বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

উগ্র ধর্মান্ধদের কবলে নারী সমাজ

হাসান কামরুল
বহুলাংশে বাংলাদেশ এগিয়েছে। নারীর কর্মবিস্তৃতি ঘটেছে। নারীরা এখন অর্থনীতির চালিকা শক্তি। এখন আর সেইদিন নেই যে নারী মানেই ঘরের কোনে বন্দি জীবনযাপন করবে। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে নারীরা নিজস্ব কর্মস্পৃহায় জাতি বির্নিমাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। নারীর চলার পথ কখনই নির্বিঘœ ছিল না। একটি মহল নারীর চলার পথকে রুদ্ধ করে দিতে বদ্ধ পরিকর। দেশের দুই প্রধান দলের কা-ারি নারী হওয়া সত্ত্বেও যখন নারীর ওপর আক্রমণ আসে তখন নারীর চলার পথ যে মসৃন নয় তা আরো স্পষ্ট হয়। সম্প্রতি উগ্র ইসলামিক দল নারীর পায়ে শিকল পড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এরা কারা? যারা দেশকে আফগানিস্তান বা পাকিস্তান বানাতে চায়, যারা গত বিএনপির আমলে ইসলামের নামে জঙ্গি কার্যক্রমে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করেছিল। যাদের অঙ্গুলির ইশারায় বাংলা ভাইয়ের উত্থান হয়েছিল। তারা আজো থেমে নেই।


হেফাজতে ইসলাম নামের যে রাজনৈতিক দলটি ত্বরিৎ উখান, তার পিছনে কারা কারা ম“ দিচ্ছে তা সকলেরই জানা। জামাত রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসায় পড়াতে জামাতের মদদে হেফাজতে ইসলাম ফ্রন্টলাইনে উঠে আসে। ১৮ দলীয় জোটের প্রণয়নকৃত নীলনকশায় হেফাজতে ইসলাম এখন রাজনীতির সর্বাগ্রে। তারা ব্লাসফেমি আইন প্রণয়নের কথা বলে, নারীদের ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না, নারীরা সংসারধর্ম ছাড়া অন্য কোন কর্ম করতে পারবে না, নারীরা স্বাবলম্বী হলে বে’দাত হবে! যার প্রতিফলন ঘটেছে হেফাজতের লংমার্চের দিন একুশে টেলিভিশনের নারী সাংবাদিক নাদিয়া শারমীনের উপর আক্রমণের মধ্য দিয়ে। এ আক্রমণের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম মুলত শাহবাগের নারী আন্দোলনকারীদের ওপর একটা শোধ নিল। কারণ শাহবাগ জাগরণে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। শাহবাগ জাগরণ যেভাবে ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাতে মোল্লাদের পিলে চমকে গেছে। কারণ দুঃখজনক হলেও সত্য ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে এ দেশের মানুষের উপর যে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে তারা সবায় জামাতে ইসলামের সদস্য। কেউ তখন ছাত্র সংঘের হয়ে কাজ করেছে, কেউ আবার জামাতে ইসলামের পক্ষ নিয়ে রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনী গঠন করেছে। তখন জামাতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ইসলামের লেবাস ধারণ করে মা-বোনদের ইজ্জতে আঘাত হেনেছে। এখনকার সময়ে এসে জামাত ও তার মিত্ররা যখন দেখলো ’৭১-এ তাদের ঘৃণ্য কৃতকর্মের সাজা হচ্ছে তাই সুকৌশলে আমার দেশ, নয়াদিগন্ত ও দিগন্ত টেলিভিশনের মতো কিছু মিডিয়ার কারসাজিতে ব্লগারদের বিরুদ্ধে রাসুল (সা.) কে অবমাননার অভিযোগ উখাপন করা হলো। আর তাতে তারা সফলও হলো। ধর্মীয় উসকানিতে দেশের ধর্মভীরু মানুষদের মনে বিষ ঢেলে দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাধা সৃষ্টির সকল কলা-কৌশল এখনো চলমান রয়েছে। ক্রমাগত ধর্মকে ব্যবহার করে এ স্বার্থন্বেষী মহল রাজনীতিতে চরম অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। শান্তিপূর্ল অসহিংস শাহবাগ আন্দোলন নিয়ে স্বয়ং বিরোধী দলীয় নেতার বক্তব্যও ছিল সামঞ্জ্যহীন। রাজনীতির কু-লি দিন দিন প্যঁচিয়ে জামাত পর্দার অন্তরালে থেকে হেফাজতে ইসলামকে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলো সরকারের গোয়েন্দা সেলের কাছে হেফাজতের কর্মকা- নিয়ে কোনো তথ্যই ছিল না। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন বলে পত্রিকায় ছবিসহ খবর বের হয়েছে। আজ থেকে কিছুদিন আগেও হেফাজতের নাম মানুষ জানতো না। তারা কিভাবে কাদের প্রশ্রয়ে এতো অল্পসময়ে এতো মোটাতাজা হলো তা ভেবে দেখা দরকার। কিন্তু সরকার নিজেদের ইমান আমল ও আকিদা প্রমাণ করতে গিয়ে হেফাজতের আন্দোলনকে মৌন সমর্থন দিলো। হেফাজতের লংমার্চকে অহিংস আন্দোলন বললেও কিন্তু সেটা অহিংস ছিল না। বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের কর্মীরা মারপিঠ ভাঙচুর করেছে। নারী সাংবাদিক পিটিয়েছে, সাংবাদিকদের ক্যামরা ছিনিয়ে নিয়েছে।

জামাত নিষিদ্ধের যে দাবি ওঠছে, তাতে যদি আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে জামাত সত্যি সত্যি নিষিদ্ধ হয়। তবে জামাতের বর্তমান কার্যক্রম বিলুপ্ত হয়ে হেফাজতে ইসলামের মধ্যে পুরো জামাত ঢুকে যাবে একথা আগাম বলে রাখা যায়। হেফাজতের লংমার্চে ইসলামি ব্যাংক অর্থায়ন করেছে বলে সংবাদ বেরিয়েছে। যদি তাই হয় তাহলে জামাতের মর্ডান ভার্সন হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। মতিঝিলে লংমার্চের অনুমতি দিয়ে সরকার দুই নৌকায় পা দিয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছে দেশের বিশিষ্টজনদের অনেকে। হেফাজতের আমির কটূক্তি করে বলেছেন যদি সেদিন সরকার লংমার্চের অনুমতি না দিতো তাহলে সারাদেশে কয়েকহাজার দ্বীনি ইসলামি শহীদ হতো। কিন্তু এই যে শহীদ হওয়ার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায় কী? প্রধান বিরোধী দল স্রেফ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ধর্মীয় অন্ধ-অনুকরকদের উস্কে দিচ্ছে না তো? যদি তাই হয় তবে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ দিন। আমাদের হাতের কাছেই উদাহরণ আছে। আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের যাপিত জীবন দেখেও কি আমাদের হুঁশ হয় না এসব ধর্মীয় উগ্র মৌলবাদীরা মানুষের জীবনকে কতোটা ভয়াবহ করে তোলতে পারে।

হাসান কামরুল: কলাম লেখক।
ভোরের কাগজ : বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন