বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৩

শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা খুঁজছে মানুষ

কাজী সিরাজ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অতিসম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনায় সর্বস্তরের শান্তিপ্রিয় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর রাজনৈতিক সহিংসতার মাত্রা বেড়ে যায়। কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পর জামায়াতিদের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি পরিলক্ষিত হয়। এ রায়ের প্রতিবাদে জামায়াত হরতাল করলেও সহিংসতার মাত্রা ছিল কম। তখন রিঅ্যাকশনটা বরং বিপরীত দিক থেকে হয়। অর্থাৎ নতুন প্রজšে§র একটি অংশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শাহবাগে তারা প্রতিষ্ঠা করে জাগরণ মঞ্চ।
তারা কাদের মোল্লাসহ সব মানবতাবিরোধী অপরাধীর সর্বোচ্চ দণ্ড ফাঁসি দাবি করে। জামায়াত-শিবির তার পাল্টা জবাব দিতে থাকে তাদের বন্দি নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার দাবিতে রাষ্ট্র শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মাধ্যমে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তারা যেন জানবাজ এক লড়াইয়ে নেমে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। বেসরকারি হিসাবে অনাকাক্সিক্ষত ওই সহিংস আন্দোলনে মারা যায় ৭ পুলিশসহ শতাধিক লোক। সরকারি হিসাবেই এ সংখ্যা ৭০।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও লীগ সরকার এবার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিডিআর বিদ্রোহে(!) ছাড়া কোনো ইস্যুতে একসঙ্গে এত লোক নিহত হওয়ার নজির নেই। এটা সত্য যে, নিহতদের অধিকাংশ মারা গেছে পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেপরোয়া গুলিতে। মানুষ সরকার ও পুলিশ-র‌্যাবের সমালোচনা করছে এই কারণে যে, জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির সহিংস হয়ে উঠতে পারে, তেমন কোনো ধারণা ও সুপরিকল্পিতভাবে তা মোকাবিলার কোনো পূর্বপ্রস্তুতি তাদের ছিল না বলে। এ-ও বলা হচ্ছে যে, গুলি বর্ষণের সময় পুলিশ-র‌্যাব আইন অনুযায়ী হাঁটুর নিচে, পায়ে গুলি না চালিয়ে অপরাধ করেছে। যেখানে জামায়াত-শিবির পুলিশ মেরেছে, সেখানে বৈধ অস্ত্র নিয়েও আত্মরক্ষায় পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। পরিস্থিতি কোথায় কেমন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, তা বুঝতে বা অ্যাসেসমেন্ট করতে তারা যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেনি। তবে তথ্য অনুযায়ী, যেখানে পুলিশ মারা গেছে সেখানে জামায়াত-শিবিরের যত লোক মারা গেছে, তার চেয়ে বেশি মারা গেছে যেখানে কোনো পুলিশ মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ এক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করেছে কি না, তা দেখা উচিত সরকারের। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ গুলি করেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে বলে ‘দমনবিদ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যত ব্যাখাই দিন না কেন, সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করছে না, বিশ্বাস করছে না বিদেশিরাও। বর্তমান পরিস্থিতি ও সহিংসতার ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তুমুল বিতর্ক রয়েছে। গত ১৬ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের কয়েক সদস্য রাজনৈতিক অস্থিরতা, সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা বিতর্কে অংশ নিয়ে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। গত বৃহস্পতিবার ১৪ মার্চ বিতর্কের সূচনা করেন লিবারেল ডেমোক্র্যাট দলের সদস্য লর্ড এরিক অ্যাডব্যারি। তিনি বাংলাদেশ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর কাছে ব্রিটিশ সরকার এ ব্যাপারে অবহিত আছে কি না-জানতে চাইলে সে দেশের কমনওয়েলথ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ব্যারোনেস সাইদা ওয়ার্সি জানান, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় ব্রিটিশ সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এসব ঘটনায় ৭০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই মারা গেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে। এছাড়া ২৪টি মন্দির ভাংচুর এবংসংখ্যালঘুদের ১২২টি ঘর ও বহু দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর এসেছে। আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহ্বান করেছি।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টও বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক হলে দেশ-দুনিয়ায় এমন উদ্বেগ ছড়াতে পারে, তা সহজেই বোধগম্য। পরিস্থিতিটা আমরা কাছে থেকে যা দেখেছি বাইরের দুনিয়ার লোকও তা সমানভাবে দেখছে। তাই এখানে লুকানোর কিছু নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সিভিল প্রশাসনের ব্যর্থতা স্পষ্ট। উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টির দায় অবশ্যই সরকারের।
তাদের উপলব্ধির ঘাটতি আছে। তারা বোধহয় বুঝতে ভুল করেছে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করা আর একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের রায় কার্যকর করা একই রকম সহজ কাজ নয়। মুজিব হত্যাকারীদের কোনো সাংগঠনিক শক্তি বা প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো অবস্থান জনগণের মধ্যে ছিল না। কিন্তু গত ৪১ বছরে বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত অনেক শক্তি আহরণ করেছে। সারাদেশে কম-বেশি তাদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক আছে। তাদের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী। জামায়াতের সংগঠনকে যদি একটি গাড়ি বিবেচনা করা হয়, তবে তা ‘টাকার চাকায়’ চলা একটা গাড়ি। ইতিমধ্যে ওদের শক্তি ও সক্ষমতার প্রমাণ মিলেছে। নেতাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির কী করবে, কী করতে পারে, কীভাবে তাদের মোকাবিলা করা যাবে-সে ব্যাপারে কোনো কর্মকৌশল সরকারের ছিল না। কোনো হোমওয়ার্কই সরকার করেনি। শুধু ‘বিচার করব, ফাঁসি দেব’ গলাবাজিই করেছে, কিন্তু এ ব্যাপারে জনমত গঠনে কোনো কাজই করেনি।
জামায়াত ছাড়া প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল, ইসলামী ও ধর্মীয় সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, প্রায় ৩ লাখ মসজিদের ইমাম-মুজাজ্জিন, লাখো-কোটি মাজার-দরগাহভক্ত এবং লেখক, শিক্ষক, সাংবাদিক তথা বুদ্ধিজীবীর নিয়ে জাতীয় কনভেনশন করে একটি অভিন্ন জাতিয় মত গঠন করতে পারত সরকার। কিন্তু আওয়ামী লীগের চিরাচরিত খাসলত অনুযায়ী এককভাবে কৃতিত্ব ফলাতে গিয়ে আজ জামায়াতকে মোকাবিলা করতেই নাভিশ্বাস উঠেছে লীগ সরকারের। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভুল সিদ্ধান্ত, ভুল অ্যাকশন, হিংস্র আচরণ সরকারের জন্য দেশ-বিদেশে নতুন বিপদ, নতুন সংকট সৃষ্টি করছে। সরকারের সামনে সংকট এখন মূলত চারটি এক. মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার সংক্রান্ত নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ করা এবং জামায়াত-শিবিরকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা, দুই. প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রধান দাবি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানা না মানা, তিন. দুর্নীতি, দুঃশাসন, জুলুম-নিপীড়ন ও নানা ক্ষেত্রে গণবিরোধী ভূমিকার জন্য গণরোষ মোকাবিলা ও চার. সরকারের ভেতর সমন্বয়হীনতা ও সিভিল প্রশাসনের অকার্যকারিতা ও ক্ষেত্রবিশেষে নির্লিপ্ততা এবং সরকারি দলের ও সরকারের করুণ নিঃসঙ্গতা (এরশাদও তওবা কাটার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন কয়েক দিনের মধ্যে)।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ শুরু হয়েছিল সরকারের বিরুদ্ধে মনোভাব থেকে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে সরকার তাতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। তরুণ প্রজšে§র একটি অংশ হলেও তারা আশা জাগাতে পেরেছে অনেক। অর্জনও কম নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সারাদেশে একটা জনমত তারা তৈরি করতে পেরেছে, যা এর আগে কেউ করতে পারেনি। সরকার এই মঞ্চকে নিজের কাজে লাগানোর বেশি চেষ্টা করায় এর হাইট কমেছে।
আবেগজড়িত অনেক মানুষের-যারা শাহবাগ গেছেন, তাদের মনে নানা প্রশ্ন জেগেছে। তবুও এক মাস বড় স্বস্তিতে ছিল সরকার। মনে হচ্ছে, এ মঞ্চকে সরকারও এখন আর উজ্জ্বল রাখতে চাচ্ছে না। বিরোধী দল তো চাইছেই না। এ অবস্থায় একটি সংগঠিত তরুণ শক্তিও সরকারের বিরুদ্ধে যাবে। তাহলে আগামী দিনের পরিস্থিতি কী হতে পারে? দেশে যুব-তরুণের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। আমাদের বৈষম্যমূলক শ্রেণীবিভক্ত সমাজে এদের মধ্যেও বিভক্তি আছে। সবাই একপক্ষের নয়। ছাত্রদের মধ্যে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ও মাদ্রাসা-মক্তব পড়–য়া ছাত্রছাত্রীর হার ৭০:৩০। যারা ৩০ ভাগে, তারা জামায়াত-শিবির ও ইসলামী নানা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানে আওয়ামী লীগ নাম ও বিএনপির কোনো অবস্থান নেই। কিন্তু স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবিরের অবস্থান আছে। রাজনীতির সঙ্গে সেখানে সম্পৃক্তরা আবার লীগ-বিএনপিতে বিভক্ত সমান সমান। লীগ বিএনপি সমর্থক ছাত্রলীগ-ছাত্রদল আবার শ্রেণীচরিত্রের কারণে আপসকামী, সুবিধাবাদী ও ক্ষেত্রবিশেষে লোভী। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একেবারে দুর্বল গরিব ঘরের ছেলেমেয়েরাই মাদ্রাসা মক্তবে পড়ে। জামায়াত-শিবিরের রিক্রুটমেন্টের টার্গেট গ্রুপ এরাই। জামায়াত এদের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করে। লেখাপড়ার খরচ, জামা-কাপড়, বইপত্র, হলে-হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা, হল-হোস্টেলে রাখা না গেলে আলাদা বাড়িভাড়া করে থাকার ব্যবস্থা করে ওরা। মাদ্রাসা পাস করা ছেলেমেয়েরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের মতো চাকরি-বাকরি পায় না। জামায়াত তাদের অসংখ্য প্রতিষ্ঠানে তাদের চাকরির ব্যবস্থা করে। কাউকে ব্যবসার জন্য পুঁজি দেয়; অন্যদের মাসিক মাসোহারা দেয় জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা তাই অনেকটা পেইড সোলজারের মতো; যা হুকুম আসে যে কোনো মূল্যে তা বাস্তবায়ন করে।
অন্যদিকে তাদের মধ্যে আছে তীব্র শ্রেণীঘৃণা ওদের বিপরীত শ্রেণীর বিরুদ্ধে। আমাদের সমাজে এদের ‘নীচু জাতের’ ভাবা হয়। একটি স্কুল-কলেজ ছাত্রকে যে মর্যাদা দেয়া হয়, একটি মাদ্রাসা ছাত্রকে সে মর্যাদা দেয়া হয় না। কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলে যে সমাদর করা হয়, মাদ্রাসা ছাত্রকে তা করা হয় না। তাদের বসিয়ে দেয়া হয় ড্রাইভার-পিওনদের সঙ্গে। এদের শ্রেণীহিংস্রা আর শ্রেণীঘৃণাকেই ক্যাশ করে জামায়াত এদেরকেই বানায় শিবির। সারাবিশ্বে জঙ্গি সংগঠনগুলোর রিক্রুটমেন্টই এই শ্রেণী থেকে। এরা হয় বেপরোয়া। যারা জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার কোরাস গাইছেন, তারা এদিকটি নজরে আনছেন না। জামায়াত থাকল না, রাজনীতির বৈধ ও সাংবিধানিক সুবিধা তারা পেল না।
কিন্তু তাদের ক্যাডাররা তো ভ্যানিশ হয়ে যাবে না, তাদের রিক্রুটমেন্টও চলতে থাকবে। তাহলে? যারা এখন প্রজন্ম, নবীন প্রজন্ম বলে গলাবাজি করছেন, তাদের এ বিষয়টি ভাবতে হবে। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্রফ্রন্টের কোনো শাখা মাদ্রাসার নেই কেন? এটা করতে হবে। জামায়াত যেভাবে এজন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করে, অন্যদেরও তা করতে হবে। আলটিমেটালি রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য নিরসনের। গরিব শ্রেণীর ছেলেমেয়েদের জেগে ওঠার গল্প বলে আগামী কাল পরশুর সম্ভাব্য রাজনৈতিক সংকট থেকে সরকারের মুক্তি পাওয়ার স্বপ্নবিলাস ফুৎকারেই উড়ে যাবে। তরুণ প্রজšে§র একটি বিশাল অংশ বিএনপির সঙ্গে আছে-একথাও ভাবতে হবে।
ইতিমধ্যে দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাকেই অনেকে ‘ওয়ান-ইলেভেন’-পূর্ব পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করছেন। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ২৬ মার্চের পর ১৮ দলীয় জোট সরকার পতনের একদফা আন্দোলন শুরু করবে। বাস্তবতা বলে, তারা সরকারকে ‘খাদে’ ফেলার সক্ষমতা অর্জন করেছে। এ অবস্থায় সরকারকে উদ্যোগী হয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটা সমঝোতায় পৌঁছতে হবে। এ ব্যাপারে বিরোধী দলকে নয়, সরকারকেই বিরোধী দলের আস্থা অর্জন করতে হবে। তা না হলে আরো সংঘাত, আরো সহিংসতা গোটা দেশ ও সমগ্র জাতিকে ঠেলে দেবে অন্ধকূপের অতলে।
গত ১৫ মার্চ নয়াপল্টনে আমার এক খালার (মরহুম আব্দুল হালিম চৌধুরীর স্ত্রী ও মর্তুজা চৌধুরী মিলনের øেহময়ী মাতা যিনি আমার কাছেও ছিলেন মায়ের মতো) কুলখানিতে গিয়েছিলাম। মোনাজাত শেষে অনেকেই বর্তমান এই শ্বাসরুদ্ধকর সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির উল্লেখ করে প্রশ্ন করেন, এই মুহূর্তে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানা, আমদানি-রফতানি তথা জাতীয় অর্থনীতি ঠিক রাখার জন্য, সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাসহ জানমাল, বিশেষ করে আমাদের সন্তান-সন্ততিসহ সব নাগরিকের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চেয়ে তৃতীয় কোনো সক্ষম শক্তিকে যদি আমরা আমন্ত্রণ জানাই, তা কি অন্যায় হবে? কোনো জবাব দিতে পারিনি। প্রিয় পাঠক, আপনার জবাব কী?
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন