ওয়াহিদ নবী
এ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই যে দেশ একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হরতালে উত্ত্যক্ত জনজীবন। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য অচল যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে দেশ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে যদি এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটে। মানুষ গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারে না। স্কুল-কলেজে লেখাপড়া বিঘিœত হচ্ছে। এর ওপরে আছে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। ইদানীং হত্যাকা- বেড়েছে। আন্দোলনকারীদের হাতে পুলিশ হত্যার কথা এর আগে শোনা গেছে বলে মনে হয় না। হরতালের তা-ব অনেকদিন থেকেই চলছিল কিন্তু সেটা এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই সংকট নতুন মাত্রা পেয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বেরুনো শুরু হবার পর থেকে। সংকট চলুক আমরা তা চাই না। আমরা চাই সংকটমুক্ত একটা সমাজ।
কিন্তু কী করলে আমরা কাক্সিক্ষত সুফল পাবো? প্রথমেই আমাদের ধরে নিতে হবে যে সংকটের কারণ জানতে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। শুধুমাত্র কারণ দূর করেই সংকট দূর করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে যে সংকট কেউ চায় না এ কথা ঠিক নয়। সংকট সৃষ্টি করে অনেকেই ফায়দা লুটেন অর্থাৎ ঘোলা পানিতে মাছ ধরেন। যারা এমন কাজ করেন তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ‘দুই নেত্রীর একসঙ্গে বসা উচিত’ বা ‘সংলাপের প্রয়োজন’ এই জাতীয় কথা আর কতো শোনা যায়?এ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই যে দেশ একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। হরতালে উত্ত্যক্ত জনজীবন। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য অচল যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে দেশ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে যদি এ অবস্থার পরিবর্তন না ঘটে। মানুষ গুরুতর অসুস্থ রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারে না। স্কুল-কলেজে লেখাপড়া বিঘিœত হচ্ছে। এর ওপরে আছে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। ইদানীং হত্যাকা- বেড়েছে। আন্দোলনকারীদের হাতে পুলিশ হত্যার কথা এর আগে শোনা গেছে বলে মনে হয় না। হরতালের তা-ব অনেকদিন থেকেই চলছিল কিন্তু সেটা এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই সংকট নতুন মাত্রা পেয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বেরুনো শুরু হবার পর থেকে। সংকট চলুক আমরা তা চাই না। আমরা চাই সংকটমুক্ত একটা সমাজ।
আমাদের কতোগুলো সমস্যা রয়েছে। যে কাজগুলো করার জন্য আমরা অন্যকে দোষ দেই, সেই কাজগুলো আমরা নিজেরাই করি। এর ফলে কোনো কিছুর আলোচনাকালে আমরা ইতিহাসের অতীত ঘটনাবলীর গভীর অরণ্যে হারিয়ে যাই। একজনকে যদি বলা হয় আপনি এ কাজটি করলেন কেন তবে তিনি বলবেন আমার প্রতিদ্বন্দ্বীও তো করেছে। আলোচনা আর অগ্রসর হতে পারে না। সমস্যার সমাধানও হয় না। তবে এটাও ঠিক যে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমাদের রাজনীতির কিছু বিশেষত রয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইতে লিখেছেন যে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। কৃষক শ্রমিক পার্টি, গণতান্ত্রিক দল ও নেজামী ইসলামী এই তিনটি দলের সংগঠন ও গণসমর্থন তেমন ছিল না শুরুতে। কিন্তু শুধুমাত্র শেরেবাংলার বিশাল জনপ্রিয়তার কারণে অতি অল্পসময়ে কৃষক শ্রমিক পার্টি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লক্ষ করবার বিষয় যে নেতার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা এখানে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দলের সংগঠন সেখানে কোনো গুরুত্ব পায়নি। আজ ষাট বছর পরে আমাদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের বিশেষত্ব কিছু বদলেছে। পাঠক-পাঠিকারা তা জানেন কাজেই এই প্রবন্ধের ক্ষুদ্র পরিসরে সেটা এখানে আলোচনা করবো না। শুধু এইটুকু বলবো যে বিএনপির সাংগঠনিক ভিত্তি খুব সবল নয়। প্রতিদ্বন্দ্বীর দুর্বলতা, ভারত বিরোধী জিগির ও দলের মরহুম প্রতিষ্ঠাতার ব্যক্তিগত সততার প্রচার তাদের রাজনৈতিক মূলধন। তুলনামূলকভাবে আওয়ামী লীগের সংগঠন তুলনামূলকভাবে ভালো। কিন্তু দলের কিছু মানুষের ব্যক্তিগত কীর্তিকলাপ দলের সমস্যার কারণ হয়েছে এবং এ সমস্যাগুলো আওয়ামী লীগ সময়মতো সমাধান করতে পারেনি। এতে মনে হয় যে দলীয় নেতৃবৃন্দের উচিত দলের সংগঠনের দিকে আরো নজর দেয়া। আওয়ামী লীগের দুর্বলতাই বিএনপির সাফল্যের মূল কারণ। আমরা দেখেছি যে বিভিন্ন টকশোতে যখন বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে তাদের ইতিবাচক অবদান কী, তারা সন্তোষজনক কিছু বলতে পারেনি। আমরা জানি যে আওয়ামী লীগের মূল্যবান অবদান রয়েছে কিন্তু বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আরো সজাগ হতে হবে তাদের।
জামাতের তেমন জনসমর্থন নেই। কিন্তু তাদের সংগঠন শক্তিশালী। এবারে দেখা গেলো তারা তাদের ক্যাডারদের দৈহিক শক্তিতে বেশ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। যেজন্য তারা পুলিশ পিটিয়েছে। পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিতে পেরেছে। বর্তমান সহিংস আন্দোলনে বেশ কয়েকজন পুলিশ হত্যার পেছনে কারা ছিল তা খতিয়ে দেখতে হবে। জামাতের অর্থ আছে প্রচুর। তাদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংগঠিত। এতে করে তারা অর্থ পাচ্ছে এবং কর্মী পাচ্ছে। ধর্মীয় কথা বলে তারা সরল মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারছে। চাঁদে সাঈদির মুখ দেখার কথা এর একটা উদাহরণ। তাদের সঙ্গে বিএনপিও এ জাতীয় কথা বলছে। তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা জামাতকে পুনর্বাসিত করেছে। ইদানীং বেগম জিয়া বলেছেন, ‘একটি দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে আল্লাহ, রসুল ও ইসলামের নামে কুৎসা রটিয়ে বেরাচ্ছে। ধর্মের কথা বলে যারা রাজনীতি করছেন তাদের সবার জীবনযাত্রায় ইসলামের খুব একটা যে প্রভাব রয়েছে তা বলা যায় না। জামাতের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আপনজনরা বহু বছর ধরে পশ্চিমা দেশে বাস করছে। জিজ্ঞেস করলে তারা হয়তো বলবেন যে ইসলামের সেবার জন্য তারা সেখানে আছে। এরা পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত। জামাতের নেতারা মাদ্রাসা শিক্ষা অন্যের জন্য বিশেষ করে দরিদ্র মানুষের জন্য উৎসাহিত করেন। জাতীয় দল সংসদে অনেকগুলো আসন পেয়েছে। কিন্তু আসন সংখ্যা তাদের সাংগঠনিক শক্তির প্রতিফলন নয় জনপ্রিয়তারও প্রতিফলন নয়। এরশাদ নির্ভর দল এরশাদের অনুপস্থিতিতে কেমন করবে কে জানে!
সিপিবির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অতীত ও সৎ কর্মীবাহিনী। বাসদের সঙ্গে মিলে তারা সফল ও শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করেছে। দলগুলোর সাংগঠনিক অবস্থা এজন্য গুরুত্বপূর্ণ যে আদর্শের বাস্তবায়ন সংগঠনিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের উচিত হবে নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থার বিশ্লেষণ করা। এটা তাদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি জরুরি। জামাতের এবং শিবিরের কর্মীরা মারামারিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা অস্ত্রধারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশকে পিটিয়েছে। যেহেতু আওয়ামী লীগ বৃহত্তম অসাম্প্রদায়িক দল জামাতের সঙ্গে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবেই। আর কিছু না হোক আওয়ামী লীগ কর্মীদের আত্মরক্ষার কথা ভাবতে হবে। অভিযোগ উঠেছে যে আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী ও এমপিরা অকুস্থলে যাননি। এটা সাংগঠনিক দুর্বলতার লক্ষণ।
বর্তমান দুর্যোগের শুরু কাদের মোল্লার মামলার রায় বেরুবার অব্যবহিত পরে। তার যাবজ্জীবন কারাদ- হলে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েন। তাদের হতাশার বিস্ফোরণ ঘটে শাহবাগ চত্বরে। সব বয়সের আর সব শ্রেণীর লাখো লাখো মানুষ সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে জমায়েত হয়। সেখানে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দাবি করা হয়। সবার কণ্ঠে অসাম্প্রদায়িক আদর্শ প্রতিধ্বনিত হয়। কাব্যিক সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত হলো শাহবাগ চত্বর। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হলো সেখানে। কয়েকদিন স্বাধীনতার বিরোধীদের কাউকে দেখা গেলো না। এরপর শুরু হলো শাহবাগ চত্বরে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে শালীনতাহীন আক্রমণ। শাহবাগ চত্বরের অংশগ্রহণকারীদের নাস্তিক বলে ঘোষণা করা হলো। যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন শুরু হয়েছিল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সেই আন্দোলনকে বলা হলো নাস্তিকদের আন্দোলন। এসব তথাকথিত নাস্তিকরা নাকি নাস্তিকতা প্রচার করছিল। রাজীবকে হত্যা করা হলো। তার অপরাধ কেউ প্রমাণ করেনি। আসলে কি অভিযোগ সেটাও পরিষ্কার নয় কারো কাছে। এরপর নিষ্ঠুরতা খারাপ থেকে আরো খারাপ হতে থাকলো। হরতালের নামে অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসলীলা যথারীতি চললো। বায়তুল মোকাররমে জায়নামাজ পোড়ানো হলো। লাঠিসোঁটা মজুদ করার জায়গা হলো মসজিদ। এবারে পুলিশ পেটানো হলো। হিন্দুদের বাড়ি পোড়ানো হলো, মন্দির পোড়ানো হলো। বিদ্যুৎ কেন্দ্র পোড়ানো হলো। রেলগাড়ি পোড়ানো হলো। জাতির পতাকা পোড়ানো হলো। শহীদ মিনার চুরমার করা হলো। ঠা-া মাথায় হত্যা করা হলো নারায়ণগঞ্জের গণমঞ্চের আয়োজক রফিউর রাব্বির মেধাবী পুত্র তানভীর মোহাম্মদ ত্বকীকে। পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হলো সঙ্গীত শিল্পী আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোটভাই আহমেদ মিরাজকে। এসবই করা হলো ইসলাম বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হবার পর।
এসব ঘটনা মানুষের মনে এ ধারণার সৃষ্টি করে যে জাতি দুটি রাজনৈতিক ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। এর একটি ভাগে রয়েছে ১৪ দল ও অন্যভাগে রয়েছে ১৮ দল। ১৪ দলের অঙ্গ দলগুলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে নিজেদের মনে করে এবং জনসাধারণকে তাই বলে। ১৮ দলের অঙ্গ দলগুলো স্বাধীনতা বিরোধী দল বলে নিজেদের পরিচয় দেয় না। কিন্তু জামাত ’৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। খুন, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করে। সবচেয়ে বড় কথা তারা খানসেনাদের রাস্তা দেখিয়ে দেয় ও মানুষদের চিনিয়ে দেয়। নিয়াজী তার বই ‘বিট্রেয়াল টু ইস্ট পাকিস্তান’ বইতে সেটা উল্লেখ করেছেন। স্বাধীনতার পর তারা এসব কাজের জন্য ক্ষমা চায়নি জাতির কাছে। কাজেই তারা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত। এদের সঙ্গে ১৮ দলের আর সবাইকে তাই স্বাধীনতার বিরুদ্ধ শক্তি বলে মনে করেন অনেকে। এরা তখন অতীতে আওয়ামী লীগ ও জামাতের আঁতাতের কথা বলেন। এটা ঠিক যে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় জামাত পুনর্বাসিত হয়েছিল। ১৪ দলের অভিযোগের উত্তরে ১৮ দল স্বৈরাচারী এরশাদের সঙ্গে ১৪ দলের সখ্যের কথা বলে। সবকিছু মিলিয়ে বলা যায় যে অবস্থাটা ঘোলাটে।
এরপরে প্রশ্ন আসে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকার ’৯০ সালের পর থেকে দেশ কেমন চালিয়েছেন? দুদলের কিছু সাধারণ সমস্যা রয়েছে। বাংলাদেশ ধনী দেশ নয়। একটি দল নির্বাচনের আগে যে সব প্রতিশ্রুতি দেয় তা সব সময় রাখতে পারে না। এর সব দোষ তাদের নয়। অন্য দেশের কাছে টাকা নিতে হয়। তারা নানারকমের খেলা খেলে। জন পার্কিন্সের লেখা কনফেসন অফ এন ইকনোমিক হিটন্যান বইটি পড়লে ব্যাপারটি সম্বন্ধে জানা যায়। এরপর আছে সরকারের অভিজ্ঞতা ও উপযুক্ততার অভাব। আমরা খুব বেশিদিন হলো স্বাধীনতা পাইনি বা গণতন্ত্র পাইনি। দলগুলো খুব সংগঠিত নয়। সেখানে সবাই জনগণের স্বার্থে রাজনীতি করতে আসেনি। অন্য দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেই প্রধানত আরেকটি দল নির্বাচনে জিতেছে। এর ফলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পর্যায়ক্রমে জিতেছে। ক্ষমতার কাছের লোকরা দুর্নীতিপরায়ণ হলে তাদের অনেক মোসাহেব জুটে যায় এবং দলের পরাজয় নিশ্চিত করে।
এটা বললে ভুল হবে না যে সব কিছু সত্ত্বেও দুটি জোটের দলের প্রধান পার্থক্য আদর্শগত। আদর্শের কারণেই দুজোটের অনুসারীরা দুভাগে বিভক্ত। আদর্শের সঙ্গে আপোস করা কঠিন। এক্ষেত্রে আদর্শের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকা। জামাতের অনুসারীরা তাই বিরোধীদের নাস্তিক বলে অভিহত করে এবং দেখা গেছে যে তারা শক্তিও প্রয়োগ করে। বিএনপি ধর্মের ব্যবহারের কথা না বললেও অবস্থার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে। তাদের নেত্রীর কার্যকলাপের দিকে তাকানো যাক। দীর্ঘদিন ভারত বিরোধী প্রচারণার পর তিনি ভারত সফরে গেলেন। কথা দিয়ে এলেন বাংলার মাটিকে ভারতের সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। তারপর ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরে এলে বেগম জিয়া তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন না। ধর্মকে রাজনীতিতে ব্যবহার করবার এটি একটি উদাহরণ।
আওয়ামী লীগের অনুসারীরা নীতিগতভাবে রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারের বিপক্ষে। তারা ১৮ দলের জোটকে স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি বলে বর্ণনা করেন। নিজেদের তারা ধর্ম বিরোধী বলে না এবং সেটা সত্যও নয়।
ধর্ম যেখানে দুই জোটকে বিভক্ত করেছে সেখানে দুই জোটের মধ্যে আপোস সম্ভব নয়। অবশ্যই নয়। কিন্তু সত্যই কি ধর্ম দুটি দলের বিভক্তির কারণ। এটা ভালো করে ভেবে দেখতে হবে। গত চারটি নির্বাচনের কথা ভাবা যাক। ধর্ম নয় অন্যান্য বিষয়ের জন্য নির্বাচনের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। এই কথা জনসাধারণকে ভালো করে বলতে হবে। এতে করে জনসাধারণ বুঝতে পারবে যে ধর্মকে শুধুমাত্র ব্যবহার করা হয়। জনসাধারণ যখন বলবে দয়া করে আপনাদের আসল রাজনৈতিক কথা বলুন। তখন যারা রাজনীতি করেন সেটা বুঝতে পারবেন। যখন জনসাধারণ বলবে নিজেদের দুর্নীতি ছাড়ুন তখন রাজনীতিবিদরা তা শুনবেন। যখন জনসাধারণ বলবে নিজেদের স্বার্থের কারণে জনগণের এবং সরকারের জানমাল ধ্বংস করবেন না, তখন রাজনীতিবিদরা তা শুনবেন। রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে যে নির্বাচনে জয়-পরাজয় আছে। মেনে নিতে হবে যে নির্বাচনে পরাজিত হলে পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত বিরোধী দলে থাকতে হবে। এবং সংসদে যেতে হবে। দুই নেত্রীকে যুগ যুগ ধরে একসঙ্গে বসতে বলে লাভ নেই। সংলাপের কথা বলে লাভ নেই। দুই নেত্রী একসঙ্গে বসে কি করবেন? এর আগে তারা তো রান্না করে একে অন্যকে পাঠিয়েছিলেন। এতে করে কি সমস্যার সমাধান হয়েছিল? আসলে আমাদের সংকটের কারণ আমাদের বুঝতে হবে। সেই কারণগুলোকে জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে হবে। পরবর্তী নির্বাচনে জনসাধারণ দোষীদের শাস্তি দেবে। তবে একটা কথা ঠিক যে গণতন্ত্রের উন্নতি সাধন তীব্র গতিতে হয় না। যারা হরতাল ডাকে তাদের সমর্থক ব্যবসায়ীরা যখন বুঝবেন যে হরতালে তাদেরও ক্ষতি হয় এবং তাদের দল ক্ষমতায় এলে অসৎ উপায়ে তা পুষিয়ে নেয়া যায় না তখন তারা তাদের নেতাদের হরতাল ডাকতে বারণ করবেন। সাধারণ মানুষের ক্ষতির কথা তারা বুঝতে পারবেন না যারা হঠাৎ করে বিশাল ধনী হয়েছেন। যখন জনসাধারণ নিজেদের শক্তি সম্বন্ধে সজাগ হবেন তখন মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধ হতে শুরু করবে। যাদের রাজনীতি করবার উদ্দেশ্য জনগণের কল্যাণ করা তাদের উচিত হবে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। সংকটের কারণ দূর না করে শুধু আপোসের কথা ভাবলে সংকটকে পুষে রাখা হবে শুধু এবং এর ফলে ভেতরে ভেতরে সংকটের আকার বাড়বেই শুধু।
ওয়াহিদ নবী : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও লেখক।
ভোরের কাগজ : শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন