শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৩

যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি চাই

সারাদেশ তখন স্বাধীনতার জন্য উত্তাল। গাইবান্ধার ফুলছড়ি থানা হেড কোয়ার্টারেও তার ঢেউ লাগে। থানা সদরের পাশেই নীলকুঠি গ্রামে সুলতান আলীর বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সুলতান আলী বঙ্গবন্ধুর ডাকে মাত্র ২১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাবা আব্দুস সোবহানকে না জানিয়েই দেশ স্বাধীন করার স্বপ্ন নিয়ে একদিন বন্ধু কফিল উদ্দীন, দারাজ উদ্দীন, জয়নাল মিয়া ও আব্বাস আলীকে সঙ্গে নিয়ে নৌকায় চেপে প্রথমে চলে যান কাকড়িপাড়ায়। পরে সেখান থেকে ভারতের মাইনকারচর শহরে গিয়ে পৌঁছান। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তাকে পাঠানো হয় দার্জিলিংয়ে মুজিব ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য। প্রশিক্ষণ শেষে ৬নং সেক্টর কমান্ডার খাদেমুল বাশারের অধীনে তাদের নিয়োজিত করা হয়। সেখানে কোম্পানি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন ফকির আহম্মেদ। তার নেতৃত্বে সুলতান আলী তার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবরুদ্ধ বাংলাদেশের হাতিবান্ধা, বড়খাতা, লালমনিরহাট ও রংপুর সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় অপারেশনে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জীবনের তাগিদে আরেক যুদ্ধে নামতে হয় তাকে। বর্তমানে ৩ মেয়ে ২ ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে একটি ভাঙ্গা ছাপড়া ঘরে তার বসবাস। ঝড়-বৃষ্টির দিনে অন্যের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয় পরিবারটিকে। ফুলছড়ি হাট ও গ্রাম-গঞ্জে ছাতা মেরামত করে দু:খ-কষ্টের মধ্যে জীবিকা নির্বাহ করছে মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আলী। ছাতা মেরামত করে যে আয় হয় তা এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের দেয়া মাসিক ২ হাজার টাকা ভাতার ওপরই তাকে এখন নির্ভর করতে হচ্ছে। সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে তার স্ত্রী রাবেয়া অন্যের বাড়িতে এখন ঝিয়ের কাজ করে। অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য টাকা-পয়সা যোগাড় করতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকতে হয়। ৭ সদস্যের সংসার নিয়ে সুলতান আলীর এখন দুর্বিষহ দিন কাটছে। তিনি ভেবে পান না কবে তার এই দুঃসহ দিনগুলোর পরিসমাপ্তি ঘটবে।
এত কষ্টের মধ্যেও মুক্তিযোদ্ধা সুলতান আলীর একমাত্র স্বপ্ন মুক্তিযুদ্ধে যারা বিরোধিতা করছে সেই রাজাকার আর আলবদরদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যাওয়া। সরকার তাদের বিচার করে শাস্তি দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন