কিন্তু মিটিংয়ের ফলশূন্য। জামায়াত-শিবিরের একটি ব্লগ ও সাইট তারা বন্ধ করতে পারেনি। বর্তমানে দেশী-বিদেশী ৫ শ’ কর্মী বাঁশের কেল্লা নামের পেজে একযোগে অশ্লীল পোস্ট দিচ্ছে। তাদের ধারে কাছেও বিটিআরসি পৌঁছতে পারেনি। জামায়াত শিবিরের একটি ব্লু ও সাইটও বন্ধ করতে পারেনি বিটিআরসি। বর্তমানে জামায়াত-শিবিরের ব্লগ বাঁশের কেল্লা ও সাইট ‘বাঁশের কেল্লা ইউকে, শহীদ তীতুমিরের বাঁশের কেল্লা, বাঁশের কেল্লা, বাঁশের কেল্লা বাঁধ ভাঙ্গার আওয়াজ, নিউ বাঁশের কেল্লা, ফেসবুক পেজ বাঁশের কেল্লা, মুক্ত খবর বিডি, বাঁশের কেল্লা আল্লাহর যিকির, নতুন বাঁশের কেল্লা, বরাক বাঁশের কেল্লা, ইসলামের কেল্লা, টুডে ব্লগ, ‘স্টোরি অব বাংলাদেশ’ নামের একটি ব্লগ সাইটে মুক্তিযুদ্ধকালের ও মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে। ‘সোনার বাংলা’, ‘মাইক’, ‘মতিঝিল স্কয়ার’, ‘এসো আলোর পথে’, ‘আসলে আমরা সবাই পারি, ধরা পড়লে মনে থাকে না’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’সহ কয়েক শ’ সাইটে অপ্রচার চালানো হচ্ছে।
ওই সব সাইটে শাহবাগ আন্দোলন সম্পর্কে নানা ধরনের ধৃষ্টতামূলক ব্যাঙ্গচিত্র এবং সংবাদপত্রের সাজানো কাটিং। এছাড়া তারা শাহবাগের নামে কয়েকটি পেজ তৈরি করেছে- এগুলো হচ্ছে প্রজন্ম চত্বর, বাঁশের কেল্লা ক্যাম্পাস, আমাদের ক্যাম্পাসসহ আরও কয়েকটি কৃত্রিম পেজ তৈরি করেছে। এসব পেজ বা ব্লগের বিরুদ্ধে বিটিআরসি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। কেন নেয়া হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসি বলেছে, যা হচ্ছে ওপরের নির্দেশে হচ্ছে। আমাদের কোন কিছু বলার নেই। আমাদের তালিকা দেয়া হচ্ছে, আমরা তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বাঁশের কেল্লা ইউকে থেকে প্রতিনিয়ত ধর্মের নামে জামায়াত-শিবির উস্কানিমূলক এবং মানহানিমূলক পোস্ট দিচ্ছে। এই পেজটি কখনই বিটিআরসি বন্ধ করতে পারেনি। অবিশ্বাস্যহারে বাড়তে থাকে এই পেজে লাইক দেয়া। এক পর্যায়ে পেজটি মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে লাখ লাখ লাইক পেয়ে বসে। ফেসবুক স্ট্যাটিটিক্স নামে একটি সাইট বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সবচেয়ে জনপ্রিয় পেজ স্বীকৃতি দেয় বাঁশের কেল্লাকে। গত কয়েকদিন ধরে এ পেজটি আবার আলোচনায় চলে আসে। যে কোন মিডিয়ার আগেই পেজটি শিবিরের কর্মীদের মাধ্যমে সারাদেশের নিউজ পোস্ট করে দেয়। এছাড়া কোথায় কোন্ নেতাকর্মী আহত হলো, কোথায় কার রক্ত প্রয়োজন এসব মুহূর্তের মধ্যে পোস্টও দেয়া হচ্ছে। কোথায় নাশকতা চালাতে হবে সেই নির্দেশও আসে বাঁশের কেল্লা থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন