সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৩

গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে

সমকাল
যুদ্ধাপরাধীদের মিত্ররা পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে। একদিকে জামায়াত-শিবির চক্র এবং রাজনৈতিক জোট (১৮ দলীয় জোট) গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে 'নাস্তিকতা'র নির্জলা মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে, অন্যদিকে তাদের মিত্ররা দলীয়করণ, বিভক্তির অভিযোগ তুলে অপপ্রচার চালাচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে। গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ নেতৃত্ব স্পষ্টভাবে সমকালকে জানিয়েছেন, নেতৃত্ব কিংবা অন্য কোনো ইস্যু নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। কোনো বিশেষ দলের প্রতি আনুগত্যও নেই। তাদের আনুগত্য রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি, ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদানের প্রতি। গণজাগরণ মঞ্চের দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং তাদের দল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। এই চেতনা এবং দাবির প্রতি যেসব ব্যক্তি কিংবা সংগঠনের সমর্থন রয়েছে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচিতে আসছেন, যুক্ত থাকছেন। গণজাগরণের এই ঐক্য এবং শক্তিতে ভীত যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের মিত্ররা পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচারের মাধ্যমে গণজাগরণ মঞ্চ সম্পর্কে জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তাদের এই চেষ্টা সফল হবে না।

গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার সমকালকে বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের ঐক্য নিয়ে একেবারেই ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে জামায়াত-শিবির যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তার অংশ হিসেবেই এখন অনৈক্য এবং দলীয়করণের অভিযোগ তোলা হচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ৫ ফেব্রুয়ারি যারা প্রথম শাহবাগে সমেবত হওয়ার জন্য ডাক দিয়েছিলেন, যারা সেদিন সামনে থেকে প্রথম মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারাই এখনও গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি সমন্বয় করছেন, বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। এখানে বিন্দুমাত্র অনৈক্য কিংবা বিভক্তির সুযোগ নেই। ছাত্র সংগঠনের যারা শুরু থেকে প্রজন্ম চত্বরে ছিলেন, তারা এখনও গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে একইভাবে একাত্ম আছেন। মঞ্চে বক্তব্যের সময় কে কোন পাশে দাঁড়াচ্ছেন তা নিয়ে বিভক্তি কিংবা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন তোলা খুবই হাস্যকর। ডা. ইমরান দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, যত অপপ্রচার হোক, বিভ্রান্তি ছড়ানো হোক, গণজাগরণ মঞ্চ তার দাবি, চেতনা এবং লক্ষ্য থেকে এক চুলও সরে যাবে না। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ কোটি জনতাই গণজাগরণ মঞ্চের একমাত্র শক্তি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সমকালকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একজন হিসেবেই গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে তিনি শুরু থেকে একাত্ম রয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে বলে তার সংগঠন ছাত্রলীগও এ আন্দোলনের সঙ্গে একইভাবে একাত্ম। এখানে সাংগঠনিক প্রভাব বা নিয়ন্ত্রণের কোনো ঘটনা ঘটেনি, তার সুযোগও নেই। গণজাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক, তরুণ ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট এবং অন্যান্য প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনের নেতারা একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, পরে সবাই একসঙ্গে কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এখানে কোনো ধরনের বিভক্তি নেই।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এস এম শুভ সমকালকে বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে অনৈক্য এবং দলীয়করণের অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গণজাগরণ মঞ্চ মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও চেতনার পক্ষে যে ঐতিহাসিক জাতীয় ঐক্যের সৃষ্টি করেছে তাকে আঘাত করার জন্যই এ ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বরং গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য কমে এসেছে, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সংগঠনগুলো অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ।

ব্লগার ও কলামিস্ট ফারুক ওয়াসিফ এ বিষয়ে গতকাল রোববার তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, শাহবাগের বড় অর্জনটা ধরে রাখতে হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। দল বা নেতা বা কর্মসূচি দিয়ে এ ঐক্য তৈরি হয়নি। এ ঐক্য তৈরি করেছে হত্যাকারীদের প্রতি ঘৃণা ও বিচারের শপথ। সুতরাং দল, নেতা বা কর্মসূচির সমালোচনাকে জাতীয় ঐক্যের বিভক্তি বলে চিনবেন না, চেনাবেনও না। 
সোমবার | ১৮ মার্চ ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন