শনিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৩

একাত্তরেও নষ্টরাই দেশ স্বাধীনে অস্ত্র ধরেছিল

ঢাবি প্রতিনিধি,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার বক্তব্য জনগণের প্রত্যাশার বিপরীত বলে মন্তব্য করেছেন ইমরান এইচ সরকার।

গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশে বলেছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী জনগণের প্রত্যাশা রক্ষা করেননি।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি এবং জামায়াত নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনরত গণজাগরণ মঞ্চের সমালোচনা করে একদিন আগেই বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

শাহবাগ চত্বরকে ‘নাস্তিক চত্বর’ আখ্যায়িত মুন্সীগঞ্জের এক জনসভায় তিনি বলেন, “শাহবাগের তরুণরা আইন-আদালত-বিচার মানে না। এই নষ্ট ও নাস্তিক তরুণদের নিয়ে সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা অপকর্ম করছে।”

এর প্রতিক্রিয়ায় ইমরান বলেন, “আপনার ভাষায় এই নাস্তিক আর নষ্ট ছেলেরাই দেশকে স্বাধীন করার জন্য অস্ত্র ধরেছিল, এখন তারা মুক্তিযুদ্ধের অসমাপ্ত অর্জন পুনরুদ্ধারের জন্য মাঠে নেমেছে।”

“সিদ্ধান্ত আপনার আপনি আমাদের পাশে, না খুনি-ধর্ষক জামায়াত-শিবিরের পাশে দাঁড়াবেন,” বলেন তিনি।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পর প্রথম কয়েকদিন বিএনপি এই বিষয়ে নিশ্চুপ ছিল। কয়েকদিন পর বিএনপির বিবৃতিতে তারুণ্যের এই জাগরণকে স্বাগত জানানো হয়। তবে এখন বিএনপি এর সমালোচনায় মুখর।

ইমরান বলেন, “আমরা সব সময় বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি সম্মান জানিয়ে বক্তব্য রেখেছি।

“তিনি যখন মুন্সীগঞ্জে মন্দির পরিদর্শনে যান, তখন আমরা ভেবেছিলাম তিনি জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে তার যে রাজনৈতিক বন্ধন আছে, তা ছিন্ন করার ঘোষণা দেবেন। কিন্তু তিনি তা না করে উল্টো জনআন্দোলনের বিপক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন।”

যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যে দলটি নিষিদ্ধের দাবি গণজাগরণ মঞ্চ তুলেছে, সেই জামায়াত বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র।

গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের বিরোধিতা করে আসছে ইসলামী কয়েকটি দলও। তাদের দাবি, এই আন্দোলন ‘ইসলামবিরোধী’।

এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সমাবেশে ইমরান বলেন, “আমরা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নই। আমাদের ছয়টি স্পষ্ট দাবির বাইরে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। যদি খুনি-ধর্ষকদের বিচার চাওয়া নাস্তিকতা ও নষ্ট তারুণ্য হয়- তাহলে আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও সেই বিচার দাবি করে যাব।”

আন্দোলনে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গত ৩৯ দিনের আন্দোলনে আমাদের যেমন সফলতা রয়েছে তেমনি অনেক অপপ্রচারও সহ্য করতে হয়েছে আমাদের।

“খুনি যুদ্ধাপরাধীদের মদদপুষ্ট গণমাধ্যম ও তাদের অর্থপুষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অপপ্রচারের ক্ষেত্র তৈরি করেছে।”

চট্টগ্রামে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ প্রতিহতের ঘোষণা দেয়া হেফাজতে ইসলামকে আলোচনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, তবে তারা সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইমরান বলেন, “আমরা আহ্বান জানিয়েছি, আন্দোলন সম্পর্কে যে সব বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বা আন্দোলন নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আসুন। কিন্তু কেউ আলোচনায় আসেননি, কারণ তারা যা বলছেন সেটা হচ্ছে মিথ্যাচার।”

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির যে দাবি তা সমাজে ন্যায়বিচারের যে আকাঙ্ক্ষা তা বাস্তবায়নের জন্য।”

“একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধীরা যেভাবে গণহত্যা-ধর্ষণের মতো অপরাধ সংঘটিত করেছিল সেভাবে এখনো জামায়াত-শিবির একই ধরনের হত্যা-ভাংচুরের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য গণহত্যায় জড়িত সবার বিচার করতে হবে।”

সমাবেশে সব ধর্মের মানুষের সম্প্রীতি রক্ষা করার দাবি নিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সৈয়দ ইমদাদ উদ্দীন, মহাপ্রকাশ মঠের অধ্যক্ষ কান্তিবন্ধু ব্রহ্মাচারী, মুক্তিযোদ্ধা বিশপ মাইকেল এ শাহ্‌ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক বিমান চন্দ্র বড়ুয়া।

শাহবাগ গণজাগরণের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসূলের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন আহমেদ, ঢাবি প্রক্টর আমজাদ আলী, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন, আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধীদের কার্যকলাপে কোনো পরিবর্তন আসেনি। একাত্তর সালে এরা মরণ ছোবল হেনেছিল, এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করতেই সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।”

খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “বিরোধীদলীয় নেত্রী নব্য ফতোয়াবাজ। তিনি শাহবাগের আন্দোলনকারীদের নাস্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন। আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখুন- আপনি, না শাহবাগের তরুণ প্রজন্ম,  কে নাস্তিক।”

ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান ও সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি পিনাক রায় পিন্টু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি রাশেদ শাহরিয়ার, ছাত্র ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন মাসুদ, জাসদ ছাত্রলীগ সভাপতি এহসানুল হাবিব, ছাত্র সমিতির আহ্বায়ক রায়হান সিরাজী, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ ঢাকা মহানগরের সভাপতি জুয়েল চাকমাও এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকলেও তারা বক্তব্য রাখেননি।

শনিবার সকাল সোয়া ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে এ সমাবেশ শুরু হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্প্রীতি সমাবেশের অংশ হিসেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সমাবেশ বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।

এর আগে শাহবাগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ‘ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ ব্যানারে মিছিল সমাবেশ হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজাগরণ মঞ্চের এটাই প্রথম সমাবেশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন