বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতারা। একইসঙ্গে ভষ্যিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সহিংসতা প্রতিরোধেরও অঙ্গীকার করেছেন তারা।
সারাদেশে মঠ-মন্দির-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত এক সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেছেন। ‘শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ’ শনিবার বিকেলে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সারাদেশে মঠ-মন্দির-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সংখ্যালঘুদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত এক সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেছেন। ‘শ্রী শ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ’ শনিবার বিকেলে এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিতে হবে। জীবনের বিনিময়ে হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে হবে। পবিত্র ধর্ম ইসলামের নাম ব্যবহার করে যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা করেছে তারা মানুষ নয়, কুলঙ্গার। তাদের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ইসলাম সমর্থন করে না।
তারা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে একজন মুসলমানের যে অধিকার রয়েছে, তেমনি একজন হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানেরও সে অধিকার আছে। বাংলাদেশে সব ধর্মাবলম্বীদের একই অধিকার আছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে মুসলমান যেমন অংশ নিয়েছিল তেমনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরাও অংশ নিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদীপ্ত হয়ে আমরা সবাই এ দেশে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করব।’
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম মনজুর আলম বলেন,‘আমরা সবাই মিলে যুদ্ধ করে এদেশ স্বাধীন করেছি। দেশের অন্যতম অসাম্প্রদায়িক অঞ্চল আমাদের চট্টগ্রাম। আমরা আপনাদের পাশে আছি। সবকিছুর বিনিময়ে এ অঞ্চলেরর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধরে রাখব।’
যখনই ডাকবেন তখনই আপনাদের পাশে ছুটে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি বলে মন্তব্য করেন মেয়র এম মনজুর আলম।
সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন,‘১৯৭১ সালে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমান সকলে মিলে যুদ্ধ করেছি। আমরা সকলেই এদেশে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমরা শান্তি চাই। তাই জীবন থাকতে চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হতে দেব না। সম্মিলিতভাবে সকল ধরণের সহিংসতা ও অরাজকতা আমরা মোকাবিলা করব।’
তিনি বলেন,‘স্বাধীন দেশে বসবাসের অধিকার সবার রয়েছে। এটা সকলের সাংবিধানিক অধিকার। এখানে সবাই নির্বিঘ্নে তাদের নিজ নিজ ধর্মের অনুষ্ঠান পালন করবে।’
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন,‘এ মঞ্চে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আছেন। আমরা সবাই মিলে একত্রিত থাকলে সাম্প্রদায়িক শক্তি আর আঘাত হানতে পারবে না। ঐক্যবদ্ধ থাকায় চট্টগ্রাম নগরী ও উত্তর জেলার সাতটি উপজেলায় কোনো কিছু করতে পারেনি।’
শাহবাগের গণজাগরণ অহিংস উপায়ে দাবি আদায়ের শিক্ষা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ সাংসদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী চিহ্নিত শত্রুরা স্বাধীন দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে। হামলাকারীদের আমরা সবাই চিনি। তাদের বলতে চাই, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ট্রাইব্যুনাল দিয়েছে। এ রায়ে তার ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু আগুন দেওয়া হয়েছে হিন্দুদের ঘর আর মন্দিরে।’
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘দেশে সংখ্যাগুরু-সংখ্যলঘু বলতে কিছু নেই। সবাই এদেশের নাগরিক। সবার সমান অধিকার রয়েছে। তাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিতে হবে আমাদের।’
নগর আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে আওয়ামী লীগ সবসময় ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। যারা পবিত্র ইসলামের নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে তাদের কার্যক্রম ইসলাম সমর্থন করে না।’
সমাবেশে তপন কান্তি দাশ নামের এক বক্তা নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র দিতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করেন সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি, রাউজানের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, স্বাধীনতার সংগঠক এম এ আজিজের পুত্র সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, ইউনুস গণি চৌধুরী।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএমএ’র চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মুজিবুল হক খান, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, পটিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান তিমির বরণ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মোহাম্মদ হাসনী, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী ও বিজয় কৃষাণ চৌধুরী, ট্রাস্টি রাখাল দাশ, ট্রাস্ট্রি জিতেন্দ্র প্রসাদ নাথ মন্টু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জ্যোতি প্রকাশ দত্ত ও জিনবোধি ভিক্ষু মুক্তিযোদ্ধা মো. ইদ্রিস, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার চৌধুরী, মো. সফিউল্লাহ, স্বদেশ নাথ, লায়ন সঞ্জয় কুমার নাথ, রত্নাকর দাশ, গোবিন্দ প্রসাদ দে প্রমুখ।
জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ পালিতের সভাপতিত্বে সমাবেশ পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার।
সমাবেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ‘হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই, একসঙ্গে থাকতে চাই’, ‘নষ্ট রাজনীতির বলি আমরা কেন’, ‘হিন্দুদের ওপর হামলা বন্ধ কর’, ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে এক সাথে’সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
সমাবেশে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে সমাবেশে আট দফা দাবি ও সাত দফা কর্মসূচির ঘোষণা করেন সংগঠনের সভাপতি দেবাশীষ পালিত।
আট দফা দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ৭২’এর সংবিধানের কার্যকর প্রয়োগ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা রোধে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতামূলক ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারীভাবে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ, সিলেটে জগৎজ্যোতি তালুকদার ও বাঁশখালীর দয়ালহরি শীল হত্যাসহ নারী ও শিশু নির্যাতনকারীদের সাতদিনের মধ্যে গ্রেপ্তার।
এছাড়া কর্মসূচী হচ্ছে দেশের প্রতিটি এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা স্কোয়াড গঠন, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিভিন্ন দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি সারাদেশে গণস্বাক্ষর অভিযান ইত্যাদি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন