মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৩

প্রধানমন্ত্রীর সাফ জবাব ॥ ব্লাসফেমি নয়

০ বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতকার
০ সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে না
০ যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ-বিপক্ষ, এই দুই ধারা কাজ করছে
বিবিসি বাংলা ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্লাসফেমি আইনের আদলে নতুন কোন আইন প্রণয়নে হেফাজতে ইসলামের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ প্রচলিত অনেক আইনেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিও নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেছেন, বর্তমান সেনাবাহিনী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নতুন আইন না করলেও হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলো নিয়ে তাঁর সরকার আলোচনা করে দেখবে।
তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলোর মধ্যে কিছু গ্রহণযোগ্য হলে, তা গ্রহণ করব। আর যেগুলো গ্রহণযোগ্য হবে না, সেগুলো গ্রহণ করব না।’
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ব্লগারদের গ্রেফতার করাসহ ১৩ দফা দাবিতে গত ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলাম সারাদেশ থেকে ঢাকায় লংমার্চ করেছিল। ধর্মীয় একটি সংগঠনের ব্যানারে এই লংমার্চ কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল।
সেই লংমার্চের আগে চার ব্লগারকে গ্রেফতার করে তাদের রিমান্ডে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু ব্লগারদের গ্রেফতারের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এর সঙ্গে লংমার্চের কোন সম্পর্ক ছিল না।
তিনি উল্লেখ করেন, ব্লগ এবং ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্কে কে কি লিখছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয়ে কিছু আছে কিনা, সেসব খতিয়ে দেখতে সরকার আগেই একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই প্রক্রিয়াতেই ওই গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো কোন কথা যদি লেখায় থাকে, অবশ্যই আমাদের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা খুব স্বাভাবিক। আমি একজন মুসলমান। এখন নবী করিম (সা) সম্পর্কে কেউ যদি আজেবাজে কথা লেখে, আমরা তো চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ হয়ত ধর্ম না মানতে পারে, তার মানে এই নয় যে তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে কথা বলবে। নোংরা কথা লিখবে।’
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের সমান অধিকার আছে। কোন ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অধিকার কারও নেই।
কিন্তু ব্লগারদের গ্রেফতারের ঘটনায় সমালোচনা উঠেছে। এমনকি ক্ষমতাসীন জোটের শরিকদের অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ, সরকার একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছে, অন্যদিকে ইসলামপন্থীরা যখন দাবি তুলছে, তখন সরকার নমনীয় অবস্থান দেখাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনে করেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হচ্ছে, সমান অধিকার এবং প্রত্যেক ধর্মের মর্যাদা রক্ষা করা। কেউ একটা ধর্ম সম্পর্কে যা খুশি লিখবে, এটা ধর্মনিরপেক্ষতা নয়। সমালোচকরা সঠিক কাজ করছেন না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘নবী করিম (সা) সম্পর্কে কেউ যদি আজেবাজে কথা লেখে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমি অন্যের কথা শুনলাম, মোটেই না। আমি নিজেও ধর্মে বিশ্বাস করি। কাজেই আমার নিজেরও অনুভূতিতে আঘাত লাগে। কেউ যদি বাজে কথা লেখে।’
তবে হেফাজতে ইসলামের অন্যতম দাবি হচ্ছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের শাস্তি মৃত্যুদ- করে ব্লাসফেমির আদলে নতুন আইন করা।
তা নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশে আইনের অভাব নেই।
তথ্যপ্রযুক্তি আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং ফৌজদারি বিধিতেও বিষয়টাতে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে।
কাজেই নতুন আইনের প্রয়োজন হবে না বলে তিনি মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রচলিত আইনে গ্রেফতার করেছি, সেই আইনেই বিচার করা যাবে। তবে এখন সবাই সবার মৃত্যুদণ্ড চায়। মৃত্যুদন্ড দেয়ার মালিক তো আর আমি না। দেশে কোর্ট-কাছারি রয়েছে। তারাই ঠিক করবে, কার মৃত্যুদ- হবে বা কার হবে না। সেটা আমরা করব কিভাবে? এটা সরকার করবে না, সরকারের দায়িত্ব নয়।’
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচী নিয়ে সরকারের দিক থেকে এর আগে জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে নানান আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছিল।
সে প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইতোমধ্যেই দেখেছেন, ১৮-দলের পক্ষ থেকে মঞ্চে গিয়ে সমর্থন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আশঙ্কা অমূলক ছিল না। তবে আমি ধন্যবাদ জানাব যে, হেফাজতে ইসলাম কিছু কর্মসূচী নিলেও তারা যথারীতি তাদের সমাবেশ শেষে ফিরে গেছে। জামায়াতের ফাঁদে পা দেয়নি।’
ইসলাম ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষতা- এই দুইভাগে দেশের মানুষ বিভক্ত নয় বলেও তিনি মনে করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষ-বিপক্ষ, এই দু’টি ভাগ বা ধারা কাজ করছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবিতে আন্দোলন করছে, সে ব্যাপারে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নে তিনি পুরনো অবস্থানই তুলে ধরেন।
তাঁর বক্তব্য হচ্ছে, বিরোধী দল সংসদে এসে দাবি তুলে ধরতে পারে। একই সঙ্গে ওই দাবি নাকচ করে দিয়ে তিনি বিরোধী দলের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘বিরোধীদলীয় নেত্রী দেশকে সেই ২০০৭ সালের পরিবেশে কেন নিতে চাইছেন?’
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করবে কিনা, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা চলছিল।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, “উনি যদি আশা করে থাকেন যে কিছু মানুষ খুন করলেই একেবারে আর্মি ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর ওনাকে ক্ষমতায় নেবে। বর্তমান আর্মি তা করবে না।’ সম্প্রতি রাজনৈতিক কর্মসূচীতে অনেক মানুষ হতাহতের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। এমন অভিযোগ নাকচ করে তিনি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন তিনি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন