রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

ধর্মীয় গুজব ছড়িয়ে হত্যা-অরাজকতা ইসলাম সমর্থন করেনা

রমেন দাশগুপ্ত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ফটিকছড়ি ঘুরে এসে: ফটিকছড়ি উপজেলার কাজিরহাট এমদাদুল ইসলাম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জোনায়েদ বিন জামাল বলেছেন, ধর্মীয় গুজব ছড়িয়ে মানুষকে ক্ষিপ্ত করে সাধারণ মানুষের উপর আক্রমণ, হত্যা, অরাজকতা ইসলাম সমর্থন করেনা। এ ধরনের ঘটনা পরিস্কার ষড়যন্ত্র যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অন্যায় এবং অবৈধ।


শনিবার দুপুরে কাজিরহাট এমদাদুল ইসলাম মাদ্রাসায় বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে গত বৃহস্পতিবার গুজব ছড়িয়ে আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা ও তান্ডবের বিষয়ে এসব কথা বলেন ওই কওমী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জোনায়েদ বিন জামাল।

সেদিন ভুজপুরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গুজব ছড়ানো হয়, ওই কওমী মাদ্রাসার সাবেক পরিচালক (বড় হুজুর) জালাল আহমেদকে এবং তার ছেলে অধ্যক্ষ জোনায়েদ বিন জামালকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এ ঘোষণা শুনে ভুজপুর এবং আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার নারীপুরুষ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এসে আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা চালায়।

তাদের নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিষয়ে প্রশ্ন করলে জোনায়েদ বিন জামাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘কেউ কেউ ‍আমাদের নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। আমরা এ বিষয়টিকে সতর্ক করছি। আমরা বলতে চাই, এ ধরনের ষড়যন্ত্র আমরা ভবিষ্যতে বরদাশত করবনা।’

জোনায়েদ বিন জামালসহ তার মাদ্রাসার শিক্ষকরা স্থানীয়ভাবে হেফাজত ইসলামের সঙ্গে জড়িত। গত সপ্তাহে হেফাজতের লংমার্চেও অংশ নিয়েছিলেন বলে জানান জোনায়েদ।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, হেফাজতের একটি অংশ আওয়ামী লীগের উপর হামলার সঙ্গে জড়িত। কাজিরহাট মাদ্রাসাসহ ভুজপুরের আরও কয়েকটি কওমী মাদ্রাসা থেকে ছাত্ররা বের হয়ে হামলায় অংশ নেয়। এমনকি কাজিরহাট মাদ্রাসার এক শিক্ষক হামলার সময় লাঠি নিয়ে বাজারে আসার আহবান জানিয়ে অনেককে মুঠোফানে ম্যাসেজ দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে জোনায়েদ বলেন, ‘যেদিন মিছিল হয় সেদিন সকালে আওয়ামী লীগ নেতা পেয়ারুল ইসলাম আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি মিছিল করবেন শুনেই আমি মাদ্রাসার দু’টি গেইট বন্ধ করে দিই। আওয়ামী লীগের মিছিলে আমার মামাশ্বশুরও ছিলেন। তিনি কোনমতে প্রাণে বেঁচেছেন।’

তিনি বলেন, ‘যখন মিছিল আসে এবং উত্তেজনা শুরু হয় তখন আমি তিনতলার ছাদে উঠে দেখি আমাদের মাদ্রাসা থেকে কোন ছাত্র বের হয়েছে কিনা ? কিন্তু আমি আমার মাদ্রাসার কাউকে দেখিনি। গেট বন্ধ থাকায় আমাদের কোন ছাত্র বের হতে পারেনি। এরপরও আমি মাইক নিয়ে ভ্যানগাড়িতে করে বের হয়ে বাজারে গিয়ে সবাইকে শান্ত থাকার কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু গোলাগুলি শুরু হওয়ায় আমি দ্রুত মাদ্রাসার ভেতর ঢুকে যায়।’

জোনায়েদ বিন জামাল জানান, ভুজপুর ইউনিয়নে ১২টি কওমী মাদ্রাসা আছে। এর মধ্যে বড়বিলে মাদ্রাসায় গুজব ছড়ানো হয়, বড় হুজুরকে ধরে নিয়ে গেছে। আর পশ্চিম ভুজপুরে গুজব ছড়ানো হয়, তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘গুজব ছড়ানোর বিষয়টি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হতে পারে। আর হামলার ঘটনাটি অপরিকল্পিত বলে মনে করি। যেহেতু মুসলিম অধ্যুষিত দেশ, গুজব শুনেই সাধারণ মানুষ বাজারে চলে এসেছে।’

উল্লেখ্য গত ১১ এপ্রিল ভুজপুরে গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বে হরতাল বিরোধী মিছিলে সহিংস হামলায় তিনজন নিহত এবং কমপক্ষে দেড়’শ জন আহত হন। মিছিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বহনকারী কমপক্ষে দু’শ মোটর সাইকেল, তিনটি প্রাইভেট কার ও তিনটি জিপ, একটি মাইক্রোবাস, ৫টি পিকআপ ভ্যান এবং একটি ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন