এম এ রশিদ
৪২ বছর কাল বাঙালির অন্তরে লালিত একটি মহাস্বপ্ন। স্বপ্নটি ইতিহাসের চরম সন্ধিলগ্নে অর্থাৎ ১৯৭১ সালে সারা জাতি যখন নরঘাতক পাকিদের নির্যাতনের হাত থেকে নিষ্কৃৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে জান-মাল-সম্ভ্রম বাজি রেখে নারকীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত তখন এ দেশেরই যে, মুষ্টিমেয় সংখ্যক কুলাঙ্গার জাতির আশা আকাক্সক্ষাকে প“লিত করে ঐ নরঘাতক পাকি জল্লাদদের দোসর বনে যায়। তাদের বিচার করা কুলাঙ্গাররা কেবল ঐ চরম বৈরি শক্তির অনুকূলে রাজনৈতিক সমর্থনই যোগায়নি- বরং তারা ওদের পক্ষ নিয়ে মুক্তিকামী বাঙালি জনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে; শান্তিবাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস প্রভৃতি সংগঠনের মাধ্যমে মুক্তি বাহিনীর সদস্য ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আত্মীয় স্বজন, মুক্তি সমর্থক রাজনৈতিক দলের সদস্য ও অমুসলিম জনতার উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছে।
নিজেরাতো বাঙালি নারীদের সম্ভ্রমহানি করেছেই, অধিকন্তু, ঐ অনৈতিক কাজের জন্য পাকি জল্লাদদের হাতেও মা-বোনদের তুলে দিয়েছে। অসংখ্য মুক্তিকামী বীর জনতার বাড়িঘর লুণ্ঠন করেছে, তাদের জায়গা জমি অবৈধভাবে দখল করেছে ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে তাদের অন্তরের মুক্তির বাসনাকে ধুলিসাৎ করার অপচেষ্টার পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে।৪২ বছর কাল বাঙালির অন্তরে লালিত একটি মহাস্বপ্ন। স্বপ্নটি ইতিহাসের চরম সন্ধিলগ্নে অর্থাৎ ১৯৭১ সালে সারা জাতি যখন নরঘাতক পাকিদের নির্যাতনের হাত থেকে নিষ্কৃৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে জান-মাল-সম্ভ্রম বাজি রেখে নারকীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত তখন এ দেশেরই যে, মুষ্টিমেয় সংখ্যক কুলাঙ্গার জাতির আশা আকাক্সক্ষাকে প“লিত করে ঐ নরঘাতক পাকি জল্লাদদের দোসর বনে যায়। তাদের বিচার করা কুলাঙ্গাররা কেবল ঐ চরম বৈরি শক্তির অনুকূলে রাজনৈতিক সমর্থনই যোগায়নি- বরং তারা ওদের পক্ষ নিয়ে মুক্তিকামী বাঙালি জনতার বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছে; শান্তিবাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও আলশামস প্রভৃতি সংগঠনের মাধ্যমে মুক্তি বাহিনীর সদস্য ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল আত্মীয় স্বজন, মুক্তি সমর্থক রাজনৈতিক দলের সদস্য ও অমুসলিম জনতার উপর অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়েছে।
স্বাধীনতার সেই ঊষালগ্ন থেকে দেশের আপামর জনতা ঐ সকল কুলাঙ্গার শীর্ষ রাজাকার যারা মুক্তিযুদ্ধকালে নরহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণ প্রভৃতি অপকর্মে লিপ্ত ছিল তাদের বিচার দাবি করে আসছিল। ১৯৯২ সালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি একটি প্রতীকী গণআদালত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে লাখ লাখ দর্শক/ শ্রোতার সামনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতীকী বিচার অনুষ্ঠান করেÑ যাতে কয়েকজন রাজাকার কর্তৃক মৃত্যুদ-যোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তৎকালীন খালেদা সরকার ঐ প্রতীকী গণআদালত অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করে শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ এর উদ্যোক্তাদের নানাভাবে হয়রানি করে। এর পরে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সময় কেটে যায়। অবশেষে নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ঘোষনা অন্তর্ভুক্তির ফলে তরুণ সমাজের বিপুল সমর্থনে ২০০৯ সনে ১৪ দলীয় জোটের ক্ষমতায় আরোহন ঘটে। ২০১০ সাল থেকে কতিপয় নির্দিষ্ট যুদ্ধাপরাধীর মানবতা বিরোধী কর্মকা- যথা হত্যা, খুন, ধর্ষন, লুন্ঠন ও ধর্মান্তকরণের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ১ম রায়ে জনৈক বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদ- দেয়া হয়। এই রায় দেশবাসীর অন্তরে বাকি রাজাকারদেরও চরম শাস্তির সম্ভাব্যতার আশা জাগায়। কিন্তু জনতার আশা ভঙ্গ করে ট্রাইবুনালের ২য় রায়ে জনৈক কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়া সত্বেও তার যাবজ্জীবন শাস্তি প্রদান জাতিকে আশাহত করেÑ বিশেষ করে দেশের তরুণ সমাজকে আশাতীত ক্ষুব্ধ ও ক্ষিপ্ত করে তুলে।
আশাভঙ্গের বিষাক্ত ছোবলে ক্ষুব্ধ হয় সারা দেশ। কিন্তু সর্বকাল ও সর্বদেশের মতো আমাদের তরুণ সমাজের মধ্যেই প্রথম জাগরণ ঘটে। বিশিষ্ট কতিপয় তরুণ ব্লগার প্রথমে আন্তঃযোগাযোগের মাধ্যমে শাহবাগ চত্বরে সমাবেশ ঘটায়। এ ঘটনা মিডিয়াতে বেশ প্রচারণা পায়। ফলে প্রতিনিয়ত ঐ চত্বরে অগণিত জনতা উক্ত যাবজ্জীবন রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে থাকে। আজ প্রায় ৫ সপ্তাহ কাল একাদিক্রমে এই শান্তিপূর্ণ ও অরাজনৈতিক প্রতিবাদ সমাবেশ সক্রিয় আছে।
এক হিসেবে বলা যায় যে, একমাত্র জামায়াত শিবির এই প্রতিবাদ সমাবেশের বিপক্ষে। বিএনপি সম্পর্কে বলা যায় যে তারা এই আকষ্মিক গণজামায়েত/ প্রতিবাদ সমাবেশের বিপক্ষে। কিন্তু প্রকাশ্যতঃ তারা এর বিরুদ্ধে বলতে প্রস্তুত নয়। তাদের অন্তনির্হিত উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্রমান্বয়িক অপপ্রচারণার মাধ্যমে এই যুবআন্দোলনকে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের কাজে ব্যবহার করা। তারা বলতে চায় যে রাজাকারের ফাঁসি দেশের একমাত্র সমস্যা নয়- বরং তারা তরুণ সমাজকে সবক দিতে চায় যে সরকারের বিরুদ্ধে আনীত নানাবিধ দুর্নীতি, অপশাসন ও পদ্মাসেতু নির্মাণে ব্যর্থতা ইত্যাদি ইস্যুগুলো আন্দোলনের এজেন্ডাভুক্ত করা হোক। অধিকন্তু তারা নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও এজেন্ডাভুক্ত করার দাবী তুলে। কিন্তু আপামর জনতা লক্ষ্য করে আসছে আন্দোলনরত তরুণ সমাজ নিজেদের অরাজনৈতিক চরিত্র অক্ষুন্ন রাখতে বদ্ধপরিকর। জামায়াত-বিএনপি ব্যতীত দেশের সমস্ত বুদ্ধিজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা ক্রমান্বয়ে প্রজন্ম চত্বরে সমবেত হয়ে রাজাকারদের ফাঁসির ও জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছে। জামায়াত শিবিরপন্থী ব্লগার ও মিডিয়াগুলো আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানাবিধ কুরুচিপূর্ণ অপপ্রচারে লিপ্ত আছে। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও নেতৃবৃন্দও তাদের সমর্থক মিডিয়ার অপকৌশলে আন্দোলনকে বিপথগামী ও জাতীয় স্বার্থ বিরোধী আখ্যায়িত করার অপপ্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
এ পর্যন্ত আন্দোলকারীদের অর্জন বলতে বুঝায় সরকার কর্তৃক ট্রাইবুন্যাল আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামী পক্ষ উভয়কে উচ্চ আদালতে আপিল করার সমান সুযোগ দেয়া। এখন প্রজন্ম আন্দোলনের অপর মুখ্য দাবি হচ্ছে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক এই আইনের অধীনে সাজাপ্রাপ্তদের সাজা মওকুফ বা হ্রাস করার সাংবিধানিক ক্ষমতা রহিত করা। আরেকটি সুদূরপ্রসারী দাবি হলো জামায়াত শিবিরের রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। বর্তমানে যে গণজাগরন দেখা দিয়েছে তার পরিধি ও বিস্তৃতির বিশালতা উপেক্ষা না করে সরকারের উচিৎ হবে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে অথবা যে কোনো আইনসম্মত উপায়ে অন্তত পক্ষে জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং অধিক সংখ্যক ট্রাইবুন্যাল গঠন করে দলমত নির্বিশেষে সকল স্বাধীনতা বিরোধী, খুনি, ধর্ষক, লুণ্ঠনকারী ও ধর্মান্তর কারীদেরকে মৃত্যু দ-ের সাজা প্রদান ত্বরান্বিত কর। জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনবোধে গণভোটের আয়োজন করা যায়।
প্রজন্ম আন্দোলনের বৈশিষ্টগুলোর প্রতি আলোকপাত করা অতি জরুরি। প্রথমত আন্দোলনের জন্য কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়ে মৃত্যুদ-ের পরিবর্তে একজন অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান জনগণের দীর্ঘ লালিত আশা ভঙ্গ করায় তরুণ সমাজে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগের স্ফুলিঙ্গ প্রজ্জ্বলিত হওয়ায় সীমিত সংখ্যক তরুণ ব্লগার শাহবাগ স্কয়ারে সমবেত হয়ে যাবজ্জীবন বা অপর কোনো নিম্নতর সাজার পরিবর্তে সকল রাজাকারের একমাত্র সাজা মৃত্যুদ- দাবি করে সেøাগানের পর সেøাগান দিতে থাকে। এ দাবি জনগণের প্রাণের দাবি হওয়ায় বিনা প্রস্তুতিতে কারো কোনো আহ্বান ছাড়াই দেশের আপামর তরুণ সমাজ সংঘবদ্ধ হয়ে সমস্বরে আওয়াজ তুলতে থাকে রাজাকারের ফাঁসি চাই। প্রতিদিন অগণিত তরুণ ২৪ ঘণ্টা সেøাগানে সেøাগানে, গানে, কবিতায় ও নৃত্যের ভঙ্গিতে প্রজন্ম চত্বরে আগত আবাল বৃদ্ধ বনিতাকে মোহাবিষ্ট করে রাখে। প্রজন্ম চত্বরে এসে প্রতিবাদী সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য কোনো পোস্টার বিলি করা হয়নিÑ সরকারি বা বিরোধী দলের কোনো প্রধান নেতা/নেত্রী গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ রাখবেন এমন কোনো মাইকিং করা হয়নি। এমনকি দৈনিক পত্রিকায় কোনো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগ্রহী জনতাকে উৎসাহিত করা হয়নি। কেবলমাত্র টেলিভিশন চ্যানেলে প্রজন্ম চত্বরের সংবাদ ও জনসমাগমের দৃশ্য দেখে এবং রাজাকারের ফাঁসি চাই সেøাগানে আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন পূর্বদিনের তুলনায় অধিক সংখ্যায় লোক সমাগম ঘটেছে। জনগণ টেলিভিশনের পর্দায় সবিস্ময়ে অবলোকন করছে রাজাকার/খুনি/ধর্ষকদের প্রতি সাধারণ লোকের কী গভীর জিঘাংসার মনেবৃত্তি জাগ্রত হয়েছে।
প্রজন্ম সমাবেশ পুরুষ মহিলা ও যুবক-বৃদ্ধা নির্বিশেষে সকল দর্শক শ্রোতাদেরকে আন্দোলিত করে। আন্দোলনের প্রথম বৈশিষ্ট এর স্বতঃস্ফূর্ততা। বিনা সাংগঠনিক আহ্বানে, বিনা প্রস্তুতিতে প্রাণের আবেগে প্রত্যহ সবাই প্রজন্ম চত্বরে সমবেত হয়। আন্দোলনের নেই কোনো রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, নেই কোনো আর্থিক সহায়তা। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই গণজাগরণের নেই কোনো স্বীকৃত নেতৃত্ব। দিনে দিনে ৫ সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলো- আন্দোলনের স্বতঃস্ফূর্ততা কোনোভাবেই হ্রাস পাচ্ছে না। বরং বিরোধী পক্ষ শিবিরের নৃশংসতায় একজন উদ্যোক্তা ব্লগার প্রকৌশলী রাজীব আহমেদ শহীদ হওয়ায় জনগণ আরো দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়েছে এবং সমবেত জনতা শপথ নিয়েছে যে রাজাকারের ফাঁসির দাবি ও জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি আদায়ের মাধ্যমে এই দুঃখজনক হত্যাকা-ের জবাব দেয়া হবে। সম্প্রতি একজন আন্দোলকারীর পুত্র মেধাবী ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে এবং প্রকৌশলী সানীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় চাপাতি দ্বারা আঘাত করা হয়েছে। তৃতীয় ও অধিক উল্লেখ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আন্দোলনের শান্তিপ্রিয়তা। নেতৃত্বহীন এই আন্দোলনকে বিপথগামী করে অশান্তি ছড়িয়ে দেয়ার জামাতী পরিকল্পনা এখনও সফলতার মুখ দেখতে পায়নি। তারা যে আন্দোলনকে ব্যর্থ করার সুপরিকল্পিত প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে তা পশ্চিমা দেশের কিছু কিছু মিডিয়া ও মানবাধিকার সংস্থার অবস্থান থেকে নিশ্চিত আঁচ করা যায়। উল্লেখ্য, জামাতীদের ‘সোনার বাংলা’ ব্লগে ১৭ জনের হিট লিস্ট প্রস্তুত করা এবং তার প্রথম অবস্থানকারীকে ইতিমধ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা এই পরিকল্পনারই অংশ। রাজিব হত্যাকা- জনগণকে সহিংসতার দিকে উষ্কে দিতে পারতো। কিন্তু আন্দোলনকারীরা ধৈর্য্য ধরে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া জামায়াত প্রায়শই হরতাল আহ্বান করে উহা সফল প্রমাণ করার জন্য সাধারণ খুন খারাবি, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বিশেষ করে পুলিশের প্রতি আক্রোশ মেটানোর আশ্রয় নেয়। এসব হিংস্র ও হিংসাত্মক কর্মকা- সযতেœ উপেক্ষা করে আন্দোলনে লিপ্ত তরুন প্রজন্ম অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় আন্দোলনকে ক্রমাগত সাফল্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সাম্প্রতিককালে আরব বসন্ত নামের আন্দোলন ধারণাটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তিউনিশিয়া, লিবিয়া, মিসর ও সিরিয়া এসব আরব দেশে আরব বসন্ত নামে আন্দোলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে/হয়েছে। কোথাও কিন্তু রক্তপাতহীন ও শান্তিপূর্ণ পন্থায় ওসব আন্দোলন পরিচালনা করার সুযোগ ছিল না। জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সেসব দেশের অগণিত জনতাকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করতে হয়েছে। প্রত্যেক দেশেই অসংখ্য মানুষ মানবাধিকারের দাবিতে ও গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে। কিন্তু প্রজন্ম আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট হচ্ছে এর নিতান্ত অহিংসতা ও শান্তি-নির্ভরতা। প্রস্তাবিত চট্টগ্রাম সমাবেশ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে একদল মাদ্রাসার শিক্ষক কর্মসূচি ঘোষণা করে। রক্তপাত ও অশান্তি এড়াতে আন্দোলনকারীরা সমাবেশ স্থগিত করেছে। আন্দোলন যেভাবে সীমিত ও অরাজনৈতিক নেতৃত্বে চলছে সরকার যেন তাতে হস্তক্ষেপ না করেÑ কেননা তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। তবে সরকারকে আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বেষ্টনি দিতে হবে যাতে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে পড়ে আন্দোলন কারীদের মধ্যে বিঘœ ও বিভেদ সৃষ্টি করে আশু মহৎ অর্জনকে ভ-ুল করে দিতে না পারে।
প্রজন্ম আন্দোলনের সূচনা সাইবার আন্দোলনের মাধ্যমেÑ পরে তা গড়িয়ে মহীরুহ আকারের গণআন্দোলনের রূপ নেয় শাহবাগ চত্বরে। মাসাধিককাল ব্যাপী আন্দোলন শহরে, বন্দরে গ্রামগঞ্জে, স্কুল-কলেজে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজাকারের ফাঁসি চাইÑ জামায়াত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করো এ দুই দাবির মধ্যে এ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সীমিত। প্রথম দিকে অঢেল অর্থ বিলিয়ে জামায়াত পশ্চিমা মিডিয়াতে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যে বাঙালিরা রাজাকারের বিচার চায় না। এখন শাহবাগের আন্দোলনের ফলে সারা বিশ্বে তাদের এই অপপ্রচারের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে তারা সাইবার যোদ্ধা প্রজন্ম আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নাস্তিক্যবাদ প্রচার ও মহানবীর বিরুদ্ধে কটূূবাক্য প্রচারের অসত্য ও বিকৃত অভিযোগ উত্থাপন করে ধর্মকে পুঁজি করে আজন্ম লালিত সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা যা কিছু করছে, প্রকাশ্যে করছেÑ ধর্ম বিরোধী কোনো উক্তি প্রজন্ম জাগরণ মঞ্চ থেকে উচ্চারিত হয় না, তাদের একটি সেøাগান “এসো ভাই, এসো বোন, গড়ে তুলো আন্দোলন” জনমনে সাড়া জাগিয়েছে। ২০শে ফেব্রুয়ারি অসংখ্য বেলুন আকাশে উড়িয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মাকে আশ্বাস দিয়েছে “তোমরা মেঘের আড়ালে ঘুমিয়ে থাকো, তোমাদের উপহার হিসাবে প্রাপ্ত স্বাধীন বাংলাদেশটাকে আমরা দেখে রাখবো”। এসব কথা মানুষের অন্তরকে বিপুলভাবে নাড়া দিচ্ছে। আর জামাতীরা বলছে কোথায় হারিয়ে গেলো তৌহিদী জনতা। প্রজন্ম আন্দোলনের জবাব হচ্ছে, তারা হারিয়ে যায়নি- তারা আছে ১৬ কোটি জনতার মাঝে।
সর্বশেষ কথাটা হোচ্ছে প্রজন্ম আন্দোলন ইতিমধ্যে দেশে ও বহির্বিশ্বে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের যে পরাকাষ্ঠা সঞ্চারিত করেছে বিএনপির কুপরামর্শে জামায়াত শিবির আরো ভয়ঙ্কর আকারে হত্যাকা- ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে গণআন্দোলনের সেই ইতিবাচক শান্তিপূর্ণ ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে সচেষ্ট ও সক্রিয় থাকবে সে সম্পর্কে সরকার ও আন্দোলনকারী প্রজন্ম উভয়কেই সজাগ ও সক্রিয়ভাবে তৎপর থাকতে হবে।
এম এ রশিদ : সাবেক যুগ্মসচিব।
ভোরের কাগজ : শুক্রবার, ২২ মার্চ ২০১৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন