বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০১৩

খালেদার বক্তব্য সংখ্যালঘু নির্যাতনে প্ররোচনা দিচ্ছে

বিরোধীদলীয় নেতা সম্প্র্রতি মুন্সিগঞ্জ সফরে গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকদের ঢালাওভাবে নাস্তিক ঘোষণা করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা যারা দেশব্যাপী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ গণতান্ত্রিক শক্তির ওপর তাণ্ডব চালাচ্ছে, তাদের আরও সহিংস কার্যক্রমে প্ররোচিত করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চ আয়োজিত আলোচনা সভার ধারণাপত্রে এ আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

‘দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত অত্যাচার, ভবিষ্যৎ জাতীয় নির্বাচন ও তালেবানি রাষ্ট্র’ শীর্ষক আলোচনা সভার শুরুতে সংগঠনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জিয়াউদ্দিন তারেক আলী উপস্থাপিত ধারণাপত্রে বলা হয়, মাওলানা সাঈদীর মামলার রায়ের পর জামায়াতে ইসলামী দেশব্যাপী বেপরোয়া সহিংসতা শুরু করে। সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে একটি পশ্চাৎপদ মধ্যযুগীয় ধাঁচের তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করা। গণজাগরণ মঞ্চসহ গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও সহিংস তাণ্ডব চলছে। অব্যাহত আছে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা। এ কাজে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপি আরও শক্তিশালী ও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে অপারগতার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তথা তাদের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি দেশবাসীর কাছে উন্মোচিত হয়েছে বলে ধারণাপত্রে বলা হয়েছে।
সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদবিরোধী মঞ্চের সমন্বয়ক ও আলোচনা সভার সভাপতি অজয় রায় বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা হয়েছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় শুধু আলোচনা করলেই হবে না। করণীয় নির্ধারণ করতে হবে আমাদের।’ একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত জামায়াত-বিএনপি সংখ্যালঘুদের ২১টি মন্দির, ৭৭টি বাড়ি ও সাতটি দোকানে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়েছে। এ ছাড়া ১০টি মন্দির, ৫০টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে এবং লুটপাট করা হয়েছে আটটি স্থানে।
আলোচনা সভায় বাঁশখালীতে নির্যাতিতদের প্রতিনিধি হিসেবে যোগদানকারী অমৃত করণ বলেন, সাঈদীর রায়ের পর এলাকায় গুমোট আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। আগে থাকতেই সেখানে গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। রায়ের পর মঞ্চের উদ্যোগে একটি মিছিল বের করা হয়। প্রায় একই সময়ে বিএনপি-জামায়াত দুই দিক থেকে মিছিল বের করলে বাঁশখালীতে দায়িত্বরত ৩০ জন পুলিশ পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। এ সময় ওই মিছিলকারীরা হিন্দুদের দোকানগুলো চিহ্নিত করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেন, দুই-তিন হাজার লোক সংঘবদ্ধ হয়ে সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর সেদিন হামলা করেছিল। তারা মন্দির ভাঙে, হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। হামলাকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল কিশোর। অমৃত করণ তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের নির্দিষ্ট ক্যাম্পে রাখা, গ্রাম প্রতিরক্ষা দলে সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সভায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নূরুল আম্বিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য বিমল বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউরের স্ত্রী মিলি রহমান, গণঐক্যের সদস্যসচিব এস এম এ সবুর, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের মহাসচিব হাসানুজ্জামান প্রমুখ।
প্রথম আলো | নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ২১-০৩-২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন