শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৩

নাশকতার আশঙ্কা ॥ লংমার্চের আড়ালে জঙ্গীদের মাঠে নামিয়েছে জামায়াত

শংকর কুমার দে ॥ হেফাজতে ইসলামের লংমার্চের গণজমায়েতের আড়ালে রাজধানীতে জড়ো করা হয়েছে কয়েক হাজার জঙ্গী ও সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। তারা হেফাজতে ইসলামের লোকজনদের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়ে তাদের কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করবে। লংমার্চের মিছিলে ও গণজমায়েতে মিশে গিয়ে তারা বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে। যেসব নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গীদের জড়ো করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে হিযবুত তাহ্্রীর, জেএমবি, হুজির জঙ্গী সদস্য ও তাদের সুইসাইড স্কোয়াড সদস্যরা। এসব জঙ্গী ও সুইসাইড স্কোয়াড সদস্যরা মাঠে নামিয়েছে জামায়াতÑশিবির। জামায়াতÑ শিবিরের মেসে, হোস্টেলে, বাসা বাড়িতে, মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে আশ্রয় নিয়েছে তারা। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে ও মাইক্রোবাসযোগে তারা রাজধানীতে এসে পৌঁছেছে। গণজমায়েতে তারা বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গী সদস্য ও সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যরা নিজেদের পরিচয় গোপন করে রাজধানীতে এসে পৌঁছেছে। সংগঠিত হয়ে তারা না এসে পৃথকভাবে একজন বা দুই জনের দলে বিভক্ত হয়ে রাজধানীতে এসেছে তারা। রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহজনকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তারা লংমার্চ করে গণজমায়েতে অংশ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছে। রাজধানীর আশপাশে অবস্থিত মাদ্রাসা ও মাদ্রাসার মেস এবং ছাত্রাবাসে আশ্রয় নিয়ে তারা আজকের গণজমায়েতে অংশ নেবে বলে গোয়েন্দা সূত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ করে গণজমায়েতে কর্মসূচী সফল করতে জঙ্গী ও সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যদের জড়ো করার কৌশল নিয়েছে জামায়াতÑশিবির। জামায়াতের ভাড়া করা জঙ্গী ও সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যরা লংমার্চ করে গণজমায়েতের কর্মসূচীতে বড় ধরনের নাশকতা চালাতে পারে সেই আশঙ্কার কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে হেফাজতে ইসলামকে। সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামকে এই ধরনের আশঙ্কার খবর জানিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম মুখে জামায়াতের সঙ্গে নেই বললেও তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এখন আর পেছনে ফেরার পথ দেখতে পাচ্ছে না।
গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্ব ও কর্মসূচীর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার বিষয়টি বিস্ময়কর প্রশ্নবিদ্ধ। হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী ’৭১ সালে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে বলে দাবি করেছে সম্মিলিত ইসলামী জোট। হেফাজতের নেতা আবদুর রহমান চৌধুরী হচ্ছেন নেজামে ইসলামীর চট্টগ্রাম নগরের সভাপতি। শুধু তাই নয়, কারাগারে আটক যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) নিকটাত্মীয় তিনি। কিছু দিন আগেও তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। সাকা মুক্তি পরিষদের (যুদ্ধাপরাধী) নেতা এমএ হাসেম খান, রাঙ্গামাটি শিবিরের সাবেক নেতা ও বর্তমানে কৃষক দলের নেতা মাহমুদুল হাসান নিজামীর জঙ্গী সম্পৃক্ততায় জড়িত ছিলেন বলে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রিপোর্ট আছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সাবেক ছাত্রশিবির নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী জামায়াতÑশিবির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়। নেজামে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুফতি ইজাহারুলের ছেলে হারুন ইজাহারের বিরুদ্ধে জঙ্গী সম্পৃক্ততা থাকায় পিতা ও পুত্র-দুই জনকেই গ্রেফতার করা হয়। পিতা মুফতি ইজাহার এখনও কারাগারে আটক আছেন। পুত্র হারুন ইজাহার মুক্তি পেয়ে এখন হেফাজতে ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে যারা আছেন গোয়েন্দা তথ্য থেকে তা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, মাত্র ১ মাস আগে গত মার্চ মাসে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, চট্টগ্রাম ছাড়া তাদের কোন শাখা কমিটি নেই। এমনকি আলাদিনের চেরাগ বাতি আছে যে তারা রাতারাতি সারাদেশে তাদের সাংগঠনিক কমিটি গঠন করে ৫০ লক্ষাধিক লোকজন জড়োর করার হুমকি দিয়েছে। আরও বিস্ময়কর হচ্ছে, তারা কর্মসূচী সফল করতে কোটি কোটি ব্যায়ে লংমার্চ করে গণজমায়েতের কর্মসূচী করতে যাচ্ছেন। কোটি কোটি টাকা পেল কোথায়?
গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা দৈনিক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, রাজধানীতে অনেক অচেনা লোকের সমাগম ঘটেছে। রাস্তাঘাটে বের হলে সবার চোখেই পড়ছে। অনেকের পরনে দাড়ি ও টুপি আছে। আবার অনেকের পরনে জিন্সের প্যান্ট ও গেঞ্জি, শার্ট দেখা যাচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন রাস্তায় তাদের অনেকই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। নিজের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে তারা রাজধানীতে আশ্রয় নিয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর রয়েছে, জামায়াতÑশিবির বিরাট অঙ্কের টাকা ব্যয় করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের জঙ্গী ও সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্যদের রাজধানীতে জড়ো করেছে। হেফাজতের লংমার্চের গণজমায়েতে যাতে বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে না পারে সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
#
জনকণ্ঠ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন