সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৩

২৭ এপ্রিলের সমাবেশে যোগ দেবেন লাখো নারী শ্রমিক

হেফাজতে ইসলামের গণতন্ত্র ও নারী প্রগতিবিরোধী ১৩ দফা দাবির প্রতিবাদে রাজধানীতে ডাকা আগামী ২৭ এপ্রিলের সমাবেশে অংশ নিতে যাচ্ছে লাখো নারী গার্মেন্টসকর্মী। নারীকে ঘরে বন্দী রেখে দেশকে তালেবানী রাষ্ট্র বানানোর জামায়াত-হেফাজতের পাঁয়তারার বিরুদ্ধে ফুঁসছে নারী শ্রমিকরা। সমাবেশ সফল করতে তাই চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এদিকে ধর্মের অপব্যাখ্যা করে মওদুদীবাদী জামায়াতসহ স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে একই দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে আলহাজ মিছবাহুর রহমানের নেত্বাত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট।

হেফাজতের ১৩ দফার বিরুদ্ধে ডাকা সমাবেশ সম্পর্কে গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, ২৭ এপ্রিল নারী সমাবেশে লক্ষাধিক নারীকর্মী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গত ১৬ এপ্রিল থেকে গার্মেন্টস কারখানা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে শুরু করা হয়েছে লিফলেট বিতরণ। সচেতন করা হচ্ছে নারীদের অধিকার সম্পর্কে। ২৭ এপ্রিল গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে যদি নারীদের ছুটি না দেয়া হয় তাহলে তা উপেক্ষা করেই নারীরা রাজপথে তাদের দাবি আদায়ে নেমে আসবে বলে জনিয়েছেন স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি শামীমা নাসরিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, এ দেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে পোশাকশিল্প ও তার আনুষঙ্গিক শিল্পগুলোর ওপর। পোশাকশিল্পের সঙ্গে জড়িত ৪০ লাখ কর্মীর মধ্যে ৮০ ভাগই নারী। আর হেফাজতের দাবি মেনে নিলে এসব নারী অসহায় হয়ে পড়বে। হেফাজতের দাবি কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেয়া হবে না। পোশাকশিল্পের নারী কর্মীদের সমাবেশে অংশগ্রহণ সম্পর্কে মালিকপক্ষ কোন মন্তব্য করতে চায় না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক উৎপাদন ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। এ বিষয়ে বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, আমরা বিজনেস অর্গানাইজেশন। পলিটিক্যাল বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। নারী সমাবেশে আমরা কর্মীদের যেতেও বলব না আবার কেউ যেতে চাইলে তাদের বাধাও দেব না। এটা কর্মীদের বিষয়। তবে তারা ব্যক্তিগত ছুটি চাইলে তা বিবেচনা করা হবে। শ্রমিক নেত্রীরা বলেছেন, নারী শ্রমিকরা আন্দোলনে যেহেতু নেমেছে সমাবেশ সফল করবেই। এতে মালিকরা তাদের সঙ্গে থাকলে ভাল, না থাকলেও কিছু বলার নেই। নারী সমাবেশে নারী গার্মেন্টসকর্মীদের অংশ নেয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন নারী নেত্রী ও ‘নিজেরা করি’-এর সমন্বয়কারী খুশী কবির। তিনি বলেন, আমাদের দেশের তৃণমূল পর্যায়ের বেশিরভাগ নারীই পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত। অর্থনীতিতে তাদের বড় ভূমিকা রয়েছে। শুধু গার্মেন্টসের নারীরাই কেন আমরা সব পেশাজীবীসহ অন্যদের এই সমাবেশে আহ্বান জানাই।
এদিকে ২৭ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে আলহাজ মিছবাহুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট। জামায়াত ডে-লেবার হিসেবে লোক ভাড়া করে সারাদেশে সংঘাত সৃষ্টি করছে এমন অভিযোগ করে মিছবাহুর রহমান বলেন, জামায়াত পূর্বপরিকল্পিতভাবে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর দেশব্যাপী নজিরবিহীন তা-ব শুরু করেছিল। এ জন্য তারা বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করেছিল। তাই তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সম্প্রতি আন্দোলনে নামা হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা আহমদ শফী বার্ধক্যের কারণে ইসলামী আন্দোলনের প্রকৃত চিত্র জানেন না। আর যারা মহানবী (সা) বিরুদ্ধে কুৎসা রচনা করছে তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কথা বলা প্রয়োজন। ঢালাওভাবে মানুষকে নাস্তিক, মুরতাদ বলা ইসলাম অনুমোদন করে না। ১৮ দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত ইসলামী দলের নেতা ও ওলামারা হেফাজতে ইসলামকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বর্ষীয়ান আলেম হযরত মাওলানা আহমদ শফীর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধের কমতি নেই। কিন্তু বর্ষীয়ান এই আলেম হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণ একা ধরে রাখতে পারবেন কিনা এটা এখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন