শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদীর আপিল মার্চের শেষে

জাকিয়া আহমেদ ও জেসমিন পাঁপড়ি
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ঢাকা: সর্বোচ্চ দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী তার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন মার্চের শেষে। সাঈদীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া ফাঁসির দণ্ড বাতিল ও খালাসের আর্জি জানিয়ে এ আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তার প্রধান আইনজীবী ব্যরিস্টার আবদুর রাজ্জাক।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তার বিরুদ্ধে প্রসিকউশনের আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে আটটিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ রায় দেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণা কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার রাজ্জাক এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানান।

আপিলের বিষয়ে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, “আইন অনুযায়ী আপিলের জন্য ৩০ দিন সময় পাওয়া যায়। সে সময়ের মধ্যেই আমরা আপিল করব। তবে সময়ের শেষ দিকে অর্থাৎ মার্চের শেষে এ আবেদন জমা পড়বে।”

আপিল আবেদন তৈরির কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি অনেক বড় আবেদন হওয়ার কারণেই সময় লাগছে।

ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, “সাঈদী সাহেবের সাজা বাতিল এবং তাকে খালাস চেয়ে আবেদন করা হবে। কারণ, যে সকল অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেওয়া হয়েছে আইনে তা কোনোভাবেই টেকে না।”

তিনি বলেন, “দণ্ডাদেশ দেওয়ার অন্যতম অভিযোগ ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা। কিন্তু ১৯৭২ সালে একটি হত্যার বিচার চেয়ে ইব্রাহিমের স্ত্রী একটি মামলা করেছিলেন। যাতে ১৫ জনকে আসামি করা হয়। কিন্তু সেখানে সাঈদী সাহেবের নাম ছিল না। ট্রাইব্যুনালে সে মামলার কাগজ আমরা জমা দিয়েছিলাম। রায়ে সে বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি।”

তিনি জানান, এছাড়া অন্য যে অভিযোগে তাকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে সেটি বিসা বালী হত্যাকাণ্ড। বিসা বালীর ভাই যে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং এর আগে তিনি টেলিভিশনে বলেছেন সাঈদী সাহেব বিসা বালীকে হত্যা করেননি।
তিনি বলেন, “এসকল যুক্তিতেই আমরা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর খালাস চেয়ে আপিল করব।”

সাঈদীর পক্ষে আপিল বিষয়ে তার আরেক আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, “সাঈদী সাহেবের বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি লাইনের বিরোধিতা করা যায়। এটি একটি স্টুপিড রায়। এর চেয়ে খারাপ রায় আর কোনো আদালতে কখনও হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।”

তিনিও জানান দণ্ডপ্রাপ্ত সাঈদীর খালাস চেয়ে আপলি করা হবে।

সাঈদীর আপিলের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় মামলা স্থানান্তর হবে। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর দেওয়া  রায়ে সাজাপ্রাপ্ত আরেক জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা সুপ্রিম কোর্টে এক আবেদন করেন। ৩১ মার্চ এ মামলায় শুনানির মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে এ আইনি লড়াই শুরু হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ থেকে এ ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে জামায়াতের সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা এবং দলটির নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন