শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৩

সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের চা শ্রমিক জনতা সমাবেশ

রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ
গড়ার প্রত্যয়
কবির য়াহমদঃ রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের চা শ্রমিক জনতা সমাবেশ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে খাদিম চা বাগানে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সকল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পূর্ব পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার শপথ নেন উপস্থিত চা শ্রমিক জনতা। এছাড়া গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে নানা অপপ্রচার ও নারীর অগ্রগতি রোধে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করারও অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়। সমাবেশে অংশ নেওয়া বিপুল সংখ্যক নারী চা শ্রমিক নারীবিরোধী সকল অপশক্তকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশজুড়ে চালিয়েছে বীভৎস হত্যাযজ্ঞ। সেই হত্যাযজ্ঞ থেকে বাদ পড়েনি সিলেটের খাদিমনগর চা-বাগানের শ্রমিক। ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল এ দিনে চা বাগানের শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার কথা বলে এক স্থানে দাঁড় করিয়ে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়। এতে শহীদ হন ৬৪  শ্রমিক।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বাগান কর্তৃপক্ষ এই শহীদদের স্মরণে বাগানের প্রবেশপথে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করে। সেই স্মৃতিস্তম্বের পাশে স্বাধীনতার ৪২ বছরে আবার জেগে ওঠে শ্রমিকরা। জনতাও একান্ত হয় তাদের সঙ্গে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চা শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুক্রবার বিকেলে চা শ্রমিক-জনতা সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট গণজাগরণ মঞ্চ।
বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে খাদিম চা বাগানের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশ শত শত চা-শ্রমিক তাদের বঞ্চনার দাবি নিয়ে হাজির হন। স্লোগানে স্লোগানে অধিকারে কথা আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে জেগে ওটে চা-শ্রমিক জনতা।
সমাবেশে সকল চা শ্রমিকসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় হাজারো জনতা অংশ নেন।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সমাবেশের শুরু হয়। এরপরে গণহত্যায় শহীদ চা শ্রমিকদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলী অপর্ণ করা হয়। গণজাগরণ মঞ্চের শিল।পীদের জাগরণী সংগীতে বটতলা ও স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গন জেগে ওঠে অধিকার আদায়ের দীপ্ত স্লোগানে।
চা-শ্রমিকরা তাদের বক্তব্যে দাবি জানিয়ে বলেন, মজুরী বৃদ্ধি, বাগানে চিকিৎসা সেবার জন্য এম্বুলেন্স প্রদান, ট্রেড ইউনিয়নের বিরোধ নিরসন করতে হবে।
তারা বলেন, অবিলম্ভে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী ৫৫ টাকা থেকে দেড়শ টাকা করতে হবে।
চা শ্রমিক নেতারা বলেন, ১৯৭১ সালে সারাদেশের মুক্তিকামী মানুষের সাথে চা শ্রমিকরাও অংশ নেন। ৩০ লক্ষ বাঙালির সাথে অনেক চা শ্রমিকও স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জন দেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশে চা শ্রমিকরা থেকে গেছেন শোষিত, নির্যাতিত। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত দেশে এমনটি কাম্য হতে পারে না।
তারা বলেন, চা শ্রমিকদের নানা বঞ্চনা, অপ্রাপ্তি সত্ত্বেও আজকে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। শ্রমিকরা একবার যখন জেগে উঠছে তখন বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবে না। 
তারা সারাদেশে সংখ্যালুঘু নির্যাতন, নারী বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার প্রতিজ্ঞা করেন।
এদিকে বিকেল থেকেই সিলেটের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও একাত্ম হয় চা-শ্রমিক জনতার এই জাগরণে।
সমাবেশ চা-শ্রমিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বক্তব্য দেন, রজনী বাউড়ী, দুলু কুর্মী, নারায়ন দাস নরী।
এছাড়াও শ্রমিকদের পক্ষে বক্তব্য দেন স্কুল শিক্ষক নান্টু রঞ্চন সিং, বাগানের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সবুজ তান্তি, স্থানীয় মুরব্বী রুঘু মিয়া, রমন ঘোয়ালা, কানু দাস ছত্রী, ইউনিয়ন মেম্বর দুলন কর্মী, চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি শ্রীভাস মহালী, যুগেশ সাওতাল, অমূল্য ভক্ত, বিকাশ রঞ্জন দাস।
গণজাগরণ মঞ্জের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন, রাজিব রাসেল, বিশ্বপা ভট্টাচার্য মৌ, আব্দুল করিম কিম, অ্যাডভোকেট মুনির হেলাল প্রমুখ।
সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক কবির য়াহমদ জানান, পহেলা মে বিকেল ৩ টায় সিলেটের চৌহাট্টাস্থ প্রজন্ম চত্বরে শ্রমিক-ছাত্র-জনতা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন