রবিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৩

প্যারিসে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

প্যারিস থেকে: ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’, ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার মুসলমান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান আমরা সবাই বাঙালি’, ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন করে যারা-দেশ ও জাতির শত্রু তারা’, ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা রুখতে হবে-রুখে দাঁড়াও’, ‘আমরা সব ধর্মের মানুষ-আমরা সবাই বাঙালি’, এ ধরণের নানা স্লোগানে মুখরিত হয় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে অবস্থিত মানবাধিকার চত্বর।


রোববার বিকেলে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা পরিষদ, ফ্রান্স শাখা আয়োজিত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে এসব দাবি তোলা হয়।

সমাবেশে উপস্থিত বাঙ্গালিরা সংখ্যালঘু নির্যাতনকারীদের বিচারের সম্মুখীন করার পাশাপাশি রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশের দাবি তোলেন।

সমাবেশে ফ্রান্সে অবস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, “বাংলাদেশ কখনোই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ছিল না। একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী আজ বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা করছে। তারা নানা স্থানে সংখ্যালঘু বিভিন্ন ধর্মীয় জাতি গোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। এসব অপকর্মের হোতাদের বিচারের সম্মুখীন ও আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারী গোষ্ঠী জামায়াত শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।”

বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা পরিষদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধা ও বিশিষ্ট শিল্পী শাহাবুদ্দিন বলেন, “আমরা যে লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তা নষ্ট করার জন্যই আজ একদল দেশদ্রোহী ধর্মের লেবাস গায়ে লাগিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করছে। এদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে।”

তিনি বলেন, “সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে রাজাকার মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর আমরা সবাই আজ এক হয়েছি। এখন আমাদের সবার দাবি ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃস্থাপন করে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিচার করা। এ লক্ষ্যে আমরা সবাই আর একটি সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। আমাদের দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে যারা নোংরা খেলায় মেতেছে তাদের বাংলার মাটিতে কোনো স্থান নেই।”

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুকাভিনেতা পার্থ প্রতিম মজুমদারও এ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এক সময় ঘরে ঘরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল। এখন স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত শক্তি কৌশলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে দেশকে অস্থিতিশীল বানানোর পাঁয়তারা করছে।”

সমাবেশে প্যারিসে অবস্থিত বাংলাদেশিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। সমাবেশের শুরুতে পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। এরপর গণসঙ্গীত ও স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে মানবাধিকার চত্বর।

এ সময় উপস্থিত হাজারো বাংলাদেশি এক কণ্ঠে আওয়াজ তোলেন- ‘আমাদের দাবি একটাই-রাজাকারের ফাঁসি চাই’, ‘বাংলা আমার মাতৃভূমি-রাজাকারের ঠাঁই নাই’।

সমাবেশে ফ্রান্সের বিভিন্ন টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের সংবাদকর্মীদের পাশাপাশি বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত সংবাদকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে ফ্রান্সসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকরাও সংহতি প্রকাশ করেন।

প্রসঙ্গত, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রামুতে বৌদ্ধদের ওপর সহিংস হামলা চালায় একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসী। এরপর  জামায়াত নেতা সাঈদীর ফাঁসির আদেশের পর বাংলাদেশের নোয়াখালী সহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত সংখ্যালঘু ধর্মীয় গোষ্ঠীর ওপর হামলা চালানো হয়। তাদের নির্যাতনের কারণে ইতিমধ্যেই কয়েকশত হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান পরিবার  ভিটেমাটি ছেড়ে বাস্তুহারায় পরিণত হয়েছে।

নির্যাতিতদের পুনর্বাসনসহ এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিচারের সম্মুখীন করারও আহ্বান জানানো হয় সমাবেশস্থল থেকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন