সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০১৩

কেউ দেখেননি ব্লগাররা কী লিখেছে

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ “গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগাররা মহানবী (স) এবং ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর লেখা লিখেছেন বলে শুনেছি। আমি দেখিনি। কর্মীরা দেখেছেন। ব্লগাররা কী লিখেছে তা না দেখলেও পরে ‘আমার দেশ’ পত্রিকায় তা পড়েছি। সেখানে পড়েই আমরা জেনেছি যে, ব্লগাররা তাদের ব্লগে মহানবীকে (স) নিয়ে খারাপ কথা বলেছে।”

ব্লগে গণজাগরণ মঞ্চের ব্লগারদের মহানবীর বিরুদ্ধে কোন লেখা আপনি নিজে পড়েছেন কিংবা দেখেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তরুণ প্রজন্মকে নাস্তিক বলে আন্দোলনে নামা হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক আনম আহমদউল্লা এভাবেই বলছিলেন তাঁদের রাজপথে নামার কারণ। নিজে দেখেননি ব্লগারদের কোন লেখা, তবে আমার দেশে লিখেছে তা থেকেই আন্দোলন। তবে কেবল তিনিই নয়, এই সংগঠনসহ গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী ইসলামী দলগুলোর প্রতিটি নেতাকর্মীরই উত্তর একই। কেউ দেখেননি ব্লগাররা কী লিখেছে। প্রত্যেকেই বলছেন, আমি না অন্যরা দেখেছে। কে দেখেছে তাও বলতে পারছেন না তাঁরা। এভাবেই মিথ্যা প্রচারের ওপর ভর করে দেশ ও বিদেশে যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে চলছে নানা অপতৎপরতা। এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, পবিত্র ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে জেগে ওঠা তরুণ প্রজন্মসহ প্রগতিশীল আন্দোলন নিয়ে বিকৃত আর মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল নিয়েছে জামায়াত-শিবির ও তার সহায়তাপুষ্ট দেশী-বিদেশী চক্র। স্বাধীনতাবিরোধী গণমাধ্যম, ফেসবুক, ব্লগ, টুইটারসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা হচ্ছে সাধারণ মুসল্লিদের। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে আন্দোলনরত বিভিন্ন ধর্ম, মত ও শ্রেণীপেশার লাখো কর্মী-সমর্থককে ‘নাস্তিক’ প্রমাণ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে মিথ্যা তথ্য ও ছবি। ঘাতক সাঈদীকে চাঁদে দেখার অপপ্রচার চালিয়ে নৃশংসতাই শেষ নয়, করা হচ্ছে পবিত্র কাবা শরীফের ইমামদের ছবি জালিয়াতির মতো অপরাধ। ফেসবুকে জামায়াত-শিবিরের পক্ষে সক্রিয় পেজ ুড়ঁহমমবহবৎধঃরড়হ.নফ একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ‘পবিত্র কাবা শরীফে সাঈদী সাহেবের জন্য হাজীদের দোয়া’ হিসেবে ভিডিওটিকে উপস্থাপন করা হয় । তবে ভিডিওটি ডাউনলোড করে দেখা যায়, কাবা শরীফে মুসল্লিদের মোনাজাতের দৃশ্যের সঙ্গে বাংলায় মোনাজাতের অডিও পরে যুক্ত করা হয়েছে, এমনকি ডাবিং করা মোনাজাতের কোন অংশেই একবারের জন্যও সাঈদীর নাম উচ্চারিত হতে শোনা যায়নি। এছাড়া ভিডিওর এক অংশে দেখা যায়, স্পষ্টতই বিদেশী হাজীদের মুখে বাংলা ভাষা বসিয়ে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে পবিত্র কাবা শরীফের ইমামদের মানববন্ধন- এমন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের ঘটনা ঘটেছে আমার দেশ ও সংগ্রাম পত্রিকায়। পরে সোস্যাল মিডিয়ায় চাতুরীর বিষয়টি ধরা পড়ে গেলে সংবাদ দুটি অনলাইন থেকে প্রত্যাহার করে নেয় পত্রিকা দুটি। আমার দেশের সপ্তম পাতায় নিউজটির শিরোনাম ছিল- ‘আলেমদের নির্যাতনের প্রতিবাদে কাবার ইমামদের মানববন্ধন।’ পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণেও দেখা যায় সংবাদটি। এছাড়া জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার অনলাইনেও এ বিষয়ে সংবাদ ছাপা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের নামে বাংলাদেশের আলেমদের ওপর যে নির্যাতন চলছে তার প্রতিবাদে বাদ জুমা কাবার খতিব বিখ্যাত ক্বারী শাইখ আবদুর রহমান আল সুদাইসির নেতৃত্বে মানববন্ধন করেছে ইমাম পরিষদ।’ এই সংবাদের সঙ্গে আরবী ব্যানার হাতে একটি ছবিও ছাপা হয়। এরপর নাসিম রূপক নামে ব্লগার ও ফেসবুক এ্যাক্টিভিস্ট “যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ‘দৈনিক আমার দেশ’ ও ‘সংগ্রাম’ পত্রিকার নির্লজ্জ মিথ্যাচার” শিরোনামে ফেসবুকে একটি নোট লেখেন। তিনি অনুবাদ করে দেখিয়ে দেন, যে পত্রিকা থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে তার নিচের ক্যাপশনে আরবীতে স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে খতিব পবিত্র কাবা শরীফের গিলাফ পরিবর্তন করছেন। এরপর দৈনিক সংগ্রাম তাদের সংবাদটি প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করে। আমার দেশ তাদের লিংক থেকে সংবাদটি সরিয়ে ফেলে।

‘মতিউর রহমান নিজামী সাহেব ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। প্রশিক্ষণ নিয়েই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তিনি’, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মুক্তিযুদ্ধের সময় নাবালক ছিলেন, বয়স সবে বারো কী তেরো বছর। সেই বয়সে লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্ষণ কাকে বলে কিছুই তিনি বুঝতেন না।’ শুধু তা-ই নয়, ‘আলবদর-আলশামসরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেনি, আওয়াামী লীগ, কমিউনিস্টরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে বহির্বিশ্বে জামায়াতকে বিতর্কিত করছে’- এমন সব উদ্ভট, বিকৃত এমনকি ঔদ্ধত্যপূর্ণ তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে দেশ-বিদেশে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দল জামায়াত-শিবির। জানা গেছে, রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার মোকাবেলা করতে না পেরে এখন ইন্টারনেটকে আশ্রয় করে সাইবার জগত রীতিমতো দখলে নিয়েছে এরা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, মূলত জামায়াত-শিবিরের অঙ্গ ও আর্থিক সহায়তাপুষ্ট বিভিন্ন সংগঠন এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগ, টুইটারসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিরামহীন মিথ্যা তথ্য প্রচার করে যাচ্ছে। কেবল তাই নয়, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে উদ্ভট আর মিথ্যা তথ্য সংবলিত অসংখ্য বই ও বুকলেট ইংরেজীতে অনুবাদ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে অনলাইনে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতাদের মুক্তি ইস্যুতে গোপনে সংগঠিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আছে জামায়াতের আর্থিক সহায়তাপুষ্ট দেশের কয়েকটি সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, প্রকাশ্যে তৎপরতা না চালিয়ে এরা সংগঠিত হতে ব্যবহার করছে প্রযুক্তিকে। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে স্বাক্ষর সংগ্রহ, মেইল আদান-প্রদান ও মোবাইল ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে বিদেশে চলছে তৎপরতা। যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির জন্য দেশে বিদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তাদের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে নানা কৌশলে। গ্রেফতারকৃত জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার জামাই বলে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষকের নেতৃত্বে চলছে নানা অপকৌশল। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জামায়াত-শিবিরের মিথ্যা প্রচারের চিত্র। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তেও বেরিয়ে এসেছে এ ধরনের অপকর্ম। কিন্ত একে মোকাবেলার ক্ষেত্রে নেই সরকারী কোন উদ্যোগ। এই সুযোগে ইন্টারনেটকে আশ্রয় করে সাইবার জগত রীতিমতো ব্যবহার করছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধী গোষ্ঠী। মূলত জামায়াত-শিবিরের আজ্ঞাবহ বিভিন্ন সংগঠন ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফেসবুক, ইউটিউব, ব্লগ, টুইটারসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিরামহীন মিথ্যা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অসংখ্য বই ও বুকলেট ইংরেজীতে অনুবাদ করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে অনলাইনে। এসব মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে সরকার বা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোন মহলেরই কোন ব্যবস্থা নেই কিংবা পাল্টা হিসেবে অনলাইনে সত্য তথ্য প্রচারের কোন উদ্যোগও কারো নেই। কিছু ব্যক্তি ও ছোট সংগঠন এর বিরুদ্ধে কাজ করে গেলেও জামায়াত-শিবির চক্রের তুলনায় তা খুবই নগণ্য। কারণ এই অপপ্রচারের কাজে ওরা বিপুল অঙ্কের টাকা ঢালছে। ইন্টারনেটে কনটেন্ট তৈরিসহ আপলোডের ক্ষেত্রে দেশের নামীদামী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ এমনকি বুয়েটের শিক্ষার্থীদেরও শিবিরের সদস্যদের কাজে লাগানো হচ্ছে। জড়িত কিছু শিক্ষকও।

এদিকে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এমএ আউয়াল বলেন, ইসলামের অপব্যখ্যা দিয়ে এখন যে তা-ব, হত্যাকা- জামায়াত চালাচ্ছে এটাই জামায়াতের আসল রূপ। একাত্তরে পবিত্র ইসলামের নামে এই দল গণহত্যা করেছে। মা-বোনের সম্ভ্রমহানি ঘটিয়েছে। বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, জামায়াত সন্ত্রাসী দল। এটা কোন ইসলামী দল নয়। রাজনৈতিক দলও নয়। এরা যা করে এটা কোন গণতান্ত্রিক দলের কার্যক্রম হতে পারে না। তিনি আবারও দেশবাসীকে জামায়াত সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, জামায়াত কোন ইসলামী দল নয়, ইসলামের আসল শত্রু। ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে জামায়াত একাত্তরেও গণহত্যা চালিয়েছে। ধর্মকে পুঁজি করে আবার আঘাত হানার অপচেষ্টা করছে। ওলামা-মাশায়েখ ঐক্য পরিষদের সভাপতি মাওলানা আব্দুল হালিম সিরাজ বলেন, ব্লগার রাজীব হায়দারকে ধর্মব্যবসায়ীরা খুন করেছে। এখন তারাই রাজীবকে নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছে। মৃত্যুদ- ছাড়া কাদের মোল্লার কোন রায় হতে পারে না।
সোমবার, ১৮ মার্চ ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন