শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৩

জামায়াতের দালালিতে আওয়ামী লীগ নেতা আইনজীবী সাংবাদিক

তোফাজ্জল হোসেন রুবেল
রাজধানীসহ সারা দেশে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্ত করতে দালাল নিয়োগ করেছে জামায়াত-শিবির। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী আটক হলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানা বা দপ্তরে পৌঁছে যায় দালালরা। আটককৃতদের ছাড়াতে তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে। সরকারি দলের নেতা, আইনজীবী, সাংবাদিক ও সরকারি কর্মকর্তা দালালির এ কাজে যুক্ত বলে জানা গেছে।

সূত্রে জানা যায়, যে থানায় নেতা-কর্মী আটক হয় সে এলাকায় যে ব্যক্তি প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন, তাঁকেই পাঠানো হয় তদবিরের জন্য। গত কয়েক মাসে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় গিয়ে তদবির করে আটক অনেক জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীকে ছাড়িয়ে নিয়েছে এই দালাল চক্র।

দালালরা থানায় গিয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে কখনো নিজের পরিচয় দিয়ে আবার কখনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোনে কথা বলিয়ে কাজটি করে থাকে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা নজরে এলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেন। এর পর থেকে এই দালাল চক্রকে ধরতে গোয়েন্দারা মাঠে রয়েছেন।

এ বিষয়ে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, পুলিশের হাত থেকে আটক নেতা-কর্মীদের ছাড়াতে জামায়াত-শিবিরের 'লবিস্ট গ্রুপ' কাজ করছে। আটকের পরই গ্রুপটি রাজধানীর বিভিন্ন থানায় উপস্থিত হয়। বেশ কিছু আইনজীবী, সরকারদলীয় নেতা এমনকি সাংবাদিক পরিচয়ধারী কারো কারো সম্পৃক্ততা এতে পাওয়া গেছে। ওই গ্রুপের কিছু সদস্যকে আটক করে তাদের কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। গ্রুপটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশ মাঠে নেমেছে।

রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নাশকতার অভিযোগে ১৪ শিবিরকর্মীকে আটক করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই থানার ওসির রুমে সাংবাদিক পরিচয়ে আসিফ মোহাম্মদ যোনায়েদ ও রবিউল ইসলাম নামের দুজন প্রবেশ করেন। তাঁরা আটক শিবিরকর্মীদের ছেড়ে দিতে বলেন। থানার ওসি সালাউদ্দিন খান আইনি সীমাবদ্ধতার কথা বললে তাঁরা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিয়ে ফোন করান। এতেও কাজ না হওয়ায় এক পর্যায়ে ওসির ওপর তাঁরা ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেন। ওসির পক্ষ থেকে বিষয়টি ডিসি ইমতিয়াজ আহমেদকে জানানো হয়। পরে ডিসির নির্দেশে দুই 'সাংবাদিকের' ব্যাগ তল্লাশি করা হয়। তাঁদের ব্যাগে কোন থানায় কে আটক হয়েছে, তাকে কিভাবে ছাড়ানো যায়, ছাড়াতে কার সহযোগিতা লাগবে এবং যে কর্মকর্তা আটক করেছেন তাঁর সঙ্গে কার সুসর্ম্পক রয়েছে, যাকে নিয়ে তদবির করানো যায়- এসব তথ্যসংবলিত একটি ছক রয়েছে। এ ছাড়া কোন সংবাদপত্রের সাংবাদিক বা সরকারদলীয় নেতাকে দিয়ে কোন এলাকা থেকে সহজেই এ কাজ করানো যায় সে তথ্যও রয়েছে।

আটক ওই দুই ব্যক্তি জানান, কয়েক মাস ধরে সহিংসতার পর পুলিশের হাত থেকে আটককৃতদের ছাড়াতে এ কৌশল নেওয়া হয়েছে। দালাল চক্রের দায়িত্বে রয়েছেন শিবিরের প্রথমসারির কয়েকজন নেতা। তাঁরা সংবাদমাধ্যমের জামায়াত-শিবির সমর্থক লোকজনের তালিকাও করেছেন। আটকের পরই দায়িত্বরত ব্যক্তিরা সংবাদকর্মী, আইনজীবী, সরকারদলীয় নেতা ও ঢাকায় অবস্থানরত গোপালগঞ্জের প্রভাবশালী নেতাদের দিয়ে তদবির শুরু করেন। ব্যর্থ হলে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এ কাজে ব্যবহার করা হয়। পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে নিজেদের ঘরানার পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের ব্যবস্থাও করেন তাঁরা। এ ক্ষেত্রে জামায়াত-শিবির সমর্থক সংবাদকর্মীদের শরণাপন্ন হন তাঁরা।

জানা গেছে, থানাভিত্তিক দালাল চক্রের সহায়তার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নামের তালিকা তৈরি করেছেন তাঁরা। মিরপুর মডেল থানার ওসি সালাউদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, থানায় অনেক ধরনের লোকজনই তদবির নিয়ে আসে। তবে 'লবিস্ট গ্রুপের' কৌশল ভিন্ন। তারা বিভিন্ন মহলের লোকজন দিয়ে আটক জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। আটককৃতদের মুক্তি না দিলে বদলিসহ নানা ধরনের হুমকি দেয়। আবার অনেক সময় সরকারদলীয় নেতাদের কাছ থেকে পরিচয়পত্র নিয়ে আসে।

জামায়াত-শিবিরের দালাল চক্র নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে তদন্তে নেমেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। থানা পর্যায় থেকে তালিকা করে ডিবির কাছে ইতিমধ্যে জমা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। দালাল চক্রের সদস্যদের ধরতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আটক নেতাদের ছাড়াতে জামায়াত-শিবিরের দালাল নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কৌশলগত কারণে বেশি কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।'

Source: http://www.kalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=news&pub_no=1196&cat_id=1&menu_id=13&news_type_id=1&index=6

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন