রেজাউল করিম
বর্তমান প্রজন্মের তরুণরাও দেশকে নিয়ে ভাবে, এর প্রমাণ শাহবাগ গণজাগরণ। আমাদের শরীরে সেসব পূর্বপুরুষের রক্ত, যারা ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষার জন্য, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভা বাতিলের বিরুদ্ধে, ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনে, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে, ১৯৭০ সালে নির্বাচনে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এবং ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। তরুণরা শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখার জন্য এ প্রজন্মের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ।
শাহবাগের গণজাগরণ সবাইকে সমবেত করেছে অসাম্প্রদায়িক
চেতনায় যুদ্ধাপরাধীমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে। শাহবাগের ৫
ফেব্রুয়ারির গণজাগরণের ছোঁয়া লেগেছে আমার প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং আমার আবাসস্থল চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবে। কোনো দলীয়
ব্যানার কিংবা সাইনবোর্ড হাতে না নিয়েই স্রেফ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়
উজ্জীবিত হয়ে গণসমাবেশ করা সম্ভব, তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না।
গণজাগরণের প্রথম দিন থেকেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়েছেন,
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। প্রতিদিন বেড়েছে জনসমাবেশ। শুধু কি
সমাবেশ শাহবাগ ও চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবে? ওই গণজাগরণ ছড়িয়ে গেছে দেশ
ছাড়িয়ে বিদেশেও। আমিও তরুণ বর্তমান প্রজন্মের তরুণরাও দেশকে নিয়ে ভাবে, এর প্রমাণ শাহবাগ গণজাগরণ। আমাদের শরীরে সেসব পূর্বপুরুষের রক্ত, যারা ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষার জন্য, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভা বাতিলের বিরুদ্ধে, ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলনে, ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে, ১৯৭০ সালে নির্বাচনে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এবং ১৯৯০ সালে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। তরুণরা শুরু করেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধরে রাখার জন্য এ প্রজন্মের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ।
শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে শরিক হতে গিয়েছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সমাবেশ ও চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাবের গণজাগরণ মঞ্চে। সর্বদলীয় ছাত্র ব্যানারে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে ছাত্রছাত্রীরা সমবেত হয়েছিল বিচারের দাবিতে। বিশেষ করে, ৭ মার্চের সমাবেশে সমবেত হয়ে নিজের কানে অজান্তে বেজে ওঠে সেই ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ_ 'ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো... আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি... এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।'
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম, জেল-জুলুম, অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বাঙালি। দীর্ঘ নয় মাস ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে এবং দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশ নামে দেশটি। একাত্তরে বাঙালিকে যুদ্ধ করতে হয়েছিল একটি স্বাধীন দেশের জন্য, একটি পতাকার জন্য, একটি আত্মপরিচয়ের জন্য। সেদিন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। আজ গ্রামে গ্রামে মসজিদে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, রাস্তায় রাস্তায় বোমা ফাটাচ্ছে, উস্কে দিচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার দাঙ্গা, ভাঙছে শহীদ মিনার, পোড়াচ্ছে জাতীয় পতাকা এবং সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দির পোড়াচ্ছে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিভ্রাট হচ্ছেন।
আজকের এ অবস্থার জন্য বাংলাদেশের জন্ম হয়নি। বিয়ালি্লশ বছরে অনেক হয়েছে, 'এনাফ ইজ এনাফ'। আজ আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে এসব সাম্প্রদায়িকতা, অপশক্তি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে। আমরা যদি এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে না পারি, তাহলে একদিন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস মুছে যাবে। লেখা হবে, মুক্তিযোদ্ধারা ভুল করেছিল এবং রাজাকাররাই ছিল সঠিক। আজ সময় এসেছে, জটিল রাজনীতির সব হিসাব-নিকাশ ভুলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যুদ্ধাপরাধীমুক্ত সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের।
রেজাউল করিম :চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন