বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৩

জঙ্গি সংগঠনগুলো ফের সক্রিয়


ফসিহ উদ্দীন মাহতাব
নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলো ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আগের চেয়ে আরও বেপরোয়াভাবে চলছে তাদের কার্যক্রম। শুধু ব্যবহার করছে ভিন্ন নাম। জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে দেশে নিষিদ্ধ জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাতুল জিহাদ (হুজি), ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি) ও হিযবুত তাহ্রীরের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড থেমে নেই। তারা বিদেশি অর্থায়নে ভিন্ন নাম ব্যবহার করে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ, তৌহিদী ট্রাস্ট, তামির-উদ-দ্বীন বাংলাদেশসহ আটটি সংগঠন উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গি দল হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও এখনও নিষিদ্ধের আওতায় আনা হয়নি। এসব সংগঠনের সদস্যরা আগের চেয়ে বেপরোয়া হয়ে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে নানা কর্মসূচিতে অবস্থান করছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালে দেশব্যাপী জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে অংশ নিয়েছে বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে।
জানা গেছে, এসব কারণে সরকারের গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে ৩২টি ইসলামী সংগঠন। এদের মধ্যে কয়েকটি সংগঠনের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দারা। এ কারণে এসব সংগঠনের নেতাদের গতিবিধি ও কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটর করা হচ্ছে। আগামী ছয় মাস এসব ইসলামী দলকে ব্যবহার করে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরির অপপ্রয়াস চালাবে, এমন আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে এসব জঙ্গি সংগঠনের কর্মীদের অনুপ্রবেশ করে নাশকতা চালানোরও পরিকল্পনা ছিল ওই বিশেষ দলটির। গোয়েন্দাদের এসব আগাম সতর্কবার্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় তাদের সে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে এসব ধর্মীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকা দলগুলোর মধ্যে রয়েছে_ ইন্টারন্যাশনাল খতমে নবুয়ত মুভমেন্ট, আরাকান রোহিঙ্গা ফোর্স, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, আরাকান পিপলস আর্মি, লিবারেশন মিয়ানমার ফোর্স, আরাকান মুজাহিদ পার্টি, রোহিঙ্গা ইনডিপেনডেন্স ফোর্স, রোহিঙ্গা ইনডিপেনডেন্স আর্মি, রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট আল হারাত আল ইসলামিয়া, তাওহিদি জনতা, বিশ্ব ইসলামী ফ্রন্ট, জুম্মাতুল আল সাদাত, শাহাদাৎ-ই নবুয়াত, আল্লাহর দল, ইসলামিক ফ্রন্ট, জামাত আস সাদাত, আল খিদমাত, হিজবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, মুসলিম মিল্লাত, শরিয়া কাউন্সিল, আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ, দাওয়াতি কাফেলা, হিজবুল মাহদি, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী দল, আল ইসলাম মর্টিয়ার্স ব্রিগেড, জমিয়তে আহলে হাদিস আন্দোলন, জামিয়াতুল এহজিয়া উতরাজ, হায়াতুর ইলাহা, সত্যবাদ, আনজুমানে তালামিজে ইসলামিয়া, কালেমার জামাত, তানজীর বাংলাদেশ, ফোরকান মুভমেন্ট, সাহাবা পরিষদ, কেতাল বাহিনী, এসহার বাহিনী, আল ফাহাদ, হরকাতুল মুজাহিদীন, মুজাহিদীন-ই তাজিম, জাদিদ আল-কায়দা, আল মারকাজুল আল ইসলামী ও জামাতুল ফালাইয়া।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, জঙ্গি প্রতিরোধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ভিন্ন ব্যানারে ইসলামের নাম ব্যবহার করে যারা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তারা নজরদারিতে রয়েছে। তাদের কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিস্ব এ দেশে রাখা হবে না।
সূত্র জানায়, দেশে জঙ্গিদের তৎপরতা নেই, এমন দাবি করলেও সম্প্রতি খোদ রাজধানী থেকেই চার পাকিস্তানি জঙ্গি গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। জঙ্গিদের কাছ থেকে পুলিশ তথ্য পেয়েছে, দেশি জঙ্গিদের অস্ত্র চালান ও গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বিদেশিরা। কীভাবে আত্মঘাতী হামলা চালাতে হয়, সে ব্যাপারেও কৌশল শেখানো হয়। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে।
একাধিক সূত্রমতে, সাতক্ষীরা ও কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভিনদেশি জঙ্গিরা বাংলাদেশে আসছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নাশকতার চালানোর পাঁয়তারা করছে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিরা। সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ কোনো নেতা গ্রেফতার হলে বদলা নেওয়ারও চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
#
সমকাল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন